জীবনযাপন

কতক্ষণ পোষা বিড়ালকে একা রাখা যাবে

সম্প্রতিকালের বিড়ালের আবেগ এবং আচরণ নিয়ে কয়েকটি গবেষণা হওয়ায় ধীরে ধীরে মিথগুলো ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। আর প্রথমেই বিড়ালের স্বাধীনতা ও একা থাকার স্বাচ্ছন্দ্যের মিথটি সামনে এসেছে। সম্প্রতি বিড়ালের সামাজিকতা এবং সম্পৃক্ততার ওপর দুটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিড়াল খুবই  সামাজিক এবং মানুষের সঙ্গে শক্তিশালী এবং দৃঢ় বন্ধনের প্রতি বেশ আগ্রহী। তবে বিড়ালরা একাকীত্ব অনুভব করে না বলে মনে করার কোন কারণ নেই এবং তাদের মধ্যে একঘেয়েমিতাও দেখা যায়।
কতক্ষণ পোষা বিড়ালকে একা রাখা যাবে
ছবি: স্টার

পোষা বিড়াল নিয়ে বেশ অনেক কথা প্রচলিত আছে। যেমন, মানুষের একাকিত্ব দূর করতে বিড়ালের ভূমিকা থাকলেও, বিড়ালের মানুষের সংস্পর্শের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। কেন না তারা স্বাধীন এবং একা থাকতেই ভালোবাসে। এজন্য সময়ের অভাব থাকলে পোষা কুকুর না রেখে বিড়াল রাখাই ভালো। আর এই ধারণাটাই সবচেয়ে বড় ভুল। 

অনেকের মতে, পর্যাপ্ত খাবার ও পানির ব্যবস্থা থাকলে বিড়াল অনায়াসে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিতে পারে সঙ্গী ছাড়াই। শুধু তাই নয়, কেউ না থাকলেই বরং বিড়াল স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাই সময়ের দীর্ঘতা যদি দিনের কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন বা সপ্তাহও হয় তবুও সমস্যা হয় না বিড়ালের। এ জন্য কর্মব্যস্ত কেউ পোষা প্রাণী কেনার কথা ভাবলে কুকুরের চেয়ে বিড়ালকে প্রাধান্য দিতে দেখা যায়। অথচ সত্যিকার অর্থে, কুকুরের মতো পোষা বিড়ালেরও মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর প্রয়োজন হয়। 

কুকুরের মতো বিড়ালও সামাজিক প্রাণী 

যাদের বাড়িতে পোষা কুকুর থাকে, তারা বেশিরভাগ সময় ক্রেট, গ্যারেজ বা ঘরে আটকে রাখেন। তবে কতটুকু সময় কুকুরকে একা রাখা যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে পশু চিকিৎসক ও কুকুর বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেশিরভাগ কুকুর দিনে ৪ ঘণ্টা একা থাকতে পারে। তবে সময় এর চেয়ে বেশি হলে তাদের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে, তারাও একাকিত্বে ভোগে। 

কতক্ষণ পোষা বিড়ালকে একা রাখা যাবে

কিন্তু একই প্রশ্ন যখন বিড়ালের ক্ষেত্রে করা হয়, তখন অবাক না হয়ে পারা যায় না। পোষা বিড়ালের একাকীত্ব নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। সাধারণত দিনের কতটুকু সময় বিড়ালদের বাড়িতে একা থাকতে হয় এবং একাকী থাকার সময় বিড়ালের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে তা নিয়ে আলোচনাও হয় না। তাই যখন বিড়াল কতক্ষণ পর্যন্ত একা থাকতে পারে এ প্রশ্নের উত্তর অনেকের জানা নেই। 

