কিডনি ক্যানসার কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী

কিডনি ক্যানসার
ছবি: সংগৃহীত

কিডনি ক্যানসার সাধারণত উপসর্গহীন, যে কারণে রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাডভান্স স্টেজে শনাক্ত হয়। কিডনি ক্যানসার সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ।

কিডনি ক্যানসার কী

অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, আমাদের শরীর অসংখ্য সেল বা কোষ দিয়ে গঠিত, এর মধ্যে লোহিত কণিকা ও শ্বেত কণিকা অন্যতম। লোহিত কণিকা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে, আর শ্বেত কণিকা শরীরকে গঠন করে থাকে। শ্বেত কণিকার মধ্যে পলিমরফোনিউক্লিয়ার লিউকোসাইট, লিম্ফোসাইট, মনোসাইট, ইয়োসিনোফিল প্রধান।

লিম্ফোসাইট মানুষের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে, এর মধ্যে থেকে রোগ প্রতিরোধের জন্য ইমিউনোগ্লোবুলিন প্রধান, যেমন- IgG, IgM, IgA ইত্যাদি। কোনো কারণ ছাড়াই লিম্ফোসাইটের পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে গেলেই টিউমার বা ক্যানসার তৈরিতে সাহায্য করে।

প্রতিটি সেল বা কোষ ডিএনএ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। ডিএনএ একটি নির্দেশ মোতাবেক চলে, যখন এ নির্দেশে বিঘ্ন ঘটে এবং অতিরিক্ত সেল তৈরি করতে থাকে তখনই ক্যানসার ঘটে থাকে। কিডনি ক্যানসার ওই একই প্রক্রিয়ায় হয়। এরা এত বেশি অস্বাভাবিক সেল তৈরি করতে থাকে যে, স্বাভাবিক সেল আর কাজ করতে পারে না এবং স্বাভাবিক সেল দ্রুত মৃত্যুর দিকে চলে যেতে থাকে। এই ক্যানসার কোষগুলো দ্রুত এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে যায়, যাকে বলে ক্যানসার মেটাসটেসিস।

কিডনি ক্যানসার কেন হয়

কিডনি ক্যানসার কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে যার মাধ্যমে কিছুটা হলেও ধারণা করা যায়। যেমন-

১.  কিডনি ক্যানসার বয়স্কদের বেশি হয়।

২.  যারা ধূমপান করেন তাদের বেশি হয়।

৩.  যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

৪.  যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে

৫. যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে তাদের কিডনি ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।

৬.  বংশানুক্রমিকভাবেও এটা হতে পারে। বংশগত বা জিনগত কিছু রোগ, যেমন- ডুব সিন্ড্রোম, টিউবারাস স্ক্লেরোসিস, প্যাপিলারি রেনাল সেল কার্সিনোমা, ফ্যামিলিয়ার ক্যানসার, উইলমস টিউমার ইত্যাদি কিডনি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে কিডনি ক্যানসারে কত মানুষ ভুগে থাকে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। ফলে কোন ধরনের কিডনি ক্যানসার হয়ে থাকে তা সঠিকভাবে বলা যাবে না। তবে বেশিরভাগই কিডনি ক্যানসার রেনাল সেল কার্সিনোমা, যেটা ৪০ বছর বয়সের পর বেশি হয়। কিডনি ক্যানসার আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা বেশি নারীদের তুলনায়।

শিশুদের ক্ষেত্রে উইলমস টিউমার বাংলাদেশে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে বেশিভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাডভান্স স্টেজে কিডনি ক্যানসার ধরা পড়ে।

লক্ষণ

কিডনি ক্যানসারের সাধারণত কোনো উপসর্গ হয় না। তবে রোগীর মাঝে মাঝে প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, প্রস্রাব চা-কফি রঙের হওয়া, ক্ষুধামন্দা, কিডনির পেছনে ব্যথা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।

যে কোনো কারণে প্রস্রাবে রক্ত গেলে বিশেষ করে ৪০ বছরের ওপর যাদের বয়স তাদের সব ধরনের কিডনি পরীক্ষা করে কারণ নির্ণয় করতে হবে। যেমন- প্রস্রাব পরীক্ষা, কিডনি, ইউরিনারি ব্লাডার এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গের আল্ট্রাসোনোগ্রাম, কিডনির সিটিস্ক্যান, বুকের এক্স-রে এবং ক্ষেত্রবিশেষে এমআরআই এবং পেটের সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, ওষুধের মাধ্যমে এবং অস্ত্রোপচারের সাহায্যে কিডনি ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। ওষুধের মধ্যে রয়েছে Pembrolizemeb, Nurolumab, Ipillimurab, Ges Combination G রেডিয়েশন থেরাপি।

অস্ত্রোপচার করা হয় যখন ক্যানসার কিডনির ক্যাপসুলের ভেতরে অবস্থান করছে এবং অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েনি। সেক্ষেত্রে শুধু টিউমারটা অস্ত্রোপচার করে বের করে দেওয়া হয় কিন্তু টিউমার যদি কিডনির ক্যাপসুল থেকে বের হয়ে যায় যায়, তবে পুরো কিডনি ফেলে দেওয়া ভালো। আমরা জানি, বেঁচে থাকার জন্য মানুষের একটি কিডনিই যথেষ্ট, দুটো কিডনির প্রায়োজন হয় না।

তবে যদি কিডনি ক্যানসারের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগ থাকে তাহলে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

যেসব রোগী অ্যাডভান্সড কিডনি ক্যানসারে ভোগেন তাদের জন্য ইমিউনোথেরাপি ছাড়াও ইন্টারলিউকিন-২ ব্যবহার করা হয় অন্য এক জাতীয় কিডনি ক্যানসার হলে। এছাড়া টার্গেটেড থেরাপি VEGF Inhibitor রক্তনালিতে ক্যানসার ছড়িয়ে গেলে দিতে হয়। অন্যান্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে রেডিওথেরাপি, সাধারণত ব্যথা ও রক্তপাত বন্ধ করার জন্য।

ক্রায়োথেরাপি এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন করে টিউমার নির্মূল করা যায়।

কিডনি ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খ্যাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হবে, ধূমপান পরিহার করতে হবে, ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে, বিশেষ করে যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে।

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Patent waiver till Nov 2026: Local pharmas may miss window for 15 costly drugs

Bangladesh’s pharmaceutical companies risk losing the chance to produce at least 15 costly biologic drugs royalty-free

8h ago