আশায় বাঁচুন

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি এখনও আইএমডিবি রেটিংয়ে দখল করে আছে প্রথম স্থান। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের ১০০ সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায়ও আছে এ সিনেমা।

নন-ব্লকবাস্টার, নন-অ্যাকশন, নন-ফ্যান্টাসির এই চলচ্চিত্র এত প্রশংসিত হওয়ার কারণ হচ্ছে, এতে মানুষের আবেগ ও মনের দৃঢ়তা দেখানো হয়েছে। নির্মাতা তার অসাধারণ কল্পনাশক্তি ব্যবহার করেছেন এ সিনেমায়। জেলখানার পরিবেশে নির্মিত এই সিনেমায় বর্ণনা গিয়েছে মর্গান ফ্রীম্যানের কণ্ঠে। সিনেমার নাটকীয়তা আর আশায় টিকে থাকা সিনেমাটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। দর্শকমাত্রই জানেন, ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার পরেও অন্যতম প্রধান চরিত্র অ্যান্ডি ডুফ্রেইন কীভাবে আশায় আশায় মুক্তির প্রতিটি শক্ত ইট গেঁথে গেছেন। আশাই তাকে দিয়ে গেছে জীবনীশক্তি।

এ তো গেল সিনেমার গল্প। বাস্তবের একটি ঘটনাও হয়তো অনেকেরই জানা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. কার্ট রিকটার ইঁদুরদের দিয়ে একটা পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষায় ইঁদুরগুলোকে আলাদা আলাদা পানি ভরা পাত্রে ছেড়ে দেওয়া হয় আর সময় নোট করা হয়। গড়ে ১৫ মিনিটের মতো ভেসে থাকার পর ডুবে যায় ইঁদুরগুলো। মরার আগে অন্তিম মুহূর্তে ইঁদুরগুলোকে তুলে আনা হয়। গা মুছে শুকিয়ে বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর আবার আগের মতোই পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এবার ইঁদুরগুলো কত সময় ভেসে ছিল ভাবতে বললেই অনেকের মনে হবে দুর্বল, ক্লান্ত এবং অবসাদে থাকায় এ যাত্রায় ইঁদুরগুলো ৫ মিনিট বা ১০ মিনিট ভেসে থাকতে পারবে। অনেকের মনে হবে আধা ঘন্টা কিংবা ১ ঘন্টা। কিন্তু না, দ্বিতীয়বার এই ইঁদুরগুলো ৬০ ঘণ্টা ভেসে ছিল।

ইঁদুরগুলো আগেরবার উদ্ধার পেয়ে যাওয়ায় বিশ্বাস করে নিয়েছিল, এবারও উদ্ধার পেয়ে যাবে। তাই ছটফট করেনি, শক্তি ব্যয় করেনি। আশা এমনই জাদুময় ব্যাপার।

কে কোনভাবে, কোন কাজে বা কথায় আশান্বিত হবেন তা আগে থেকেই  নির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়ার উপায় নেই। আশায় বাঁচা কেন গুরুত্বপূর্ণ সেটি বোঝাই বেশি জরুরি। তবুও নিচের কিছু বিষয়ের মাধ্যমে আশা লালন করা যায়-

  • ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ধারণ এবং ইতিবাচক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে নিজের কর্মস্পৃহা অন্যের মাঝেও ছড়িয়ে যাবে।
  • কোনো কোরাম বা বন্ধুদের গ্রুপ তৈরি করতে পারলে একা থাকা বা দুশ্চিন্তা করার সুযোগ কমে যায়। এ ছাড়া সামাজিক কোনো সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত হওয়া যায়। এতে আর্থিক লাভ না থাকলেও, ক্ষতিও নেই। এ ছাড়া নিজের মানসিক তৃপ্তি থাকে।
  • ক্ষমাশীল হওয়ার চর্চা করা মূলত নিজের জীবনকেই সহজ করে। অন্যের আচরণে কষ্টের কথা বারবার মনে পড়লে তা চিন্তাভাবনাকে বিঘ্নিত করে। তাই অন্যের ভুলগুলো সম্ভব হলে ক্ষমা করার চেষ্টা করুন।
  • অনুপ্রেরণা খুঁজে নিন। প্রকৃতির মাঝে হাঁটুন, প্রিয় গান শুনুন, ছবি আকুঁন, যা কিছু ভালো সেসব চিন্তাই মাথায় রাখুন। কোন কথা, কোন আচরণ আপনাকে অনুপ্রাণিত করে তা টুকে রাখুন৷ 
  • নিজের জন্য মেন্টর বাছাই করতে পারেন। তিনি যেমন হতে পারেন দেশি বা বিদেশি কোনো লেখক, সাহিত্যিক, নোবেল লরিয়েট, বিজ্ঞানী, সৃষ্টিশীল-চিন্তাশীল মানুষ বা ব্যবসায়ী, তেমনি হতে পারেন আপনার পরিচিত কোনো মানুষও।
  • অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমেও সবার জন্য আরেকটু সুন্দর পৃথিবী তৈরি হয়। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে খাবার বিতরণে, প্রাণীর আশ্রয়কেন্দ্রে, শিক্ষা বা সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েও নিজের এবং অন্যদের আশায় অনুপ্রাণিত করা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to unveil 'July Declaration' on August 5

It will be presented in presence of all stakeholders involved in the mass uprising at 5:00pm

2h ago