সিসিটিভি ক্যামেরা কেন কিনবেন, রকমফের ও কোথায় পাবেন

সিসিটিভি ক্যামেরা
ছবি: সংগৃহীত

নানা ধরনের ভয়ংকর ঘটনার কথা শুনে আপনার কি এই শহরে পার করা প্রতিটা দিন খুব অনিরাপদ বোধ হয়? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে এখনই সময় নিজের, নিজের বাড়ির এবং প্রিয়জনদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরায় বিনিয়োগের। আপনার বাসস্থান, কর্মক্ষেত্র বা প্রয়োজনীয় যেকোনো স্থানে সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানোর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। তাই সিসিটিভি ক্যামেরায় বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।

আপনি যেন সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাই এর প্রধান ব্যবহার ও সুবিধাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও অপরাধ প্রতিরোধ

কখনো কখনো কেবল সিসিটিভি ক্যামেরার উপস্থিতিই আপনার অনেক সমস্যা কমিয়ে দিতে পারে। কারণ যখন কোথাও সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহৃত হয় তখন অপরাধীরা চুরি থেকে বিরত থাকে, ভাঙচুর বা লুটপাটের মতো ঘটনাও কেউ ঘটাতে সাহস পায় না এবং অনেক ধরনের অবৈধ ও ক্ষতিকর কার্যকলাপ থেকেও সাধারণ মানুষকে এটি দূরে রাখে। সহজ কথায় বললে, যখন কোনো অপরাধী কোথাও সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পায় তখন সে অপরাধ করতে আর উৎসাহ পায় না কিংবা অপরাধ করার আগে অন্তত দুবার চিন্তা করে।

বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে গ্রাম থেকে শহর সবখানেই এমন কিছু এলাকা থাকে যেখানে নিয়মিত ছোটখাটো অপরাধ ঘটে। সেসব এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো গেলে তা চুরি ও অপরাধ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণ সংগ্রহ

যদি দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপনার বাড়ি বা ব্যবসাক্ষেত্রের আশপাশে বা কাছাকাছি কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটে তাহলে সে ঘটনার তদন্তে ও সমস্যা সমাধানে সিসিটিভি ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হতে পারে অমূল্য। অপরাধী শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ প্রধান প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে। এছাড়া তদন্তের জন্য দিক নির্দেশনা দেওয়া ও আদালতে মামলাকে শক্তিশালী করতে তথ্যপ্রমাণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

শুধু তাই নয়, বীমা দাবির ক্ষেত্রেও ভিডিও ফুটেজ কাজে লাগে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাধারণত বীমা কোম্পানিগুলো তার শক্ত প্রমাণ চায়। এক্ষেত্রে সিসিটিভি ফুটেজ দারুণ কাজে লাগে।

দূর থেকে নজরদারি

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এখন এমন অনেক সিসিটিভি সিস্টেম বের হয়েছে যেগুলোতে স্মার্টফোন, ট্যাব বা কম্পিউটার ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে নজরদারীর ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি কোথায় রয়েছেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন আপনার মূল্যমান সম্পদ, প্রিয়জন কিংবা অফিসের কর্মচারীরা কখন কী করছেন তা সহজেই দেখতে পারেন এবং নিজের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে পারেন।

এছাড়া আপনি যদি কর্মজীবী বাবা-মা হয়ে থাকেন তাহলেও সিসিটিভি ক্যামেরা আপনার দারুণ উপকার করতে পারে। যখন আপনি বা আপনার সঙ্গী বাড়িতে থাকেন না তখন গৃহসহকারীর কাছে সন্তান কেমন আছে, কী করছে এসবই আপনি যেকোনো জায়গায় বসে দেখতে পারেন। ফলে বাড়িতে সন্তানরা কতটা নিরাপদে আছে বা তাদের সঠিক যত্ন হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।

সম্পত্তির দাম বাড়ানো

আপনি যদি আপনার বাড়ি বা কর্মস্থলকে সিসিটিভির নজরদারির আওতায় নেন তাহলে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্রেতা বা ভাড়াটিয়াদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর দাম বেড়ে যাবে। কারণ আপনার সম্পদ অন্যদের তুলনায় নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

কারণ একজন ভাড়াটিয়া বা ক্রেতা এমন কোথাও বিনিয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন যার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের থেকেই ভালো।

আবার আপনি যদি ঢাকার গুলশান, বারিধারা, বনানীর মতো এলাকার বাড়িওয়ালা হন আর সেই বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন তাহলে বাড়িগুলো ভাড়াটিয়াদের কাছে আকর্ষণীয় হয়। কারণ তারা দেখতে পান যে, তাদের নিরাপত্তাকে এখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন।

