যে কারণে ঢাবি শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় মামা হোটেল
মামা হোটেলের যাত্রাটা শুরু হয় কাসিম উদ্দিনের হাত ধরে, যিনি নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গেটের সামনে ভ্যানে করে খিচুড়ি বিক্রি করতেন।
শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন সবার প্রিয় 'মামা'। তাই রেস্তোরাঁর আনুষ্ঠানিক যাত্রা যখন শুরু হলো, তখন তিনি মামা হোটেল নামটাই বেছে নিলেন। আজকে যে মামা হোটেলকে এক নামে সবাই চেনে, তা এ তল্লাটে এসেছিল ২০০২ সালে।
মামা আর নেই, কিন্তু হোটেলটা রয়ে গেছে। এখন তার স্ত্রী ও তিন ছেলে মিলে বেশ ভালোভাবেই এই ব্যবসা ও এর ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হৃদয় হোসেন রানা বলেন, 'আমার বাবার হাতের জাদু দিয়ে এই হোটেলের শুরু। আর এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মায়ের দেখানো পথে।'
বাহারি পদের খাবার
এ যেন একেবারে ষোলআনা 'ভাতের হোটেল'। এখানকার মেন্যুতে ভাত ও অন্যান্য চেনাজানা বাঙালি খাবারদাবারের ওপরই জোর দেওয়া হয়। তাই তো মামা হোটেলে দুপুরের গনগনে গরম থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে ভরপেট খাওয়াদাওয়া আর চলতে থাকে তৃপ্ত খদ্দেরদের আনাগোনা।
মামা হোটেলের মেন্যু একদমই সোজাসাপটা। সাদা ভাত আর সঙ্গে অনেক ধরনের পদ। এর মধ্যে রয়েছে চিকেন ঝাল ফ্রাই, গরু ও খাসির কলিজা, বিভিন্ন মাছের তরকারি, ডাল, বাহারি সবজি, ভর্তা-ভাজি এবং অবশ্যই মামা হোটেলের একেবারে নিজস্ব পদ– পেঁয়াজের ভর্তা কিংবা সালাদ। একেবারে শুরুর দিক থেকেই ভাতের সঙ্গে এই পদটি সৌজন্য হিসেবে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও কয়েক পদের ভর্তাও শুরুতে ভাতের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হয়।
নিয়মিত ক্রেতারা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এখানকার নিত্যদিনের ক্রেতা, সেইসঙ্গে রয়েছে আশপাশের অন্যান্য কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোকজনও। নীলক্ষেত এলাকায় যাদের অনেকটা সময় কাটে, তাদের মধ্যে মামা হোটেলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কাছেপিঠে ঘরোয়া খাবার পেতে এলাকার বাসিন্দা কিংবা কাজের দায়ে আসা লোকজনের অনেকেই ভাতের খিদে মেটাতে আসেন মামা হোটেলে।
দিনের যেকোনো সময় মামা হোটেলে এক ঢুঁ মেরে এলে, একজন না একজন ঢাবি শিক্ষার্থী নজরে পড়বেই। অন্য খদ্দেরদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাবেক শিক্ষার্থীরা, যারা আজও স্মৃতির এই গলিতে ঢুঁ মারতে ও পেটপূজা করতে চলে আসেন এখানে।
হৃদয় বলেন, 'মাঝেসাঝে কর্পোরেট চাকরিজীবীদেরও দেখা যায় এখানে। তারা মোটামুটি দল বেঁধেই পুরোনো দিনের আনন্দ পেতে চলে আসেন।'
মামা হোটেল এত জনপ্রিয় কেন?
মোহাম্মদ শামিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করছেন। এখনও স্পষ্টভাবেই মনে আছে ফেলে আসা সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
খাসির মগজ তার সবচেয়ে পছন্দের খাবার ছিল– এই স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, 'হল ক্যান্টিনের তুলনায় এখানকার খাবারের দাম খুব বেশি ছিল না। এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের জন্য। এর উপর আবার মেন্যুতে বাহারি পদ থাকার কারণে সেই একঘেয়ে ক্যান্টিনের খাবার থেকে রেহাই মিলত।'
তিনি আরও বলেন, 'অন্য হোটেলগুলোতে সালাদ নিয়ে টানাটানি থাকলেও মামা হোটেলে যত ইচ্ছে সালাদ চাওয়া যায় এবং তা হাসিমুখেই দিয়ে দেওয়া হয়।'
বুয়েটে কর্মরত সৈকত বড়ুয়ারও একই অনুভূতি।
মামা হোটেলের সাশ্রয়ী মূল্য ও কর্মীদের আন্তরিক ব্যবহারের বিষয়টির উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'আমার এখানকার চিংড়ির পদ আর ডাল ভর্তা বেশ পছন্দ। আর তারা যে পেঁয়াজের সালাদটা দেয়, ওটা কিন্তু একদম ফ্রি।'
তবে সৈকত এ কথাও স্বীকার করেন, 'এখন যদি ওখানে যাই, তাহলে খাবারের চেয়ে বেশি আবেগের জন্যই যাব।'
দুপুর ও রাতের খাবার সময়টাতে মামা হোটেলে বসার জায়গা খুঁজে পাওয়াই যেন একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে এতে নিয়মিত ক্রেতারা খুব একটা গা করেন না। তারা এই জায়গার চরম জনপ্রিয়তা জানেন বলেই কয়েকটা মিনিট অপেক্ষা করতে সমস্যা হয় না। এই হোটেলের সঙ্গে ক্রেতাদের সম্পর্কটা খুবই মজাদার, আবেগে পরিপূর্ণ এবং হয়তো ভেবে দেখার মতোও একটা বিষয়।
অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments