মন ভালো করতে পারে যে ৫ টেলিভিশন সিরিজ

মন ভালো করতে বেশি না মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট চোখ রাখুন আপনার মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে।
মন ভালো করতে পারে যে ৫ টেলিভিশন সিরিজ
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আপনি কি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? পড়াশোনার চাপ, অফিসে বসের বকুনি কিংবা পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে হতাশার দ্বারপ্রান্তে আপনি? একটু নিজের জন্য সময় চাইছেন, চাইছেন তেতো বাস্তবতা থেকে দূরে গিয়ে একটু প্রাণ খুলে হাসতে? আপনার বর্তমান পরিস্থিতি এমন হয়ে থাকলে এই লেখাটি আপনার জন্য।

মন ভালো করতে বেশি না মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট চোখ রাখুন আপনার মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে। মন ভালো করার মত বেশকিছু টেলিভিশন সিরিজ আছে যা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও আপনাকে যাবতীয় বাস্তবতা থেকে কিছুটা দূরে থাকবে, মনকে সতেজ করবে।

এই সিরিজগুলোকে 'সিটকম' বলা হয় যার পূর্ণরূপ 'সিচুয়েশনাল কমেডি'। গৎবাঁধা কৌতুক বা পরিচিত হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমার বাইরে জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তের সরস গল্প বলাই হলো সিটকমের বৈশিষ্ট্য। পঞ্চাশ দশকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সিটকমের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরেনি এতটুকু।

সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে যেসব টেলিভিশন সিরিজ-

ফ্রেন্ডস

ছবি: সংগৃহীত

মন ভালো করতে চাইলে এই সিরিজের বিকল্প নেই। অনেকের কাছে সিটকম মানেই 'ফ্রেন্ডস'। ১৯৯৪–২০০৪ সাল অব্দি চলে আসা এই সিটকমের মাঝে আপনি খুঁজে পাবেন নিজেকে, নিজের বন্ধুদের আর আপনাদের বন্ধুত্বের। রস, র‍্যাচেল, জোয়ি, মনিকা, ফিবি আর চ্যান্ডলারের গল্প যেন আপনার চেনা বন্ধুদের গল্প বলে। এনবিসি নেটওয়ার্কে প্রচারিত এই সিটকমটি৷ সর্বাধিক বার দেখা সিরিজগুলোর মধ্যে অন্যতম। Empire Magazine, Writer's Guide, TV Guide সহ বিভিন্ন সংস্থার করা 'সর্বকালের সেরা টেলিভিশন অনুষ্ঠান'র সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয় ফ্রেন্ডসের নাম।

দশ সিজনে নির্মিত এই সিটকমটি নির্মাণ করেছেন ডেভিড ক্রেন ও মার্টা ক্রফম্যান।

আইএমডিবি রেটিং এ ফ্রেন্ডস ৮.৯ হলেও ভক্তদের কাছে এটি আবেগের অন্য নাম। সর্বমোট ২৩৬ পর্বের এই সিটকমের প্রতিটি পর্বের রানটাইম মাত্র ২০–২২ মিনিট। তাই বিরক্তি আসা বা একঘেয়ে লাগার সম্ভাবনা খুব কম।

দ্য অফিস

ছবি: সংগৃহীত

নামটি কাটখোট্টা শোনালেও এই সিটকমটি দেখতে বসলে বিরক্তি তো লাগবেই না বরং প্রতিদিনকার অফিসের ব্যস্ততার বাইরে গিয়ে এ যেন অন্য বাস্তবতার গল্প বলে। ২০০৫ সালের মার্চে এনবিসি নেটওয়ার্কে এই সিরিজের যাত্রা শুরু হয়। দুই সিজনে মোট ১২ পর্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় রিকি জারভিসের দ্য অফিস।

কাজের পাশাপাশি কর্মীরা যেন সুন্দর সময় কাটাতে পারে সে লক্ষ্যে সকালে অফিসে আসেন 'ডান্ডার মিফলিন পেপার কোম্পানি'র ম্যানেজার মাইকেল স্কট। অফিসের কর্মকর্তা আর তাদের ম্যানেজারের আজব কর্মকাণ্ড নিয়েই দ্য অফিস সিটকমের গল্প সাজানো হয়েছে। এদের কার্যকলাপ দেখে নিজেই অবাক বনে যাবেন আর ভাববেন, 'এটি কি সত্যিই অফিস?'

