বিদেশে ডর্ম বা বাসা ভাড়া: যা জানা প্রয়োজন

ছবি: নাদিয়া রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসার আগে যে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে একটি হলো, এখানে থাকার জায়গা নির্ধারণ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই যদি বলি, যে জায়গায় আগে কখনো যাইনি, দেখিনি, সেখানে দীর্ঘ একটা সময় থাকার জন্য বাসা ঠিক করাটা অনিশ্চিতই ছিল। 

আর যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাসা, যেটাই ঠিক করা হোক না কেন, লিজ বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কারণে বাসায় কোনো ঝামেলা হলে এই লিজ চুক্তি এক বছর কিংবা ছয় মাসের আগে শেষ করা যায় না। অর্থাৎ, আপনাকে এই পুরোটা সময় এখানেই থাকতে হবে কিংবা না থাকলেও এর ভাড়াটা ঠিকই পরিশোধ করতে হবে। 

তাই আন্তর্জাতিক যেসব শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে পড়তে যান, এ বিষয়গুলো খুব ভালো করে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিজের চরিত্রগুলোর মতো নতুন আসবাব, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজেকেই বহন করে নিতে হয়, পরিচিত কেউ থাকলে না-হয় ভিন্ন কথা।

এত কিছুর পরও যখন থাকার জায়গাটা শান্তির হয় না, তখন বিষয়টি পড়ালেখাসহ মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। তাই প্রথম থেকেই লিজ নেওয়া বাসাটির অবস্থান, পরিবেশ ভালো করে যাচাই করে নেওয়া চাই। সন্ধ্যার পর কতটা নিরাপদ, আশপাশে প্রয়োজনীয় দোকানপাট, ফার্মেসি আছে কি না, ক্যাম্পাস থেকে কতটুকু দূরত্বে, বাস-মেট্রো থাকলেও কতটা কাছে, এগুলো পরিকল্পনায় রাখা চাই। 

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু স্টেটে বছরের প্রায় পুরো সময়েই বৃষ্টি লেগে থাকে, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য যানবাহন ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসের বাসের রুটগুলো দেখে নিলে প্রথম দিকে সুবিধা হয়। এমনও হয়েছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য ক্লাসে যাওয়া হয়নি। কিংবা আবহাওয়া ফোরকাস্টে বৃষ্টি দেখাচ্ছিল বলে ঠিক সময়ে বাস ধরে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে হয়েছে। 

এরপর অবশ্যই যে বিষয়টি আসে তা হলো, অ্যাপার্টমেন্ট মেট। প্রবাসে নিজের স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীনতাকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারপরও একই ডর্মে যার সঙ্গে থাকবেন, তার কালচার বা সংস্কৃতি, ফুড হ্যাবিট, এই ছোটখাটো বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ। আমার অনেক সহপাঠীকে দেখেছি, অপরের রান্নার কারণে বিব্রতবোধ করতে। কেননা বিষয়টি খুব সামান্য হলেও একেক দেশে প্রচলিত খাবার ও মশলায় ভিন্নতা রয়েছে। 

আমার আমেরিকান ডর্মমেট কখনোই আমাদের দেশীয় মশলার ঘ্রাণ সয়ে নিতে পারেনি। আর এখানকার কিচেন বা রান্নাঘর ব্যবস্থাও আলাদা। আবার অনেক সময় এমনটাও হয়, ডর্মমেট হয়ত ভিন্ন দেশের, ভিন্ন সংস্কৃতির এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ডর্মের মানুষদের সঙ্গেই একটা ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। 

এদিক থেকে বলা যায়, আমার জাপানিজ ডর্মমেটের প্রসঙ্গে। শুকনো ঘাসফড়িঙ বা পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট কিনে ফ্রিজে রাখলেও আমাদের এ নিয়ে কখনো সমস্যা হয়নি। প্রয়োজনের সময়, যেমন: অসুখ কিংবা কোনো সহযোগিতায় কাছের মানুষ এই ডর্ম বা অ্যাপার্টমেন্ট মেটরাই। তাই বাসা নেওয়ার সময় অ্যাপার্টমেন্ট মেটের সঙ্গে পারলে পরিচিত হয়ে কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন। 

আরেকটি বিষয় হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসা ভাড়া নেওয়ার লিজের সময় থাকে এক বছরের। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই লিজের সময় ছয় মাসের হয়ে থাকে। যেহেতু এখানে লিজ পলিসি খুবই কড়াকড়িভাবে মেনে চলা হয়, তাই নতুন এক জায়গায় স্বল্প সময়ের লিজ নেওয়াটাই সুবিধাজনক। বাসায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো, যেমন: ইন্টারনেট সংযোগ, ফায়ার অ্যালার্ম সার্ভিস থেকে শুরু করে ইমার্জেন্সি ফিক্সিট, পার্কিং ব্যবস্থা, ইউটিলিটি বিল এগুলো নিয়েও আগেই কথা বলে নেওয়া ভালো।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

4h ago