ব্যবসায়ীদের জন্য সুরক্ষা

আপনি যদি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন তাহলে সিসিটিভি ক্যামেরা আপনার জন্য দারুণ উপকারী হাতিয়ার হতে পারে। এর মাধ্যমে সহজেই আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নিয়মনীতি অনুসরণ করে, দক্ষতার সঙ্গে এবং সুরক্ষা মান মেনে কাজ করছে কি না। কর্মীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে ক্যামেরা বসানো হলে বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি, হয়রানি এবং চুরি প্রতিরোধ করা যায়।

এর চেয়ে বড় কথা হলো, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থাকলে ক্রেতা বা কর্মীদের করা কোনো মিথ্যা দাবি থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি দাবি করে যে আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে সে আহত হয়েছে বা হয়রানির শিকার হয়েছে তাহলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তার কথার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব।

প্রবেশপথের ওপর নিয়ন্ত্রণ

বাড়ি কিংবা কর্মক্ষেত্রের প্রবেশপথে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হলে সেই পরিসরে সবার প্রবেশ ও প্রস্থান নিরাপদ হয়। আপনার ভবনের প্রবেশ পথগুলোয় যদি সিসিটিভি নজরদারি থাকে তাহলে ভবনে কে প্রবেশ করল, কে বের হলো সেই বিষয়টির ওপর আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

মজার বিষয় হলো, আজকাল অনেক সিসিটিভি ক্যামেরাকে স্মার্ট হোম সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। এতে আপনি চাইলে এমন ব্যবস্থা করতে পারবেন যে বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ কোন যানবাহন আপনার বাড়ির পরিসরে প্রবেশ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বেজে উঠকে। ফলে আপনি উপস্থিত না থেকেও আপনার বাড়ির প্রবেশপথের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবেন।

কোথায় পাবেন, কেমন দাম

দেশের প্রায় সব ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানেই এখন সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে পাওয়া যায়। নিউ এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার বা বায়তুল মোকাররমের স্টেডিয়াম মার্কেটের মতো জায়গায় ক্যামেরার নানা ধরনের দেখা মেলে। এসব মার্কেটের অনেক দোকানেই সিসিটিভির সব ধরনের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। এসব দোকানে পাবেন একদম সাধারণ থেকে উচ্চমানের সিসিটিভি যেগুলোতে নাইট ভিশন ও দূর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও রয়েছে।

সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার আরেকটি বিকল্প স্থান হতে পারে দারাজ, স্টার টেক, ইউসিসির মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এসব জায়গাতেও আপনি সিসিটিভি ক্যামেরার বড় স্টক পাবেন। এক্ষেত্রে ক্যাটালগ দেখে ঘরে বসেই কিনতে পারবেন পছন্দের সিসিটিভি ক্যামেরাটি।

সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে চাইলে নিরাপত্তা এবং বাজেটের ওপর নির্ভর করবে এর মান। এখন এক হাজার টাকার কম দামেও কিছু ক্যামেরা পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে ইউনিভিউ ইউএসি-বি১১২-এফ৪০ ক্যামেরার কথা বলা যায়, যার দাম মাত্র ৫৯৩ টাকা। অথবা জোভিশনের জেভিএস-এ৬৩-এইচওয়াইএস আইআর ডোম ক্যামেরার দাম ১২০০ টাকার মতো।

সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার সময় এর রেজুলেশন, ফিল্ড অব ভিশন, নাইট ভিশন সক্ষমতা এবং মোশন সেন্সিং বা অনলাইনে পর্যবেক্ষণ সুবিধা দেখে নিতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে নামকরা কোম্পানিগুলো হলো হিকভিশন, দাহুয়া এবং জোভিশন।

ক্যামেরার স্পেসিফিকেশনের ওপর দাম ওঠানামা করে। যেমন উচ্চ রেজোলিউশন ও বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে সক্ষম এমন ক্যামেরার দাম বেশি। উদাহরণ হিসেবে Hikvision DS-2DE7A432IW-AEB আইপি ক্যামেরার কথা বলা যায়। যার দাম ৮০ হাজার টাকা।

বাজেট এবং কতটুকু সুরক্ষা প্রয়োজন তার ওপর নির্ভর করে বাজার যাচাই করে সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে পারেন। এছাড়াও কেনার আগে ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয়-পরবর্তী সেবা পাওয়া যাবে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন। তাহলে আপনি দীর্ঘদিন ধরে নিশ্চিন্তে পণ্যটি ব্যবহার করতে পারবেন।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

2h ago