একদিকে যেমন মাইকেলের মজাদার কর্মকাণ্ড আপনাকে হাসাতে বাধ্য করবে আর জিম–প্যামের মিষ্টি প্রণয় সিরিজে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তাদের প্রেমের রসায়ন এতটাই দর্শকপ্রিয় হয় যে ভক্তরা এদের বাস্তব জীবনেও এদের জুটি ভাবতে শুরু করে।

হাউ আই মেট ইওর মাদার

ছবি: সংগৃহীত

২০০৫ সালের পটভূমিতে বলা টেড আর ট্রেসির মিষ্টি রোমান্সের গল্প বলা হয় এই সিরিজে। সঙ্গে যুক্ত হয় কমেডি, হিউমার আর চমৎকার বন্ধুত্বের গল্প। এই সিটকম ২০০৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রচারিত হয় সিবিএস নেটওয়ার্কে। নয় সিজনের এই সিরিজে অভিনয় করেছে জশ র‍্যাডনর, নীল প্যাট্রিক হ্যারিস,জেসন সেগেল, ক্রিস্টেন মিলিয়টি, কোবি স্মুল্ডারস প্রমুখ। ২২ মিনিট রানটাইমের দারুণ এই সিরিজের সর্বমোট পর্ব ২০৮। শেষদিকের কয়েক সিজনে দর্শক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও জনপ্রিয় সিটকমের তালিকায় এটি শুরুর দিকেই থাকবে। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ এই সিরিজের সমাপ্তি ঘটে। আইএমডিবিতে ৮.৩ পাওয়ার পাশাপাশি এটি ১০টি এমি এ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।

ব্রুকলিন নাইন-নাইন

ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফক্স টেলিভিশনে পথচলা শুরু ব্রুকলিন নাইনের। এই সিরিজে মোট ৮টি সিজন রয়েছে। প্রথম ৫ সিজনের পর এনবিসি এই সিরিজের স্বত্ব কিনে নেয়।

আমেরিকার ছোট্ট উপশহর ব্রুকলিনের পুলিশ শাখার দৈনন্দিন গল্পে হাস্যরস আর কৌতুকের মিশ্রণ ঘটিয়ে এই সিরিজের নির্মাণ করা হয়েছে। জেকের বুদ্ধিমত্তা আর স্বভাবজাত চঞ্চলতার সঙ্গে এমির বোকামি বা ক্যাপ্টেন হল্টের স্নেহ সবই দর্শককে স্ক্রিনে ধরে রাখার অন্যতম উপজীব্য। এই সিটকমের রানটাইম ২১–২২ মিনিট। সিরিজের মূল অভিনেতার তালিকায় আছেম এন্ডি স্যামবার্গ, স্তেফানি বিয়াট্রিজ, মেলিসা ফুমেরো, চেলসি পেরেটি, টেরি ক্রিউস প্রমুখ। আইএমডিবি রেটিং ৮.৪। সেরা সিরিজ হগোল্ডেন গ্লোব, এমি এ্যাওয়ার্ডস পেয়েছে সিরিজটি। 

বিগ ব্যাং থিওরি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে সমাপ্তি ঘটে ১২ সিজনের তুমুল জনপ্রিয় আমেরিকান সিটকম 'দ্য বিগ ব্যাং থিওরি'। ক্যালটেক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে কর্মরত প্রচণ্ড মেধাবী ৪ বন্ধু শেলডন, লেনার্ড, হাওয়ার্ড আর রাজের নিয়েই দুর্দান্ত  হিউমার আর অদ্ভুত কার্যকলাপ নিয়েই এই সিরিজের নির্মাণ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় চিজকেক ফ্যাক্টরিতে কাজ করা সাধারণ মেয়ে পেনি। ১৮–২২ মিনিট সময়ের প্রতিটি পর্বেই শেল্ডনের অদ্ভুত স্বভাব, অভিব্যক্তির সঙ্গে বিজ্ঞানের যোগ সিরিজটিকে অনন্য করে তুলেছে। 

এই সিরিজে বেশ কয়েকবার দেখা গিয়েছে বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংকে। তাছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদ ডেভিড সল্টজবার্গ, নিউরো সায়েন্টিস্ট মায়িম বিয়ালিকসহ বহু বিজ্ঞানী ও অধ্যাপকের দেখা মিলেছে এই সিটকমটিতে। ৮.৪ আইএমডিবি রেটিং পাওয়া 'দ্য বিগ ব্যাং থিওরি'র ঝুলিতে আছে এমি এ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরষ্কার। তাছাড়া এই সিরিজের শেল্ডন কুপার চরিত্রটি এত জনপ্রিয় হয় যে বিগ ব্যাং থিওরি সমাপ্তির পরপরই 'ইয়ং শেল্ডন' নামের সিরিজ শুরু হয় যেখানে শেল্ডনের শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ইয়ং শেল্ডনও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এর মধ্যেই।

Comments