সম্পর্কে পাসওয়ার্ড শেয়ারিং: হ্যাঁ নাকি না?

সম্পর্কে পাসওয়ার্ড শেয়ারিং
ছবি: সংগৃহীত

একটি দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখা সহজ নয়, এর জন্য সবচেয়ে বেশ প্রয়োজন হয় বিশ্বাসের। তবে আপনি কি বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে পাসওয়ার্ডের মত ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন?

'পাসওয়ার্ড শেয়ারিং' বিষয়টি নিয়ে অনেক রকম বিতর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম মতামত পাওয়া যায়।

৩৬ বছর বয়সী কামরান ৮ বছর ধরে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করি। আমার স্ত্রী ও আমি আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ফোনের পাসওয়ার্ডসহ সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানি। এটি মূলত নিরাপত্তার জন্য, যাতে জরুরি পরিস্থিতিতে এসব কাজে লাগে। তবে আমরা এগুলো নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাই না।'

তিনি বিশ্বাস করেন যে এই প্রজন্মে কেউই তাদের পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে চান না। তবে তিনি মনে করেন এই সিদ্ধান্তটিও ভুল নয়। 

কামরানের ব্যাখ্যা, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার এবং আপনার সঙ্গীর মধ্যে ভারসাম্য ও পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাসওয়ার্ড শেয়ার করার ব্যাপারটি খারাপ কিছু নয়। কখনো কখনো জরুরি পরিস্থিতিতে এটি কাজে লাগতে পারে। বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো কাছের ব্যক্তি আপনার গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড জানলে এতে সমস্যা নেই। তবে অপরজন সন্দেহ বা অতিরিক্ত কৌতূহলের বশে যদি পাসওয়ার্ড জানতে চান তাহলে তা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অন্যদিকে, অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে বিপরীত মনোভাব পোষণ করেন।

২১ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাসলিমা পাসওয়ার্ড শেয়ার করার ব্যাপারে একেবারেই একমত নন, বরং তিনি মনে করেন এটি সম্পর্কের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, 'পাসওয়ার্ড শেয়ারিং এক ধরনের ভয়ংকর ইঙ্গিত দেয় যে, আপনার সঙ্গী নিজের ওপর ও আপনার ওপর আত্মবিশ্বাসী নন।'

তার মতে, যারা পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে চান, তারা আসলে তাদের প্রিয়জনের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চান। এতে দুজনেই একে অপরের ওপর ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই অর্জিত হয় না।

কিছু ক্ষেত্রে এটি সত্যি হতে পারে। যেকোনো সম্পর্কে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য ভাগাভাগি করা এবং অতিরিক্ত অধিকারবোধ অনেক সময় দুইজনের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে, যা শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি আপনার মনে হয় সঙ্গীর ফোনের ওপর নজরদারি না করলে আপনি তাকে বিশ্বাস করতে পারবেন না তাহলে এখানে চিন্তার বিষয় রয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, আপনার সঙ্গীর নিজের ব্যক্তিগত জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে।

অনেকেই আবার দুটি দিকের সৌন্দর্যও দেখতে পান।

২৭ বছর বয়সী অহনা বলেন, 'আমি মনে করি না যে এটি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। তবে আমি আমার সঙ্গীর সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কারণ আমি মনে করি তার থেকে আমার লুকানোর কিছু নেই।'

পাসওয়ার্ড শেয়ারিং নির্ভর করে আপনি কতটুকু শেয়ার করছেন। তবে মাথায় রাখতে হবে যে এটি কখনো সম্পর্কের জন্য ভালো হতে পারে, আবার কখনো ব্যক্তিগত বিষয়ে অন্যের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ মনে হতে পারে।

সত্যি কথা বলতে, সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো 'সঠিক' উত্তর নেই। অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ের মতোই, পাসওয়ার্ড শেয়ারিংও বিশ্বাস ও আস্থার ওপর নির্ভরশীল। যদি গোপন কোড শেয়ার করা ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় না হয়, তবে সেটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সঙ্গীর সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের পিন জানা একটি বড় দায়িত্ব এবং এই বিশ্বাসের সুযোগ নেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। প্রিয়জনের ব্যক্তিগত জগতে প্রবেশের সুযোগ শুরুতে খুব আকর্ষণীয় মনে হলেও পরে এটি বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই পাসওয়ার্ড শেয়ারিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সম্পর্কের বিশ্বাসের মাত্রা মূল্যায়ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments

The Daily Star  | English

4 hurt in RU clashes

The confrontations took place in four separate incidents, spanning from last night and today

3h ago