বন্ধুত্বে সীমারেখা টানতে শিখুন

ছবি: অর্কিড চাকমা

যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমারেখা হচ্ছে একটি মানসিক দেয়াল, যা কি না ব্যক্তিকে তার অংশগ্রহণ বা আচরণের বিষয়ে আরও বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন হতে সাহায্য করে। অন্যভাবে বললে, এই সীমারেখার মাধ্যমে আমরা নিজেদের ও অন্যের মধ্যে কোথায় কতটুকু স্থানের অদল-বদল হবে, তা ঠিক করি। ঠিক যেভাবে আমাদের ঘরবাড়ি, আঙিনার সীমারেখা নির্ধারণ হয়।

গণমাধ্যম বা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তৃত পরিসর বা কাউন্সেলিং, থেরাপি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে আমাদের কাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সীমারেখা শুধু প্রণয়ঘটিত কিংবা পেশাদারি সম্পর্কের ক্ষেত্রেই টানা দরকার বলে মনে হয়। অন্যান্য 'প্লেটোনিক' সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সীমারেখার ধারণা অনেকটা ধোঁয়াটে ঠেকে।

কিন্তু বন্ধুত্বের মতো আপাত সহজ সম্পর্কও 'বেশি বেশি' কিংবা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মনে হতে পারে, যদি তাতে সীমারেখার বিষয়টি না থাকে। কিন্তু এই সীমারেখা কখন এবং কীভাবে টানতে হবে, তা কী করে বুঝবেন? 

অন্যান্য আবেগীয় বিষয়ের মতো বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও ঠিক কখন সীমারেখা টানা দরকার, তা আমরা নিজের মনের কম্পাসে চোখ রাখলেই বুঝতে পারব।

তবে সীমারেখা নির্ধারণের কিছু বিষয় আগে নিজের কাছে স্পষ্ট করা দরকার। সীমারেখা সম্পর্কে বুঝতে প্রথমে সেগুলো লিখে ফেলতে পারেন। এতে করে নিজের এবং বন্ধুদের মাঝে ঠিক কী ধরনের সীমানা টানা দরকার— তা নিয়ে নিজের কাছে পরিষ্কার হওয়া যাবে।

তবে এই সীমারেখা টানার সিদ্ধান্তটি যে অন্য মানুষ নিজে থেকে বুঝে যাবে, এমনটা ভাবা অত্যন্ত ভুল এবং এ ভুল অনেকেই করে থাকেন। মনে রাখবেন, সীমারেখার মূল শেকড় কিন্তু গেঁথে থাকে স্পষ্ট যোগাযোগে। এ বিষয়ে অপরপক্ষ বা বন্ধুটি সঠিক উপায়ে জানতে পারলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সেই সীমার প্রতি শ্রদ্ধা রাখেন এবং সীমানা অতিক্রম করে ফেললে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। তাই কোন বিষয়ে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করা যাবে না স্পষ্ট করে দিতে হবে তাদের কাছে।

যদিও সবাই যে এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবে এবং শুরু থেকেই আমাদের টেনে দেওয়া সীমারেখা মেনে চলবে, এমনটা আশা করাও ভুল। কিন্তু এরমধ্যেই নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে এবং ধীরে ধীরে অন্যকে এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

মনে রাখতে হবে, দৈনন্দিন জীবনে কোনো বিষয়ে বন্ধু বা অন্য কাউকে 'না' বলার পর সবসময় সেটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা বাড়তি ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন নেই। তবে এ বিষয়েও মনোযোগ দিতে হবে, আমরা যেন 'না' বলার মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তবেই সে আলাপ থেকে অন্য আলাপে যাই। কারণ অপর ব্যক্তিকে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখাও ভালো কাজ নয়। এতে করে সম্পর্কে সংশয় বাড়ে। 

তবে বন্ধুত্বে সীমারেখা নির্ধারণ করাটা সহজ নয়। খুব ছোটখাট বিষয়েও কথা বলা অনেক বড় কাজ মনে হতে পারে, জন্ম নিতে পারে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এ ছাড়া যে ব্যক্তিরা 'পিপল প্লিজার', অর্থাৎ অন্যকে সন্তুষ্ট করাই যাদের আচরণের মূল উদ্দেশ্য— তাদের জন্য প্রত্যাখ্যানের ভয় বিষয়টিকে আরও বেশি জটিল করে তোলে।

আপাতদৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও সুস্থ সীমারেখা নির্ধারণের মাধ্যমে বন্ধুত্বে স্বচ্ছতা বাড়ে এবং ২ পক্ষের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা থাকে। যে বন্ধুটির জীবনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ, সে নিশ্চয়ই যথাযথ সীমারেখার বিষয়টি বুঝতে পারবে। এ বিশ্বাস থেকেও বন্ধুত্বকে সময়ে সময়ে খতিয়ে দেখা দরকার।

আর কোনো বন্ধু যদি বারবার আমাদের নির্ধারণ করে দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম করতে থাকে, তাহলে বোধহয় সেই বন্ধুত্ব নিয়ে একবার ভালো করে ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

Cops gathering info on polls candidates

Based on the findings, law enforcers will assess security needs in each constituency and identify candidates who may pose risks.

13h ago