আবেগে লাগাম টানবেন যে ৭ কৌশলে

আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করলে একজন মানুষের জীবনে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই আবেগকে যত্রতত্র অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রকাশ না করে মেনে চলুন এই কৌশলগুলো।
আবেগের নামকরণ
অনেক সময় আমরা নিজেদের আবেগকে বশে আনতে পারি না, কারণ তা ব্যাখ্যা করার মতো শব্দই আমাদের কাছে থাকে না। আবেগকে বিভিন্ন পরিস্থিতি ও অনুভূতি অনুযায়ী নাম দিতে হবে, যাতে করে আমরা পরে সেটি নিয়ে বাড়তি ঝামেলায় না পড়ি। রাগ, ক্ষোভ, মন খারাপ, অস্থিরতা, উদ্বেগ- সব ধরনের আবেগকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা শিখতে হবে।
মনোনিবেশ চর্চা
তীব্র আবেগ অনুভব হলে তা মনের পাশাপাশি শরীরেও প্রভাব ফেলে। মন ও শরীর দুটোকেই স্থির রাখতে চাইলে ঘুমানোর আগে নিয়মিত মাইন্ডফুলনেস বা মনোনিবেশ চর্চা করতে হবে। এক্ষেত্রে মেডিটেশন, রিলাক্সিং মিউজিক শোনার মতো পদ্ধতিগুলো বেশ কার্যকর।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
এই ব্যায়ামগুলো দিনে নিয়মিত দুইবার- একবার সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং একবার ঘুমাতে যাওয়ার সময় করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এই ব্যায়ামটি বদ্ধ ঘরে করে না করে খোলামেলা বাতাস আছে, এমন জায়গায় করলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশ করবে এবং বদ্ধভাব থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।
রাখতে পারেন মুড জার্নাল
এই জার্নালটি সাধারণ ডায়েরির মতো হলেও অনেকটাই আলাদা। ডায়েরিতে যেভাবে আমরা দৈনন্দিন কার্যক্রমের কথা লিখি, ঠিক সেভাবে মুড জার্নালে মন-মেজাজের অবস্থা টুকে রাখা হয়। এ বিষয়ে থেরাপিস্ট অ্যামান্ডা রুইজ বলেন, 'আপনার চিন্তা-ভাবনা, আবেগ এবং মনস্থাত্ত্বিক বাধা-বিপত্তির বিষয়ে লিখিত রেকর্ড রাখলে মানসিক উদ্বেগ ও ডিপ্রেশন কমে। কারণ সমস্যাগুলো লিখে রাখলে আমরা তার পেছনে থাকা কারণগুলোও ভালো করে বুঝতে পারি। ফলে সমাধানটাও সহজে বেরিয়ে আসে।'
মুড জার্নালে বিভিন্ন আবেগের জন্য আলাদা আলাদা রং ব্যবহার করা যায়। প্রতি মাসের ক্যালেন্ডারে কোন দিন কোন আবেগের প্রভাব বেশি ছিল, সেটি আলাদা করার জন্য দিনশেষে একটি রং বেছে নিন এবং কিছু নোট লিখে রাখুন। তাহলে মাসশেষে আপনি নিজের আবেগ-অনুভূতির একটি প্যাটার্ন খুঁজে পাবেন, যা আপনাকে পরবর্তী সময়ে আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে দূরে থাকুন
মন খারাপ হলে যেকোনো অবস্থায় কেঁদে ফেলা, কিংবা রাগ হলে জিনিসপাতি ভাঙচুর করা- এগুলো হচ্ছে প্রতিক্রিয়া দেখানো আচরণ। রাগ-ক্ষোভ-আনন্দ-দুঃখ এসব আবেগই সব মানুষের রয়েছে, কিন্তু সবাই তা একইভাবে প্রকাশ করে না। তাই মনে রাখতে হবে, তীব্র আবেগ মানেই তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ নয়। এ ধরনের আচরণের ফলে অন্যরা বিব্রত হয়, তাই প্রাথমিকভাবে এই আচরণগুলো চিহ্নিত করে ধারাবাহিকভাবে কমানোর চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি হবে।
ইতিবাচক চিন্তা করুন
যেসব ঘটনায় আপনার আবেগ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেরিয়ে আসে, সেগুলো সম্পর্কে আরেকবার ভাবুন। হয়তো কারো আচরণে আপনার প্রায়ই রাগ উঠে যায়। পরের বার তার সামনে গেলে রাগ কেন উঠছে- সেটি নিয়ে ভাবুন এবং চেষ্টা করুন রাগ না করে বিষয়টির সমাধান করতে। প্রথমেই নেতিবাচক পথে না এগিয়ে ইতিবাচকভাবে সুরাহার প্রচেষ্টাই অনিয়ন্ত্রিত আবেগকে থামাতে পারে।
প্রয়োজনে সাহায্য নিন
রাগ, মন খারাপ, হতাশা- এই সবকিছুই খুব স্বাভাবিক মানবীয় আবেগ। কিন্তু কোনো আবেগ যখন সীমার বাইরে চলে যায়, তখন সেটি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয়। আপনার নিজের বা কাছের কোনো মানুষের ক্ষেত্রে যদি অনিয়ন্ত্রিত আবেগ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে প্রয়োজনে মেডিটেশন কোর্স, থেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন। মনে বিশ্বাস রাখবেন, নিয়মিত চর্চায় সবকিছুরই সমাধান সম্ভব।
সর্বোপরি, নিজের আবেগগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন। যেকোনো সমস্যায় চোখ বন্ধ করে রাখলেই তা চলে যায় না, তাই চোখ খুলে সমস্যাগুলোর দিকে তাকান এবং যথার্থ সমাধানের দিকে এগিয়ে যান।
মোটমাট একটি কথা মাথায় রাখলেই আবেগকে বশে আনা সম্ভব হবে, আর তা হচ্ছে- আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন, অবদমন নয়। মন খারাপ হলে জোর করে 'মন ভালো আছে' বলার দরকার নেই। বরং মন খারাপকে স্বীকার করে নিয়ে সেটিকে দূর করার চেষ্টা করুন। যেকোনো প্রকার অস্বীকৃতিই আপনার আবেগগুলোকে বাজেভাবে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। তাই আবেগকে অস্বীকার বা অবদমন নয়, বরং সুস্থভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন।
Comments