বাবা-মায়ের ভরণপোষণ নিয়ে যা আছে আইনে

বাবা-মায়ের ভরণপোষণ আইন
ছবি: সংগৃহীত

বাবা-মায়ের চাওয়া থাকে সন্তান যেন ভালো থাকে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তবে বড় হওয়ার পর অনেক সন্তান বাবা-মায়ের প্রতি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না বা করতে চান না।

বয়স হওয়ার পর বাবা-মাকে যেন এমন অবস্থায় পড়তে না হয় সেজন্য রাষ্ট্র আইন করেছে। সরকার ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে 'পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩' নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। কোনো সন্তান বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে বা ভরণপোষণ না দিলে তাদের বিরুদ্ধে বাবা-মা চাইলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

কী আছে আইনে

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য ছেলে সন্তানকে দায়বদ্ধ ভাবা হয়। তবে 'পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩' অনুসারে, 'সন্তান বলতে বাবার ঔরসে এবং মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া সক্ষম ও সামর্থ্যবান পুত্র বা কন্যাকে বুঝাবে।'

'পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩' এর ধারা ৩ এ প্রত্যেক সন্তানকে তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যদি কোনো বাবা-মায়ের একাধিক সন্তান থাকে তবে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাবা-মার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবেন।

এই আইনে বাবা-মার ভরণপোষণ নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রত্যেক সন্তানকে বাবা-মায়ের সঙ্গে একই স্থানে বসবাস করার কথা বলা হয়েছে। কোনো সন্তান তার বাবা বা মাকে বা দুজনকেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস বা অন্য কোথাও একসঙ্গে বা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবেন না। 

এ ছাড়া, প্রত্যেক সন্তান বাবা-মার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা করতে বাধ্য থাকবেন। যদি কোনো বাবা বা মা কিংবা দুজনেই সন্তান থেকে আলাদাভাবে বসবাস করেন, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে হবে। বাবা-মার প্রত্যেক সন্তান তাদের দৈনন্দিন আয়-রোজগার বা ক্ষেত্রমত মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় থেকে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ বাবা বা মা বা দুজনকে নিয়মিত দেবেন।

তাছাড়া এই আইনের ৪ ধারায় বাবা-মায়ের অবর্তমানে দাদা-দাদি, নানা-নানির ভরণপোষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তান বাবার অবর্তমানে দাদা-দাদিকে এবং মায়ের অবর্তমানে নানা-নানিকে ধারা ৩ এ বর্ণিত ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবেন।

এই আইনে বিচার ও শাস্তি

আইনটির ধারা ৬ ও ৭ এ বলা হয়েছে, কোনো সন্তান যদি 'পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩' এর কোনো বিধান আমান্য করেন এবং ওই সন্তানের বাবা বা মা লিখিত অভিযোগ যদি সরাসরি প্রথম শ্রেণীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে করে থাকেন তবে ওই আদালতে অপরাধের বিচার হবে।

এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য। তবে কোনো আদালত অপরাধে সংশ্লিষ্ট সন্তানের বাবা বা মায়ের লিখিত অভিযোগ ছাড়া অপরাধ আমলে গ্রহণ করবেন না। এই আইনে আপস-নিষ্পত্তির ধারাও সংযুক্ত করা হয়েছে।

'পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩' এর ধারা ৫(১) অনুসারে, কোনো সন্তান বাবা-মায়ের ভরণপোষণ না করলে, তিনি অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা এই অর্থদণ্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোনো নিকট আত্মীয় বাবা-মায়ের বা দাদা-দাদির বা নানা-নানির ভরণপোষণ দেওয়ায় বাধা দিলে বা অসহযোগিতা করলে তিনিও ধারা ৫(১) অনুসারে দণ্ডিত হবেন।   

লেখক:

সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)

 

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

2h ago