বরিশালের ভাসমান পেয়ারা বাগানে কেন যাবেন, কীভাবে যাবেন

'প্রাচ্যের ভেনিস' খ্যাত বরিশালের রূপকথার মতোন সৌন্দর্যে যোগ হয়েছে আরও এক নতুন নাম—ভাসমান পেয়ারা বাগান। বর্ষা এলে বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুরের কীর্তিপাশা খালজুড়ে গড়ে ওঠা ভাসমান এই বাগান হয়ে ওঠে বাংলার এক অপরূপ জলচিত্র, যা আপনি চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না।
বরিশাল সদর থেকে কিছুটা পথ অতিক্রম করলেই চোখের সামনে হাজির হয় সবুজের অপূর্ব সাম্রাজ্য। গাছের ডাল থেকে ঝুলে থাকা পাকা-আধাপাকা পেয়ারা, নিচে নৌকায় বসে আপনি, আর ওপরে ছায়াময় মেঘ— ভাবুন তো কেমন লাগবে?

ভিমরুলি পেয়ারা বাগান
জানা যায়, এই বাগানগুলো তৈরি হয়েছে শত শত বছর আগে। স্থানীয় কৃষকেরা জলাভূমিকে ব্যবহার করে এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন, যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে গাছগুলো পানির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। এই সময়টাতে ভূমি ডুবে যায়, কিন্তু পেয়ারা গাছেরা তখনো বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পানির ওপরে। চাষিরা তখন নৌকায় চড়ে চড়ে গাছের ডালে পৌঁছে পেয়ারা সংগ্রহ করেন। শুধু চাষ নয়, এ পেয়ারা বিক্রিও হয় পানির ওপর। আর এ কারণেই এটি ভাসমান পেয়ারার হাট নামেও পরিচিত। এটি বরিশালের এলাকার সবচেয়ে মুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান হিসেবেও পরিচিত।
এ বাগানে প্রায় প্রতিদিন ছোট-বড় শত শত নৌকা জমে ওঠে খালের মোহনায়। কারো নৌকায় পেয়ারা, কারো নৌকায় আমড়া, কারো নৌকায় সুপারি। পাইকাররা নৌকাতেই দরদাম করেন, লেনদেন হয় মাঝ খালে দাঁড়িয়ে।
আর বাগানের এসব চিত্রের কারণেই এটি অন্যতম এক ভ্রমণগন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানকার পেয়ারা খেতে হয় সরাসরি গাছ থেকে। পেয়ারায় নেই কোনো ফরমালিন, নেই ঠান্ডাঘরের স্বাদহীনতা।
পেয়ারা বাগানে যেভাবে যাবেন
এই পেয়ারা বাগানে প্রবেশ করতে হয় নৌকায়। ট্রলারেও যাওয়া যায়। তবে নৌকায় ভালো। পুরো খাল ঘুরে দেখাবে দাঁড়টানা নৌকায়। ভাড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তবে আগেই দরদাম করে নেওয়া ভালো। পরিচিত থাকলে কমেও পাবেন।
দুই-তিন জন হলে ছোট নৌকা ভাড়া করে আপনি ঢুকতে পারেন গাছের নিচে গড়ে ওঠা সরু খালের পথে। পথগুলো এত রোমাঞ্চকর যে গাছের পাতায় আপনার মাথা ছুঁয়ে যাবে। মুখের সামনে আসবে পাকা, পোক্ত ডাসা পেয়ারা। এই বাগানের মাঝপথে আছে ছোট ছোট দোকান। স্থানীয় হোটেল, টংঘর। মাঝে মাঝে চা বিরতির জন্য নেমে চা খেতে পারেন এসব ভাসমান দোকানেও।

বৌদির হোটেল
ঘুরতে ঘুরতে যদি ক্লান্ত হয়ে যান, দুপুরের সূর্য হেলে পরে মাথার ওপরে, আর পেটে যদি লাগে ক্ষুধা, তাহলে যেতে পারেন 'বৌদির হোটেল'-এ। এটিও খালের ওপর নির্মিত হোটেল। এখানে মিলবে গরম ভাত, পিয়াজু, নদীর দেশি মাছের আলু কলার তরকারি। বড়বড় চিংড়ির ভুনা আর আমড়ার টক আচার। খাবারের দাম একেবারে নাগালের মধ্যে।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ভ্রমণ করতে চাইলে আপনি বাস, লঞ্চ অথবা প্লেনেও যেতে পারেন। তবে আমার মতে সবচেয়ে ভালো ও উপভোগ্য উপায় হলো লঞ্চ ভ্রমণ।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বরিশালের উদ্দেশে লঞ্চ চলাচল করে। ডেক, কেবিন, এসি কেবিন, ফ্যামিলি কেবিনভেদে ভাড়া ৩০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া, ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বরিশালের বাস চলাচল করে। পদ্মাসেতু হয়ে বাসে বরিশাল যেতে অল্প সময় লাগে। এসি, নন-এসিভেদে এসব বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
এছাড়া দ্রুত বরিশাল যেতে চাইলে উড়োজাহাজে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে প্রতিদিন বরিশালের ফ্লাইট রয়েছে। ফ্লাইটে সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে আট হাজার টাকায় মাত্র আধাঘণ্টায় বরিশাল আসা যায়। তবে ফ্লাইটের সময় ও সিটের ধরন অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তন হতে পারে।
বরিশাল যে উপায়েই আসুন না কেন, সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় চলে যান কীর্তিপাশা ঘাট। সেখান থেকে ছোট ট্রলার বা ডিঙ্গি নৌকায় ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাবেন ভিমরুলির পেয়ারা বাগানে।

যেখানে থাকবেন
বরিশাল শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি ভালোমানের হোটেল রয়েছে। এরমধ্য হোটেল এরিনা, গ্রান্ড পার্ক, হোটেল রোদেলা, হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সেডোনা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শহরের আশেপাশে বেশকিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এগুলোতে থাকতে হলে এসি, নন-এসিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাভেদে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় থাকা যায়।

সতর্কতা
ভাসমান পেয়ারা বাগানে ঘুরতে গেলে অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন রেইনকোট ও ছাতা। আর সম্ভব হলে একটা ছোট ব্যাগে নিবেন পানি ও শুকনো খাবার। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—প্রকৃতিকে ভালোবাসুন। খালে প্লাস্টিক বা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
Comments