ছুটির দিনে বর্ষা উদযাপনে করতে পারেন যেসব পরিকল্পনা

বর্ষা

হয় কাঠফাটা গরম, আর নয় ভ্যাপসা গুমোট ভাব আর বাতাসে আর্দ্রতার গুঞ্জন। এই বর্ষায় ঢাকার অবস্থা এমনই। কথা নেই, বার্তা নেই– এক পশলা বৃষ্টি এসে সময়ে অসময়ে ভিজিয়ে দিয়ে যাছে। মাঝে মাঝেই কয়েক ঘণ্টা ধরে চলছে ইলশেগুঁড়ি। কিন্তু ঢাকার এই মৌসুমের ছুটির দিনগুলোতে তাই বলে কি ঘরে বসে থাকবেন? মোটেই না।

শহুরে একঘেয়ে জীবনে এক থালা খিচুড়ির বাইরে গিয়েও বর্ষা উপভোগ করা জরুরি। তাই প্রতি সপ্তাহের টানা রুটিন থেকে একটুখানি বেরিয়ে এবারে অন্য কিছু ভাবুন। এমন কিছু, যাতে নতুন করে খুঁজে পাবেন নিজের ফেলে আসা স্বতস্ফূর্ততার হাতছানি।

এতে তো কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের শহুরে লোকদের জীবনে সামাজিক মাধ্যমের ট্রেন্ড অনেক বেশিই ভূমিকা পালন করে। অনেকের জন্যই কোথাও ঘুরতে যাওয়া মানে ইনস্টাগ্রামে দুটো ভালো ছবি দেওয়া। তবে আজকে ইনস্টাবান্ধব ছবির জায়গা নয়, বরং মন খুলে আনন্দ করার মতো মজার মজার কিছু কাজকর্মের কথা জানা যাক।

এই মেট্রোপলিসের নকশার খুব কাছেই, গ্রাম্য মেলায় সার্কাস দেখার কথা ভেবেই মনটা কেমন দুলে ওঠে না? কোনো এক শুক্রবার সকালে গাজীপুরের জয়দেবপুরে রথখোলার উদ্দেশে লং ড্রাইভ কিংবা ধামরাইয়ে ঢুঁ মেরে রথের মেলা দেখতে যাওয়া যায়। প্রভু জগন্নাথ (বিষ্ণুর অবতার) আর তাই ভাইবোনের একত্রে মাসির বাড়ি যাওয়ার সময়ে আপনিও নাহয় ঘুরে এলেন একটু দূর থেকে– প্রকৃতির কাছাকাছি, আনন্দের উদযাপনে।

বৈদিক মন্ত্র আওড়াতে আওড়াতে হেঁটে যাচ্ছে ভক্তের দল, কেউ শাঁখে ফুঁ দিয়ে জানান দিচ্ছে উৎসবের। স্থানীয় সার্কাস দল আর ভ্রাম্যমাণ চরকি, নাগরদোলা। রথের মেলার মেজাজটা একটু অন্যরকম ফুরফুরে। তবে এই দুই জায়গার মধ্যে ধামরাইয়ের রথ যাত্রার ইতিহাস ও ঐতিহ্য একেবারে ৪০০ বছরের গল্প বলে দেয়।

এক ঠোঙা পেঁয়াজি কিংবা নোনতা নিমকি, মুরালি হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পারেন মেলার বিভিন্ন স্টল, খাবারের ঠেলা। আর আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে ঐতিহ্যপ্রেমী হন, তাহলে টেরাকোটার কারুকাজ, বাঁশ ও বেতের কুটিরশিল্প, ঘর সাজানোর কাঠের জিনিসপাতি— যেমন জলপিঁড়ি, ক্যাশ বাক্স কিংবা আমাদের চিরচেনা শীতল পাটির পসরা দেখে মন মাতবেই।

এই মেলাগুলো একইসঙ্গে স্থানীয়, আদিবাসী ও শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মিলিত উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু। মাত্র ১০০০ টাকায় (আকার অনুযায়ী দামের তারতম্য হতে পারে) শীতল পাটি, বাঁশ বা বেতের তৈরি ধামা বা চাংড়ি পাওয়া যায়। একসময় যে পণ্যগুলো নিয়মিত জীবনের অংশ ছিল, আজ তা বিলুপ্তপ্রায়। এসব মেলায়ই তার সাক্ষাৎ মেলে বেশি। 

গ্রামীণ এই কারিগরির মধ্যে আছে পরিবেশবান্ধবতা, অকৃত্রিমতার ছোঁয়া এবং যন্ত্রের বাইরের এক মানবিক শিল্পের পরিচয়। শহর থেকে একটু দূরেই আয়োজিত এসব গ্রাম্য মেলায় গেলে নতুন করে অনুভব করা যায়, কেমন ছিল আমাদের শিল্পের ইতিহাস। চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত এই মেলাগুলো চলবে। তাই চটজলদি যাবার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলুন!

বৃষ্টিতে কাকভেজা না হলে কি আর বর্ষার আসল মজা পাওয়া যায়? শেষ কবে কোনো চিন্তা বাদ দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে নিজের গায়ে চাদরের মতো জড়িয়ে নিয়েছিলেন? শেষ কবে বর্ষার খাতায় নিজের ডাকনাম লিখে দিয়েছিলেন? বৃষ্টি মানেই ফিরতি পথে এক্কা দোক্কা খেলার মতো বৃষ্টিতে ভেজা, প্রিয়জনের সঙ্গে চা খাওয়া। রবীন্দ্রসঙ্গীত হোক বা পছন্দের বৃষ্টিসঙ্গীত, গানের মতোই বৃষ্টির সুরে মেতে উঠুন এই বর্ষায়।

চাইলে ছোটবেলায় আবার ফিরে যেতে বন্ধুদের নিয়ে আয়োজন করতে পারেন বৃষ্টি পার্টি। পছন্দের বৃষ্টির গানগুলো ছেড়ে দিয়ে ওয়াটার বেলুন, ওয়াটার গান আর ফুটবল নিয়ে নেমে পড়ুন ষোলআনা বর্ষাপালনে। আর সেইসঙ্গে চুলায় এক কেতলি মশলা দুধ চা আর পাড়ার মোড় থেকে গরমা-গরম সিঙারা আনতে ভুলবেন না যেন।

বৃষ্টি যেমন কোনো আগাম নিশানা ছাড়াই আমাদের দেখা দিয়ে যাচ্ছে আজকাল, সেইভাবে জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলোকেও ডেকে আনুন— ভেসে যান মুহূর্তের চাওয়ায়, বৃষ্টির কণায় কণায়।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

No scope to avoid fundamental reforms: Yunus

Conveys optimism commission will be able to formulate July charter within expected timeframe

3h ago