ভালো থেকো মা

যিনি নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন। সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন।
ছবি: সংগৃহীত

'যার মা আছে, সে কখনো গরিব নয়'। বলেছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেরা জানে লিংকনের কথা কতটা সত্যি। আমরা জানি আমাদের জীবনে মায়ের অবদান কতটুকু। কীভাবে সংসারের খরচ থেকে অল্প অল্প করে জমানো টাকা তুলে দেন সন্তানের হাতে। তাও গোপনে, বাবার অজান্তে।

আজ ১৪ মে বিশ্বব্যাপী মা দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছেন সন্তানরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভরে গেছে মায়েদের ছবিতে। কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন তুলবেন বা তুলেছেন, মাকে ভালোবাসতে দিবসের প্রয়োজন আছে কি না, কিংবা মাকে ভালোবাসতে কোনো নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন আছে কি না। তাদের প্রশ্ন হয়তো অবান্তর নয়। কিন্তু, মা দিবস পালনে তো কোনো ক্ষতি নেই। মাকে উৎসর্গ করে একটি দিন যদি সন্তানরা উদযাপন করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মায়ের ছবি পোস্ট করেন সেটাতো খারাপ কিছু নয়। আমরাতো সামাজিক মাধ্যমে প্রতিদিন কতকিছু পোস্ট করি। একদিন যদি এভাবে সবাই মায়ের ছবি পোস্ট করি, তাহলে দেখতে ভালোই লাগবে। মনে হবে সবার ওয়ালে ওয়ালে মায়ের হাসিমুখ ফুল হয়ে ফুটেছে।

এবার আমার মায়ের একটি গল্প বলি। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করলাম। তারপর শহরের কলেজে ভর্তি হই। কখনো বাইরে থাকা হয়নি। মেসে একটি রুমে একা থাকার জীবন শুরু হলো। শুরুতে প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে যেতাম। ধীরে ধীরে তা কমে গেল। একসময় এইচএসসি পাস করলাম। তারপর অনার্সের জন্য চলে গেলাম আরেক শহরে। কিন্তু, এইচএসসির পর যে কথাটি জানতে পেরেছিলাম, তাতে আমি শুধু অবাক হইনি, আমার চোখ দিয়ে দুফোটা অশ্রুও গড়িয়ে পড়েছিল। সেদিন জানতে পারি, আমি যতদিন মেসে ছিলাম, আমার মা মাছ-মাংস খায়নি। কারণ মায়ের ধারণা ছিল মেসে ভালো খাওয়া-দাওয়া হয় না। তাই মাছ-মাংস খেতে গেলে আমার মুখটা মায়ের চোখে ভেসে উঠত। তাই তিনি খেতে পারতেন না। এটা জানার পর সেদিন আমি কিছুই বলতে পারিনি। আজ শুধুই বলব, 'ভালো থেক মা।'

এই গল্পটা শুধু আমার একার নয়। আমাদের সবার জীবনের গল্প, সবার সঙ্গেই হয়তো এমন কিছু ঘটে। কারণ, সন্তানের জন্য মায়েদের ভালোবাসায় পার্থক্য থাকে না। সেটার প্রকাশ সবসময় এক রকমভাবেই হয়ে থাকে।

সন্তানের সফলতার জন্য মায়ের দোয়া বা আশীর্বাদ খুবই দরকারি। ছোটবেলায় পড়া বায়েজিদ বোস্তামির গল্পটা আজ আবার মনে পড়ে যাচ্ছে। শোনা যায়, এক রাতে বায়েজিদ বোস্তামির মায়ের ঘুম ভেঙে যায়। তারপর তিনি বায়েজিদের কাছে পানি পান করতে চাইলেন। তখন পাত্রে কোনো পানি ছিল না। বোস্তামি সেই অন্ধকার রাতে বাইরে গেলেন পানি আনতে। তিনি যখন পানি নিয়ে ঘরে ফিরলেন, তখন তার মা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন। বায়েজিদ ঘুমন্ত মাকে না ডেকে সারা রাত পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে রইলেন। সকাল হয়ে গেল, মায়ের ঘুম ভাঙল। তিনি দেখলেন বায়েজিদ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তখন মা বায়েজিদকে দোয়া করলেন, 'একদিন তুমি অনেক বড় হবে।' পরবর্তীতে বায়েজিদ বোস্তামি অনেক বড় একজন ধর্ম প্রচারক হয়েছিলেন।

আবার সন্তানের জন্য মা সবকিছু করতে পারেন। এমনকি নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারেন। এ নিয়ে প্রচলিত একটি গল্প আছে। এক প্রেমিকা তার প্রেমিকের কাছে ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাইল। পরীক্ষাটা ছিল ওই প্রেমিককে তার মায়ের হৃদপিণ্ড এনে ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে হবে। প্রেমিক বাড়িতে গিয়ে মাকে হত্যা করে হৃদপিণ্ড নিয়ে নিলো। তারপর সেটা প্রেমিকার কাছে আনার পথে প্রেমিক হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। তখন মায়ের হৃদপিণ্ড বলল, 'কিরে খোকা, ব্যথা পেলি?'

এই হলো মা। যিনি নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন। সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন।

যাইহোক আজ মা দিবস। পৃথিবীর সব মায়েদের প্রতি শুভেচ্ছা। এই ব্রহ্মাণ্ডের সব মায়ের জন্য একটাই প্রার্থনা, 'ভালো থেক মা।'

Comments