কাবিননামার যে ১০ বিষয় জানা প্রয়োজন

ছবি: সংগৃহীত

হাজার বছর ধরে বিভিন্ন সভ্যতা ও সমাজে টিকে আছে বিয়ের ধারণা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নির্ধারণের এই নিয়মে যুগে যুগে এসেছে নানা পরিবর্তন ও সংশোধন।

আজকাল বিয়েকে অবশ্য আইনি চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে কাবিননামা বা নিকাহনামাকে নির্দেশনা হিসেবে দেখা হয়। কাবিননামা ফর্ম তৈরি করা হয় মূলত দম্পতির পছন্দ অনুযায়ী বিয়ের শর্ত নির্ধারণের উদ্দেশ্যে।

চলুন কাবিননামার প্রধান ১০ বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

মোহরানা

প্রথাগতভাবে বিয়ের সময় মোহরানার (সাধারণত দেনমোহর নামে পরিচিত) অংশ অনেক বেশি অগ্রাধিকার পায় এবং ধর্মীয়ভাবে মোহরানা কনের নিরাপত্তা হিসেবে দেওয়া হয়। পারিবারিক অনুশীলন, বরের আয় ও পরিবারের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সমাজে মোহরানার ভূমিকা যেভাবে দেখা হয়, এর বাইরেও এটি অনেকভাবে মূল্যায়িত হতে পারে।

দেনমোহর প্রদান

কাবিননামায় মোহরানার পরিমাণের পাশাপাশি কখন এবং কীভাবে মোহরানা দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে শর্ত নির্ধারণ করা হয়। সবার আগে দেনমোহর কোনো সম্পত্তি বা গয়না হিসেবে দেওয়া হচ্ছে কি না, কতটা বকেয়া আছে এবং বকেয়ার পরিমাণ কিস্তিতে নাকি এককালীন পরিশোধ করা হবে ইত্যাদি বিষয় কাবিননামায় উল্লেখ করতে হয়।

বিচ্ছেদের অধিকার

কাবিননামার একটি ধারায় স্ত্রীর তালাক দেওয়ার অধিকার থাকতে পারে। একজন স্ত্রী মুসলিম আইন অধ্যাদেশ- ১৯৬১ অনুযায়ী বিয়ে ভেঙে দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তবে এটি শর্তসাপেক্ষ হতে পারে।

স্বামীর বিচ্ছেদের অধিকার সীমিতকরণ

মুসলিম বিয়েতে তালাক দেওয়ার চূড়ান্ত অধিকার স্বামীর। তবে কিছু নিয়মনীতির মাধ্যমে স্বামীর এই অধিকার সীমিত করা যেতে পারে। বিয়ের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে চুক্তিতে শর্ত উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে সব শর্তই দম্পতি কী চায় তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।

দম্পতির 'উকিল'

কাবিননামা দম্পতিকে 'উকিল বাবা' বাছাইয়ের অনুমোদন দেয়। তিনি দম্পতির অধিকারের বিষয়ে পরামর্শ দেবেন এবং তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো বিবাদ দেখা দিলে তা সমাধানে কাজ করবেন।

সাক্ষী

কাবিননামা চুক্তি সইয়ের সময় উভয় পক্ষ থেকে কমপক্ষে ২ জন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে এবং কাবিননামায় সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। কারণ, বিবাদের ক্ষেত্রে সাক্ষীরা যেন ঘটনা যাচাইয়ের জন্য নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারেন।

ভাষা

বাংলাদেশে কাবিননামা বাংলায় লেখা হয়। দম্পতি প্রয়োজনে অর্থ দিয়ে ও আবেদন সাপেক্ষে পরে এটি যেকোনো ভাষায় অনুবাদ করিয়ে নিতে পারবেন।

আগের বিয়ের বিবরণ

কনে আগে কোনো বিয়ে করে থাকলে তার বিবরণ কাবিননামায় উল্লেখ করতে হবে। তাকে বিয়ে ভাঙার কারণ, যেমন তালাক, মৃত্যু বা অন্যান্য কারণ উল্লেখ করতে হবে।

বহুবিয়ের ক্ষেত্রে কাউন্সিলের অনুমতি

মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী একজন পুরুষ সর্বোচ্চ ৪ নারীকে বিয়ে করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বরকে সালিশি পরিষদ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। কাবিননামায় সালিশি পরিষদের কাছ থেকে পাওয়া অনুমতির বিবরণ থাকতে হবে। এ অনুমতি ছাড়া বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অন্যান্য শর্ত

কাবিননামার একটি অংশে দম্পতি নিজেদের মতো করে শর্ত যোগ করতে পারে। এই অংশটি দম্পতিকে একে অপরকে দেওয়া অঙ্গীকারকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার সুযোগ দেয়। সুযোগটি ব্যবহার করে তারা জীবনযাত্রা, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, একে অপরের প্রতি দায়িত্ব এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে নির্দেশিকা তৈরি করতে পারে।

অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

4h ago