ধানমন্ডি লেক পার্কের ক্ষুদে লাইব্রেরি

ধানমন্ডি লেক পার্কের লাইব্রেরি
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়টাকে সোশ্যাল মিডিয়ার কাল বলা যেতে পারে। যুগটা যখন ডোপামিন-চালিত এই সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করার, সেই তখন গাছের নিচে বসে বই পড়ার বিষয়টা স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, ব্যস্ত নগরজীবনে এত আয়েশ করে বসে বই পড়ার সময়ই বা আমাদের কোথায়!

কেবল নির্বিঘ্নে বই পড়ার জন্য রাজ্যের যানজট ঠেলে লাইব্রেরিতে যাওয়া শহরবাসীর জন্য বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। বই পড়ার ইচ্ছা আর সুযোগের মধ্যে যে দূরত্ব তা কমিয়ে আনতে অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা জাকিয়া রায়হানা রূপা। ব্যস্ত ঢাকার ততোধিক ব্যস্ত ধানমন্ডি এলাকার লেক পার্কে স্থাপন করেছেন কিছু ক্ষুদে লাইব্রেরি।

ধানমন্ডি লেক

৪৪ বছর বয়সী এই সাহিত্যপ্রেমী বললেন তার এই উদ্যোগের পেছনের গল্প।

তিনি বলেন, 'এক বন্ধুর কাছে জানতে পারি জার্মানির লিটল ট্রি লাইব্রেরির কথা। যেখানে পাবলিক পার্কগুলোয় ছোট ছোট বুকশেলফ রাখা থাকে। যে কেউ সেখানে বই দান করতে পারেন। পার্কে আসা মানুষ সেখান থেকে বই নিয়ে পড়েন। এটা জানার পর ভাবলাম, বাংলাদেশেও তো এই উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।'

যেই ভাবনা সেই কাজ, রূপা লেগে পড়লেন ক্ষুদে লাইব্রেরি তৈরির কাজে। ধানমন্ডি ৭ এর লেক পার্কের গাছে স্থাপন করা হয় কাঠের তৈরি প্রথম বুককেসটি। সেখানে রূপা রাখেন তার প্রিয় লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মাদের কিছু বই। ক্ষুদে লাইব্রেরির নিচে জুড়ে দেন সহজ একটি নিয়ম, 'এখান থেকে বই নিয়ে পড়ুন এবং পড়া শেষে আবার রেখে দিন।'

কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল, ভীষণ ব্যস্ত এই শহরেও কিছু মানুষ চমৎকার এই ক্ষুদে লাইব্রেরি দেখছেন, বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন এবং বই পড়ে চমৎকার সময় কাটাচ্ছেন।

কিছুটা ব্যাখ্যা করেই রূপা বলেন, 'কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে এই শান্ত লেক আর চোখ জুড়ানো সবুজ মানুষকে আকৃষ্ট করে। সে কারণেই ক্ষুদে লাইব্রেরির জন্য জায়গাটি একদম যথাযথ হয়েছে। প্রথমটি স্থাপনের পর মানুষের সাড়া দেখে আমি আরও তিনটি ক্ষুদে লাইব্রেরি স্থাপন করেছি।'

বুককেসগুলো গাছের গায়ে এমনভাবে লাগানো হয়েছে দূর থেকে দেখে মনে হয় পাখির বাসা বুঝি। সেইসঙ্গে পার্কের বেঞ্চগুলোর কাছাকাছি জায়গায় বসানো হয়েছে, যেন সহজেই বই নিয়ে বসে পড়া যায়।

বইয়ের প্রতি মানুষের ভালোবাসার বিষয়ে রূপার বিশ্বাস থেকেই এই ক্ষুদে লাইব্রেরির যাত্রা।

রূপা বলেন, 'মানুষ পড়তে চায়। তাদের প্রয়োজন মানসম্পন্ন বই এবং বই পড়ার মতো পরিবেশ।'

তিনি এটাও বললেন যে, বইয়ের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় নিয়মিত বই কেনা সবার জন্য সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে বিনামূল্যে ক্ষুদে লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়তে পারার সুযোগ পেলে সবারই উপকার হবে। আরও বেশি বই মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়াই এখন রূপার লক্ষ্য।

ক্ষুদে লাইব্রেরি যে বেশ সাড়া ফেলেছে তা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে। সাহিত্য অনুরাগীদের কাছ থেকে আসছে তহবিল এবং বই। শিগগিরই আরও ছয়টি বুককেস পার্কে বসানো হবে।

ক্ষুদে লাইব্রেরিকে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিতে চান রূপা। তার ইচ্ছা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্থাপন করবেন এই লাইব্রেরি, যাতে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বাড়ে এবং মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় হয়।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

9h ago