হেঁটে বাংলাদেশ: সৈকত ধরে ইনানীর পথে

সৈকত
গোধূলির সৈকত। ছবি: বিনয় ভদ্র/আশানুর রহমান খান

দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ভোরে উঠে প্রস্তুত হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় আগের রাতে থেমে যাওয়া মেরিন ড্রাইভের জায়গায় পৌঁছাই। মেরিন ড্রাইভকে ডানে রেখে সাগর সৈকতে নেমে পড়ি।

সূর্যের তেজ বাড়ার আগেই দ্রুত এগোতে থাকি। তখনও সৈকতের কোথাও কারও দেখা পাইনি।

প্রায় ৪ কিলোমিটার হাঁটার পর আবার মেরিন ড্রাইভে উঠি সকালের নাস্তার জন্য। রাস্তার পাশে হাজাম পাড়ায় একটি দোকানে যাই। কেক-কলা-বিস্কুট-ডাব খাই। দোকানে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের জটলা দেখতে পাই।

আমাদের 'এক্সপেডিশনের' কথা জানালে তারা বেশ অবাক হন। তাদের কাছে জানতে চাই বন্য হাতির বিষয়ে। তারা জানান, কয়েকদিন আগেও হাতির একটি ছোট পাল পাহাড় থেকে ভেতরের গ্রামে নেমেছিল।

ঝাউবন
ঝাউবনে জেলেদের থাকার ঘর। ছবি: বিনয় ভদ্র/আশানুর রহমান খান

আমরা তাদের বলি যেন হাতি এলে তীর দিয়ে আঘাত করে তাড়িয়ে দেওয়া না হয়। পাহাড়ে হাতির খাবারের সংকট হলে লোকালয়ে আসে। পাহাড়ে গিয়ে যেন হাতির খাবারের উপযোগী কলাগাছ, ঘাস ইত্যাদি নষ্ট না করা হয়, আমরা তার অনুরোধ জানাই।

ওই দোকানের সামনে অসুস্থ একটি কুকুর দেখতে পাই। জিজ্ঞেস করে জানলাম, দোকানদার রফিকুল আলমের পালিত কুকুর ছিল সেটি। টিউমারে আক্রান্ত ছিল কুকুরটি।

দোকানদারকে ৫০০ টাকা দিয়ে বলি কুকুরটিকে তারা যেন টেকনাফের ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে যান। আমাদের ফোন নম্বরও দিয়ে বললাম আপডেট জানাতে। অন্য  কোনো সহায়তা লাগলে জানাতে বলি।

আবারও সৈকত ধরে নেমে পড়ি। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া নৌকাগুলো ফিরতে শুরু করেছে। বিচের বিভিন্ন অংশ বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। জেলেদের বলি, মাছ ছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী জালে আটকা পড়লে যেন সেগুলো তারা ছেড়ে দেন। বিনা কারণে যেন মেরে না ফেলা হয়।

আকাশে মেঘ কম থাকায়, রোদ খুব কড়া লাগছিল। বিচে ঝাউবন পেলে সেই ট্রেইল ধরে হাঁটতে থাকি। মাঝে মাঝে কিছু গাছ কাটা দেখতে পাই।

ঝাউগাছ
কেটে ফেলা ঝাউ গাছের গোড়া। ছবি: বিনয় ভদ্র/আশানুর রহমান খান

ঝাউবনে জেলেদের থাকার অনেক ঘর আছে। কয়েকটি ঘরের পাশে বেশ কিছু ঝাউগাছ দেখতে পাই। গাছগুলো যে ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা করে তা স্বীকার করলেন তারা।

পাহাড় থেকে সৈকত দিয়ে ঝিরি নেমে আসায় আবার মেরিন ড্রাইভে ফিরে আসি। কড়া রোদে হাঁটতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। রাস্তার দুই পাশে তেমন গাছ ছিল না।

তীব্র রোদে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। রাস্তার আশপাশে বাড়িঘর না থাকায় সামনে এগুতে থাকি। সবুজ টিনওয়ালা কয়েকটি ঘর চোখে পড়ে। ধান খেতের আইল ধরে সেদিকে যাই।

বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালি গ্রাম। যে বাড়িতে গিয়ে উঠলাম, সেটি মধ্যবয়সী নুরুল হুদার। তাকে 'চাচা' সম্বোধন করে বাজারের জন্য কিছু টাকা দিয়ে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে বলি। 

৩ দিন ধরে টানা রেস্তোরাঁর খাবার খেতে হচ্ছিল। এবার ঘরে রান্না করা খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।

ওই বাড়ির উঠানে একটি গাছে হ্যামক ঝুলিয়ে শুয়ে পড়ি। 

অন্যদিকে গত ২ দিনের আস্তানা টেকনাফের ওই রিসোর্ট থেকে কাব্য ও হাবিব চেক আউট করে। তারা আমাদের ব্যাগপত্র নিয়ে চলে আসে। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে আবার রওনা হই।

কাব্যদের বললাম, ব্যাগ নিয়ে ইনানী চলে যেতে। আমরা যতদূর পারি এগুচ্ছি।

সৈকতে ভোরের আকাশ। ছবি: বিনয় ভদ্র/আশানুর রহমান খান

আমরা একজন সৈকত ধরে ও অপরজন রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকি। ভাটা থাকায় ঢেউ অনেক নিচে নেমে গেছে। সদ্য পানি নেমে গেছে বলে সেখান দিয়ে হাঁটতে একটু আরাম বোধ হচ্ছিল। 

সৈকতের বিভিন্ন অংশে কিশোরদের ফুটবল খেলতে দেখা গেল। আকাশে রোদ না থাকায় আমরা বেশ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছিলাম।

সৈকতে কিছুদূর পরপর ঝিরি বা খাল এসে পড়ায় আটকে যেতে হয়। খালটা যথেষ্ট প্যাঁচানো ছিল। এর কারণে অতিরিক্ত আড়াই কিলোমিটারের মতো হাঁটতে হয়েছে। শুকনো জায়গা দিয়ে যেতে চাইলে আরও ২ কিলোমিটারের মতো হাঁটতে হতো। 

তাই জুতা খুলে খাল পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আঁকাবাঁকা খালটা বেশ ভুগিয়েছে। খাল পার হয়ে আবার সড়কে উঠে পড়ি।

বিকেলের 'ইনিংসে' হাঁটা হয় ১৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সারাদিনে ৩০ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেখান থেকে গাড়িতে ইনানী রওনা দেই রাতে থাকার জন্য।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

9h ago