সম্প্রতিকালের বিড়ালের আবেগ এবং আচরণ নিয়ে কয়েকটি গবেষণা হওয়ায় ধীরে ধীরে মিথগুলো ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। আর প্রথমেই বিড়ালের স্বাধীনতা ও একা থাকার স্বাচ্ছন্দ্যের মিথটি সামনে এসেছে। সম্প্রতি বিড়ালের সামাজিকতা এবং সম্পৃক্ততার ওপর দুটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিড়াল খুবই  সামাজিক এবং মানুষের সঙ্গে শক্তিশালী এবং দৃঢ় বন্ধনের প্রতি বেশ আগ্রহী। তবে বিড়ালরা একাকীত্ব অনুভব করে না বলে মনে করার কোন কারণ নেই এবং তাদের মধ্যে একঘেয়েমিতাও দেখা যায়।  

কিন্তু আবারও যখন বিড়ালের একা থাকার গড় সময়ের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, উত্তর জানা যায় না। পোষা বিড়াল নিয়ে তথ্য ঘাটতি, কতক্ষণ একা থাকা সহনীয় এবং একাকীত্ব দূর করতে করণীয় নিয়ে বিড়ালের মালিকদের জন্য নির্দেশিকার অভাব থাকায় এ বিষয়টি আড়ালেই রয়ে গেছে এতদিন। এ ক্ষেত্রে কারও পোষা বিড়াল বাইরে যেতে পারলেও, যাদের সে সুযোগ নেই সেসব বিড়ালের জন্য একাকীত্ব বেশ দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।  

তাছাড়া প্রত্যেক বিড়াল একে অন্যের থেকে আলাদা। যেহেতু প্রতিটি বিড়ালের চাহিদা বিড়ালের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, তার মানুষের সঙ্গে বিড়ালের সম্পর্ক, বাড়িতে অন্যান্য প্রাণীর উপস্থিতি (কুকুর সহ) ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে, তাই কোন বিড়ালের কী প্রয়োজন সে সম্পর্কে সাধারণীকরণ করা বেশ কঠিন। তবে পোষা বিড়ালের জন্য আলাদা অভিজ্ঞতাভিত্তিক নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত পোষা কুকুরের জন্য যে ৪ ঘণ্টা একা থাকার বিষয়টি অনুসরণ করা ভালো।

কিন্তু বিড়ালকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে কী করবেন?

যদি কাজের সূত্রে বা ভ্রমণের জন্য বাহিরে থাকার প্রয়োজন হয়, তখন কাউকে দিনের কিছু সময় বিড়ালকে সঙ্গ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। যার ফলে বিড়াল সঙ্গীর মনোযোগ, মানসিক উদ্দীপনা এবং ভালবাসা পাবে। তবে প্রতিদিন ক্যাট-সিটারের ব্যবস্থা না করতে পারলে বাড়ির পরিবেশকে ক্যাটিফাই বা বিড়াল উপযোগী করা যেতে পারে। অর্থাৎ, বাড়িতে ক্যাট ট্রি, অটোমেটিক ফিডারস, ফুড পাজলস, স্ক্যাটার টয় ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা যাতে বিড়াল আনন্দে তার একাকী সময় কাটাতে পারে। 

এ ছাড়া বিড়ালকে সঙ্গ দিতে আরেকটি বিড়ালও আনা যেতে পারে। এতে তারা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা, খুনসুটিতে ব্যস্ত থাকবে। তবে আগে থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে, কেন না তাদের একে অপরের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। 

তবে কাজ বা কেনাকাটার জন্য বাইরে যেতেই হয়, এ ক্ষেত্রে যতক্ষণ সম্ভব বাহিরে কম থাকা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। ভ্রমণের জন্য দীর্ঘদিন বাইরে থাকতে হলে অন্য কারোর কাছে বিড়াল রেখে যাওয়াটাই বরং শ্রেয়। আর পারলে নিজের সঙ্গে করে প্রিয় বিড়ালকেও ঘুরিয়ে নিয়েও আসা যায় ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন আবহে। 

তথ্যসূত্র: সাইকোলোজি টুডে

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া 

Comments