বাসা ভাড়ার চুক্তি সইয়ের সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
আগে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাসা ভাড়া নেওয়ার চুক্তি হতো মৌখিক। ফলে মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব হতো। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন ভাড়ার জন্য মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে লিখিত চুক্তি হয় এবং সেখানে ভাড়া সম্পর্কিত যাবতীয় শর্ত ও সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ থাকে।
কিন্তু একজন ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনার অধিকার ও অগ্রাধিকার যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। নিজের থাকার জায়গা নিয়ে কোনো ঝামেলা বা বিতর্ক কেউই চায় না।
তাই বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় নিচের বিষয়গুলোর কথা মাথায় রাখতে পারেন-
ভাড়ার উদ্দেশ্য
অ্যাপার্টমেন্টটি থাকার জন্য নাকি ব্যবসা পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত হবে, ভাড়ার দলিলে তা অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। যদি থাকার জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে অন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, তাহলে সেটি হবে চুক্তির লঙ্ঘন। যদি কখনো বাসাটিকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তাহলে আগে মালিককে জানিয়ে নিন।
ভাড়ার সময়সীমা
বাসা ভাড়ার চুক্তিনামা করার সময়ে মালিক ও ভাড়াটিয়া উভয় পক্ষের সম্মতিতে ভাড়ার সময়সীমা উল্লেখ থাকা উচিত। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভাড়া নেওয়া একটা বড় প্রতিশ্রুতির ব্যাপার। তাই উভয় পক্ষের ভবিষ্যত পরিকল্পনা মাথায় রেখে সময়সীমা নির্ধারণ করা আবশ্যক।
ভাড়ার পরিমাণ ও পরিশোধ পদ্ধতি
ভাড়ার পরিমাণ ও সেই অর্থ কীভাবে পরিশোধ করা হবে, তা বাসা ভাড়া নেওয়ার চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। এই ব্যাপারটি অবশ্য সবারই বিবেচনায় থাকে, তারপরও এখানে যাতে কোনো বিতর্কে সৃষ্টির সুযোগ তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
চুক্তিতে ভাড়ার পরিমাণ স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকতে হবে। এখানে কোনোরকম অষ্পষ্টতা থাকলে পুরো চুক্তিপত্রটিই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যেতে পারে। ভাড়ার পরিমাণ, কত বিরতিতে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে এবং সেই অর্থ ক্যাশ টাকায় নাকি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে, তাও চুক্তিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ থাকা আবশ্যক।
ভাড়া পরিশোধে দেরি হলে কী হবে তাও চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। যদি কোনো বিলম্ব মাশুল দিতে হয়, তাহলে সে ব্যাপারে বিস্তারিত শর্ত দলিলে উল্লেখ থাকতে হবে।
ভাড়া বাড়ানো
যদি অ্যাপার্টমেন্টটি দীর্ঘমেয়াদে ভাড়া নেওয়া হয়, তাহলে কতদিন পর পর কী পরিমাণ ভাড়া বাড়ানো হবে, তা দলিলে উল্লেখ থাকা জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আনোয়ার নামের একজন ১০ বছরের জন্য একটি বাসা ভাড়া নেওয়ার চুক্তি করছেন। তার চুক্তিপত্রে বলা আছে, প্রতি ৩০ মাস পর পর ১০ শতাংশ করে ভাড়া বাড়বে।
কত টাকা অগ্রিম দিতে হবে
প্রতিটি ভাড়ার সময়ই কিছু টাকা অগ্রিম জমা দিতে হয়, যাকে সিকিউরিটি ডিপোজিট বলে। এই টাকা মালিকের কাছে জমা থাকে এবং ভাড়াটিয়া যখন চুক্তি অনুযায়ী বাসা ছেড়ে দেন, তখন মালিক এটি আবার ফেরত দিয়ে দেন। তবে বাসার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে মালিক এই সিকিউরিটি ডিপোজিট থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ কেটে রাখতে পারেন। ভাড়া নেওয়ার উদ্দেশ্য ও মাসিক ভাড়ার ওপর সিকিউরিটি ডিপোজিটের পরিমাণ নির্ভর করে।
যেমন: কোনো ফ্ল্যাট যদি অফিসের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়, তাহলে সাধারণত ৬ মাসের ভাড়ার সমপরিমাণ অর্থ সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে নেওয়া হয়। আর আবাসনের জন্য ভাড়া নেওয়া হলে ২-৩ মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে হয়। কোনো দ্বিধা এড়াতে চুক্তিতে সিকিউরিটি ডিপোজিটের পরিমাণ, সেটি কীভাবে ফেরত দেওয়া হবে বা কেটে রাখা হবে তা উল্লেখ থাকা উচিত।
কমন স্পেস ব্যবহারের শর্ত
বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য সব অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সেই কিছু কমন স্পেস থাকে। এসব কমন স্পেস ব্যবহারের শর্ত ও নিয়ম চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে, যাতে উভয়পক্ষই এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারে।
হস্তান্তরযোগ্যতা
চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই ভাড়াটিয়া যদি বাসা ছাড়তে চান, তাহলে তিনি বাসাটিকে অন্য কারো কাছে ভাড়া দিতে পারবেন কি না, সেটি চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকা আবশ্যক। যদি চুক্তিটি হস্তান্তরযোগ্য হয়, তাহলে সেটি দলিলে উল্লেখ থাকতে হবে।
ভাড়া বাতিল
উভয়পক্ষের সম্মতিতে দলিলে ভাড়া বাতিলের ধারাটি অবশ্যই স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। যদি কোনো পক্ষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চুক্তিটি বাতিল করতে চায়, তাহলে কোন কোন শর্ত মানতে হবে, কত দিন আগে অপর পক্ষকে জানাতে হবে, কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কি না, ইত্যাদি বিষয় দলিলে উল্লেখ থাকতে হবে।
যেমন: আনোয়ার নামের একজন মহসিন নামের একজনের কাছ থেকে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছেন। পারিবারিক কারণে আনোয়ারকে এই বাসাটি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অন্তত ৩ মাস আগে মহসিনকে জানাতে হবে, যাতে তিনি অন্য ভাড়াটিয়া খুঁজে নিতে পারেন। আনোয়ার যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহসিনকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা না জানান, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অপরপক্ষের জন্যও একই শর্ত প্রযোজ্য।
অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল
Comments