অ্যাকিউট অ্যানিমিয়ার লক্ষণ ও চিকিৎসা, প্রতিরোধে কী করবেন

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া
ছবি: সংগৃহীত

রক্তশূন্যতা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। অথচ রক্তশূন্যতাজনিত সমস্যা নিয়ে রয়েছে অসচেতনতা ও অবহেলা। অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া কী ও কেন হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান।

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া কী

অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলেন, প্রথমে আমাদের জানতে হবে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা কী। অ্যানিমিয়া হলো এমন একটি অবস্থা, যখন শরীরে সুস্থ লাল রক্তকণিকা (আরবিসি) বা হিমোগ্লোবিনের (এইচবি) পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।

লাল রক্তকণিকা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে। অ্যানিমিয়ার কারণে শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে পারে। ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হতে পারে। সময়ের ব্যবধানে এই অ্যানিমিয়াকে অ্যাকিউট ও ক্রনিক অ্যানিমিয়া এবং তীব্রতার ধরণ অনুযায়ী মাইল্ড, মডারেট ও সিভিয়ার অর্থাৎ হালকা, মাঝারি ও তীব্র রক্তশূন্যতা বলা হয়।

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া বা দ্রুত রক্তস্বল্পতা হলো লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের আকস্মিক এবং দ্রুত হ্রাস পাওয়া, অর্থাৎ স্বল্প সময়ের মধ্যে রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া। আবার যদি দীর্ঘ সময় ধরে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয় তবে তাকে ক্রনিক অ্যানিমিয়া বলে, যা প্রায়শই উল্লেখযোগ্য রক্তক্ষরণ বা লোহিত রক্তকণিকার দ্রুত ভেঙে যাওয়ার কারণে ঘটে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে, যা অবিলম্বে সমাধান না করা হলে অজ্ঞান (শক) হবার মত অবস্থা এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া কেন হয়

১. মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা ম্যাসিভ হেমোরেজ অ্যাকিউট অ্যানিমিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। যেমন- দুর্ঘটনাজনিত আঘাত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (পেটের মধ্যে) রক্তপাত বা গুরুতর আঘাতের মতো পরিস্থিতিতে যদি মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।

২. হিমোলাইসিস অর্থাৎ লোহিত রক্তকণিকার দ্রুত ভেঙে যাওয়া, যেমন-অটোইমিউন হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, জেনেটিক অবস্থা (যেমন-সিকেল সেল বা থ্যালাসেমিয়া রোগ), সংক্রমণ বা ওষুধের প্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে।

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি

১. হাইপোভোলেমিক শক (নিস্তেজ বা অজ্ঞান)।

২. টিস্যু এবং অঙ্গগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি, এমনকি যদি তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না করা হয় তবে মৃত্যু হতে পারে।

৩. ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং হৃদরোগের মতো বিদ্যমান অবস্থাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

লক্ষণ

১. ক্লান্তি ও দুর্বলতা, বুক ধরফর করা, মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্ট।

২. অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্যাকাশে বা হলুদাভ ত্বক, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ট্যাকিকার্ডিয়া ইত্যাদি।

৩. রক্তশূন্যতা দীর্ঘায়িত হলে নেক ক্ষেত্রে পালসেটাইল টিনিটাস অর্থাৎ কানে ঝনঝন বা হুশিং শব্দ হওয়া, পিকা অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বরফ, চাল, মাটি, বা স্টার্চের (পিকা) মতো অ-খাদ্য পদার্থের প্রতি আকাঙ্ক্ষা একটি লক্ষণ হতে পারে।

৪. নখ পাতলা ও ভঙ্গুর নখ হয়ে যেতে পারে।

৫. জিহ্বা লাল এবং ব্যথাযুক্ত দেখাতে পারে।

৬.  এমনকি বিভ্রান্তি (কনফিউসন) এবং ভুলে যাওয়ার (ডিমেনশিয়া) মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া নির্ণয়

অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলেন, হঠাৎ লোহিত রক্তকণিকা হ্রাসের ও তীব্রতার প্রধান কারণ মূলত রক্তপাত ও একিউট হেমোলাইসিস।

এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন শারীরিক পরিক্ষা করতে হয়। যেমন- রক্ত পরীক্ষা (সিবিসি, পিবিএফ, দেহে আয়রনের পরিমাণ, রেটিকুলোসাইট, এলডিএইচ ইত্যাদি)। এছাড়া রক্তপাতের উৎস শনাক্ত করার জন্য সম্ভাব্য ইমেজিং বা এন্ডোস্কোপিক পদ্ধতি, কুম্বস  পরীক্ষা, বিলিরুবিন, ইলেকট্রোপরেসিস ইত্যাদি পরীক্ষা অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া নির্ণয়ের জন্য সহায়ক।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় রক্তস্বল্পতার অন্তর্নিহিত কারণ মোকাবিলার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা, যার মধ্যে রয়েছে রক্ত সঞ্চালন, অক্সিজেন পরিপূরক এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণের মতো হস্তক্ষেপ। তীব্র রক্তক্ষরণজনিত রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে প্রাথমিক লক্ষ্য হলো রোগীকে স্থিতিশীল করা, আরও রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা এবং তরল এবং রক্তজাত দ্রব্যের মাধ্যমে রক্তের পরিমাণ পুনরুদ্ধার করা।

অ্যাকিউট অ্যানিমিয়া হওয়ার মূল কারণগুলো সমাধান করে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। খাদ্যতালিতায় আয়রন, ফোলেট এবং ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। অতিরিক্ত মাসিক রক্তপাত বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার মতো অবস্থার যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।

                       

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago