চাকরি ছাড়ার আগে অফিসের কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলুন ৫টি জিনিস

এক কর্মক্ষেত্র ছেড়ে অন্যটিতে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেক সাক্ষাৎকার, আলাপ-আলোচনার পর যখন নতুন জায়গায় যাবার সময় আসে, তখন পুরনো অফিসের ডেস্কটিকে জানাতে হয় বিদায়। এই বিদায় জানানোর আবার অনেকগুলো ধাপ আছে। তার মধ্যে অফিসের কম্পিউটার থেকে বেশ কিছু ফাইল ডিলিট করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। 
ছবি: সংগৃহীত

এক কর্মক্ষেত্র ছেড়ে অন্যটিতে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেক সাক্ষাৎকার, আলাপ-আলোচনার পর যখন নতুন জায়গায় যাবার সময় আসে, তখন পুরনো অফিসের ডেস্কটিকে জানাতে হয় বিদায়। এই বিদায় জানানোর আবার অনেকগুলো ধাপ আছে। তার মধ্যে অফিসের কম্পিউটার থেকে বেশ কিছু ফাইল ডিলিট করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। 

ভ্যান্টেজ টেকনোলজি কনসাল্টিং গ্রুপের সহযোগী ভাইস প্রেসিডেন্ট জোয়ানা গ্রামা এরকম ৫টি বিষয় চিহ্নিত করেছেন, চাকরি ছাড়ার আগে যেগুলো অফিসের কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলা শ্রেয়।  

ব্যক্তিগত ফাইল

আদর্শিকভাবে দেখতে গেলে, অফিসের কম্পিউটারে ব্যক্তিগত কাজ করা বা ব্যক্তিগত ফাইল সেভ করা উচিত নয়। কিন্তু হট্টগোলের জীবনে ব্যক্তিগত সীমারেখা প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে চলে আসে। সে ক্ষেত্রে চাকরি ছাড়ার সময় প্রথমেই অফিসের কম্পিউটারে যদি ব্যক্তিগত কোনো ছবি বা ফাইল থেকে থাকে, সেগুলো মুছে দেওয়া দরকার। 

এ বিষয়ে গ্রামা বলেন, 'কর্মচারীর নীতিমালায় যদি অনুমতি দেওয়া থাকে তবে, চাকরি ছাড়ার আগে অফিসের কম্পিউটার থেকে ব্যক্তিগত ফাইলগুলো মুছে ফেলাই ভালো। যেমন, আমি যদি অফিসের ফোনে আমার বাচ্চাদের ছবি রেখে থাকি, তাহলে চাকরি ছাড়ার আগে সেগুলো অবশ্যই সরিয়ে ফেলব।'

অফিসের প্রিন্টারে যদি কোনো সংবেদনশীল নথিপত্র প্রিন্ট করা হয়, তবে সেগুলোও মুছে ফেলা দরকার।  কারিকুলার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস প্ল্যাটফর্মের সিইও নিক সান্তোরা এক্ষেত্রে বলেন, 'অফিসের ডিভাইস থেকে ব্যক্তিগত ফাইল, কর সংক্রান্ত নথিপত্র, যোগাযোগের নাম্বার এবং ব্যক্তিগত ছবি ইত্যাদি অবশ্যই মুছে ফেলতে হবে।'

ব্রাউজার হিস্ট্রি

অফিসের সময়েও আমরা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে অনেক কিছুই গুগলে সার্চ করে থাকি। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লগ ইন করার সময় অনেকসময় পাসওয়ার্ড সেভ করে ফেলি। সে ক্ষেত্রে ব্রাউজিং হিস্ট্রি মুছে ফেলা দরকার। ক্রোম ব্রাউজারের ক্ষেত্রে 'হিস্ট্রি' অপশন  থেকে 'ক্লিয়ার ব্রাউজিং ডাটা' অপশনটি বাছাই করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেছে নিতে হয়। ফায়ারফক্সের ক্ষেত্রে 'হিস্ট্রি' অপশনটিতে গিয়ে 'ক্লিয়ার রিসেন্ট হিস্ট্রি' অপশন বাছাই করতে হয়। 

ব্যক্তিগত অ্যাপস বা সফটওয়্যার

অফিসের কম্পিউটার বা ফোনে অনেক সময় হয়তো আমরা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিছু অ্যাপস বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করি। 

এক্ষেত্রে গ্রামার পরামর্শ হলো, 'আমি যদি এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন, সফটওয়্যার বা ব্রাউজার এক্সটেনশন ডাউনলোড করি, যা কি না কোম্পানির কোনো কাজে না লেগে আমার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে– তাহলে সেগুলো আমি মুছে ফেলি। কর্মক্ষেত্রে আমার শেষ দিনে আমি সব ধরনের সক্রিয় অ্যাপ থেকে লগ আউট করব এবং কম্পিউটারের রিসাইকেল বিনও খালি করে রাখব।'

বিভিন্ন সার্ভিস বা নিউজলেটারের ক্ষেত্রে অফিসের ইমেইল আইডি দেওয়া থাকলে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে হয়তো ঝামেলায় পড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে ইমেইল আইডি বদলে নিয়ে ব্যক্তিগত আইডি যোগ করে নিতে হবে। আর যদি সেই সার্ভিস বা নিউজলেটারটি আর দরকার না হয়, তাহলে আনসাবস্ক্রাইব করে দেওয়া একটি ভালো উপায়।

ব্যক্তিগত মেসেজিং অ্যাপ

বিভিন্ন সময় আমরা হয়তো অফিসের কম্পিউটারে ম্যাসেজিং অ্যাপে লগ-ইন করি, তা অফিসের কাজেও হতে পারে। এক সময় তা এতটাই অভ্যাসে পরিণত হয় যে, প্রতিদিন নিয়ম করে লগ আউটও করা হয় না। সেক্ষেত্রে চাকরি ছাড়ার সময় সচেতনভাবে লগ আউট করাটা জরুরি। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কুকি স্টোর করা হয়, যা ব্যবহারকারীর অ্যাকটিভিটির রেকর্ড সংরক্ষণ করে থাকে। সেক্ষেত্রে এসব রেকর্ড মুছে ফেলা ভালো। নয়তো ব্যবহারকারীর নিজস্ব গোপনীয়তার লঙ্ঘন হতে পারে।

পাসওয়ার্ড

যদি অফিসের কম্পিউটারে কখনো ব্যক্তিগত কোনো পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখা হয়, সেগুলো অবশ্যই চাকরি ছাড়ার সময় মুছে ফেলতে হবে। সান্তোরা বলেন, 'অধিকাংশ সময় অফিসের কম্পিউটারকে আমরা হয়তো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকি। এর অর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ডও সেখানে সেভ হয়ে থাকতে পারে। নিজে থেকে না মুছলে সেগুলো থেকেই যায়। সেজন্য গুগল সিংক বা আইক্লাউডের মতো সফটওয়্যারগুলো ডিসকানেক্ট করতে হয়, যাতে করে সাবেক কর্মক্ষেত্রে কোনোরূপ ব্যক্তিগত তথ্য থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।'

 

তথ্যসূত্র: দ্য হাফিংটন পোস্ট, ইয়াহু নিউজ

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments