ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রাখবেন যেভাবে

ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবন—জীবনের এই দুই দিকের মাঝে ঠিকঠাক ভারসাম্য বা সমন্বয় রাখতে না পারলে মনের শান্তি আর কাজের স্বস্তি মাঝেমাঝে বিগড়ে যায়। কাজ আর জীবনকে আলাদা করে এই দু্ইয়ের অকল্পনীয় কোনো ভারসাম্যের ধারণা নয়, বরং দুটির মিশেলে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা তৈরি করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবন—জীবনের এই দুই দিকের মাঝে ঠিকঠাক ভারসাম্য বা সমন্বয় রাখতে না পারলে মনের শান্তি আর কাজের স্বস্তি মাঝেমাঝে বিগড়ে যায়। কাজ আর জীবনকে আলাদা করে এই দু্ইয়ের অকল্পনীয় কোনো ভারসাম্যের ধারণা নয়, বরং দুটির মিশেলে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা তৈরি করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখলেই এমনটা করা সম্ভব।

কাজ হোক নমনীয়

পেশাগত বাধ্যবাধকতাগুলো কখন, কোথায় ও কীভাবে পূরণ হবে তার ওপর নির্ভর করে কাজের নমনীয়তা। অফিসের নীতিমালায় মাঝেমাঝে অফিসে বসে কাজ করার বিকল্প সুযোগ থাকলে তা গ্রহণ করা উচিত। এর মাধ্যমে কাজও যেমন ভালো হয়, তেমনি সময়কে আরেকটু ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়। পুরো সপ্তাহে তো সম্ভব না, সপ্তাহে ১ দিন যদি হোম অফিস করার সুযোগ পান, তবে ব্যক্তিজীবনে একটু বেশি সময় দেওয়া সম্ভব। কাজের চাপ একই থাকলেও অন্তত যাতায়াতের সময়টা তো বেঁচে যাবে।

অনেক কাজই থাকে যেগুলো সামনাসামনি আলোচনা করে করলে বেশি ভালো হয়। এমন কাজ অফিসে গিয়ে এবং একা যে কাজগুলো করা সম্ভব সেগুলো বাসায় বসে করা যায়। তবে অনেকেই হয়তো এই 'হোম অফিসের' ধারণা এখনো সেভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। তাদের জন্য ভালো হবে এই নতুন ধারণাটিকে একটু সময় দেওয়া এবং এর সম্ভাবনা যাচাই করা। কারণ ডিজিটাল যুগের নতুন বাস্তবতায় এটি বেশ মানানসই একটি পদ্ধতি। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারলে ব্যক্তি ও কর্মজীবনের সুস্থ সমন্বয়ের জন্য 'হোম অফিস' বেশ কার্যকর একটি উপায়।

নিয়মিত ছুটি নেওয়া

আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, অনেক কর্মজীবীই নিজেদের সারা বছরের ছুটি জমিয়ে রাখেন, পরে কখনো নেবেন বলে। যদি পরে কোনো জরুরি পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তখন সেসব ছুটি কাজে লাগবে বলে অনেকেই নিজেদের প্রাপ্য নিয়মিত ছুটিগুলো নেন না। কিন্তু এর ফলে পুরো বছর জুড়ে যে ক্লান্তির ভার জমে, তা বছর শেষের একটা লম্বা ছুটিতেও কাটে না। এর চেয়ে নিয়মিত ছুটি নিলে সহজে ক্লান্তি আসে না, এলেও কেটে যায়। ব্যক্তির ভালো থাকা, কাজে উৎসাহ পাওয়া এবং ভালোভাবে কাজ করা– এ সবই সুফল হিসেবে আসে।

সাধারণ ছুটি, জাতীয় ছুটির দিন ইত্যাদির সঙ্গে সপ্তাহের নিয়মিত ছুটি মিলিয়ে মাঝে মাঝেই ছোটখাট ভ্রমণ পরিকল্পনা করা যায়। ঘুরে আসা যায় একা কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে। আর ভ্রমণের সজীবতা থেকে ফিরে আসার পর নিঃসন্দেহে কাজের গতিও বেড়ে যায়, সেইসঙ্গে ক্লান্তির রেশ তো কাটবেই। কারো যদি ভ্রমণে আগ্রহ না থাকে নিজের মতো করে আনন্দ পেতে সময়টা কাটাতে পারেন। তবে যাই করুন না কেন, ছুটি-ছাটার এই পরিকল্পনাটা বছরের একেবারে শুরুতে করে নেওয়া ভালো।

কাজের মধ্যে এবং কাজের বাইরে ২ ভাবেই আত্মোন্নয়নে নজর দেওয়া দরকার। পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিজেকেও যথেষ্ট সময় দেওয়া। কিছু নতুন জিনিস শেখা, পুরনো শখগুলোকে ঝালিয়ে নেওয়া বা কিছুই না করে ছুটির দিন কাটিয়ে দেওয়ার বিলাসিতাও পেতে পারেন এই সময়ে। নিয়মিত ছুটি নিলে সবকিছুর জন্যই ভালো করে সময় পাওয়া যাবে। জীবনে থাকা সম্পর্কগুলো যেমন চারাগাছের মতো নিয়মিত পুষ্টি পাবে, তেমনি নিজের প্রাণটাও বেড়ে উঠবে সুস্থভাবে।

ভালো থাকাটা জরুরি

লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে মানুষ অনেক সময় নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দিতেই ভুলে যায়। কাজের জন্য নিজের সবটুকু দিতে গিয়ে নিজের জন্য কিছু থাকে না আর। জীবন আর কাজের সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে ব্যক্তি ও কর্ম, উভয় ক্ষেত্রেই নিজের ভালো থাকাটাকে প্রধান লক্ষ্য ধরে নিতে হবে। নিজের মতো করে, নিজের উপায়ে ভালো থাকা যায়। কারণ জগতের এত আনন্দ-আয়োজন, সবই বৃথা হবে যদি ব্যক্তি নিজেই ভালো না থাকে। ভালো থাকার চর্চা শুরু করা যায় ভালো খাওয়া-দাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে।

জীবনের মান উন্নয়নে কাজের সঙ্গী বাছাইয়েও সতর্ক হতে হবে। এমন কারো সঙ্গে কাজ করতে হবে, যে কি না সমর্থন যোগানোর পাশাপাশি গঠনমূলক সমালোচনাও করতে জানবে। বিশ্বস্ত, সাহায্যকারী মানুষের আশেপাশে থাকলে মন এমনি ভালো থাকবে– সেইসঙ্গে কাজেরও ক্ষতি হবে না।  

কাজের ক্যালেন্ডার যতই ব্যস্ত হোক না কেন, নিজেকে ছোট ছোট বিরতি দিতে হবে। সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে একে অন্যকে স্বস্তি দেওয়ার চর্চা থাকাটা জরুরি। এসব বিরতিতে নিজের পুরনো শখের সঙ্গেও সময় কাটানো যায়, হোক তা গান কিংবা খেলাধুলা। যদি কর্মক্ষেত্রে বিনোদনের সুযোগ থাকে, তা অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত। এতে কাজের জায়গাটা একেবারেই একঘেয়ে মনে হবে না, বরং কাজে আনন্দ আসবে।

লেখার শেষে বাড়তি পরামর্শ হিসেবে উল্লেখ করা যায় স্যার জন হুইটমোরের 'গ্রো (GROW)', অর্থাৎ 'গোল বা লক্ষ্য', 'রিয়েলিটি বা বাস্তবতা', 'অপশন বা বিকল্প' এবং 'ওয়ে ফরোয়ার্ড বা সামনে এগিয়ে যাওয়া'র  এই মডেলটি। কাজ ও জীবনের সঠিক সমন্বয়ের জন্য নিজের লক্ষ্য পৃথক করে নিতে জানতে হবে, সেইসঙ্গে নিজের বাস্তবতা মূল্যায়ন করাটাও জরুরি। এরপর সেই বাস্তবতা অনুযায়ী কতগুলো বিকল্প পথ খোলা আছে, সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে। সবশেষে নিজের জন্য সবচেয়ে মানানসই পদ্ধতিটি বেছে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments