আপনি ও আপনার সঙ্গী কি রুমমেট সিনড্রোমে ভুগছেন?

রুমমেট সিনড্রোম
ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই মজা করে বলেন, বিয়ের আট-দশ বছর পর স্বামী-স্ত্রী নাকি ভাইবোন হয়ে যায়। এটিকেই এক কথায় বলা যায় রুমমেট সিনড্রোম। দুই পক্ষের মধ্যকার আকর্ষণ যখন অন্যভাবে প্রকাশিত হয় এবং প্রতিদিনের আটপৌরে জীবনে একে অন্যের শুধুই রুমমেটের মতো আচরণ শুরু হয়, তাকেই সম্পর্কের অভিধানে নাম দেওয়া হয়েছে 'রুমমেট সিনড্রোম'।

প্রতিটি সম্পর্কের শুরুতে উভয় পক্ষই সময় কাটায় এক ধরনের ভালো লাগায়। তাদের মধ্যে থাকে নতুনকে আবিষ্কারের আনন্দ। কিন্তু একসঙ্গে একই ছাদের নিচে কাটানোর পর প্রতিনিয়ত এই নতুনত্বগুলো কমতে থাকে। একে অন্যকে অনেক বেশি জেনে ফেলার ফলে অনেক বিষয়ই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মধ্যে চলে আসে। তখন কোথাও একটা সেই আবেগের তাড়না কিংবা ঝড়ের মতো উড়ে আসা উত্তেজনার বুদবুদগুলো ফাটতে থাকে। রোমান্টিক সম্পর্কের স্ফুলিঙ্গটা আর আগের মতো ঝলকে ওঠে না, চমকে দেয় না দুটো মানুষের একজনকেও।

এর ফলে যে সবসময় বিষাক্ত বা তিতকুটে পরিবেশ সৃষ্টি হয়— তা নয়। অনেক সময় দুটো মানুষ একই ছাদের নিচে থেকেও এত বেশি নিজস্ব জগতে মশগুল থাকে যে তাদের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা বা দাম্পত্যের যে বিশেষ অনুভূতিগুলো থাকার কথা, সেগুলো কোথায় যেন কমতে থাকে। তারা অনেক বেশি বন্ধুসুলভ, অনেক বেশি অভ্যস্ত এবং অনেক বেশি খোলামেলা হয়ে পড়েন। এতে করে তাদের মধ্যকার আবেগীয় অনুভূতিগুলো নিয়ে সুতো টানা কিংবা খতিয়ে দেখার, বিশেষভাবে অন্তরঙ্গ হবার মতো বিষয়গুলো আর থাকে না।

এটা কি খারাপ?

আপনি এবং আপনার সঙ্গী দম্পতি বা প্রেমিক-প্রেমিকার চেয়েও অনেক বেশি বন্ধু। যারা একই ঘরে বাস করে এবং দায়-দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। এটি কোনো খারাপ বিষয় নয়, কিন্তু রুমমেট সিনড্রোমের নেতিবাচক প্রভাবটি তখন পড়ে– যখন এই যুগলের মধ্যকার দুজন ব্যক্তির জীবনযাত্রা একেবারেই আলাদা হয়ে পড়ে। তা কাজের তাগিদে হোক বা একে অন্যের থেকে আলাদা আগ্রহের জায়গার কারণে হোক, যদি জীবনের ভেনচিত্রে কোনো বিন্দুতেই নিজেদেরকে এক করা যায় না, শুধু বাসস্থান আর গৃহস্থালী কাজ ছাড়া— তবে তা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ তখন মানবিক, আবেগী বা শারীরিক কোনো আবেদনের দিক দিয়েই সঙ্গীকে আর জরুরি বলে মনে হবে না। আর যত কম দরকার মনে হবে, তত বেশি সম্পর্কে ফাটল ধরার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে। তাই একে অপরের বন্ধু হয়ে দিন কাটানো খারাপ নয়, কিন্তু সেই বন্ধুত্ব বা সম্পর্কের আরাম যেন সম্পর্কের পুরোটা না নিয়ে নেয়, বরং সমান পরিমাণে মুক্ত স্থান একে অন্যের প্রতি প্রেমের জন্য রাখে– সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

তাহলে সমাধান কী?

তাড়াহুড়ার এই জীবনে প্রায় সব দম্পতিরই কাজের জায়গা আলাদা, ব্যক্তিভেদে নিজস্ব আগ্রহের জায়গা আলাদা– কিন্তু এই আলাদা হওয়ার বিষয়টি যেন দুজন মানুষকে আলাদা না করে দিতে পারে, সেভাবেই ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। খুব ছোট ছোট বিষয়ে সঙ্গীকে মনে করিয়ে দিতে হবে, তাকে কতটা ভালোবাসেন। কখনো সে ভুলে গেলেও আপনি তার জন্য দুয়েক পা এগিয়ে গিয়ে নিজের মনের কথার প্রকাশ করুন। সে ঘুম থেকে ওঠার আগে আপনার অফিসে যেতে হবে? তাহলে তার মাথার পাশে একটা ছোট্ট চিরকুট রেখে যান, ঘুম ভেঙে উঠে আপনার সঙ্গীর মুখের প্রথম হাসির কারণ আপনিই হবেন।

মানুষ কখনো কখনো নিজের প্রতিও একঘেয়ে বোধ করে। একঘেয়েমি আমাদের জীবনের একটা বড় অংশ। একে একেবারে এড়ানো সম্ভব নয়। তাই বৈবাহিক জীবনেও একঘেয়েমি আসতেই পারে। কিন্তু যদি নিজেদের মধ্যে মনের গাঁটছড়াটা ভালোমতো বাঁধা থাকে, তাহলে একটু চেষ্টা করলেই সে একঘেয়েমি কাটানো সম্ভব।

তাই সুযোগ দিন, নিজেকে, আপনার সঙ্গীকে এবং সেইসঙ্গে আপনাদের সম্পর্কটাকেও। জীবন তো একটাই, তাতে বহু ধরনের স্বাদের অভিজ্ঞতা না নিয়ে শুধু একইভাবে– একই ছকে চলতে হবে, এমন কোনো দিব্যি কেউ কাউকে দেয়নি। তাই একসঙ্গে বাঁচুন, ইচ্ছেমতো।

 

Comments

The Daily Star  | English

How the US has shifted military jets and ships in the Middle East

As America’s national security leaders discuss the next steps, the Pentagon has moved to ensure that its troops and bases in the region are protected.

1h ago