বিশ্বের ২০ পরিত্যক্ত অথচ আকর্ষণীয় স্থান

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতাটির মতোই কোলাহলমুখর থাকা অনেক শহর কিংবা জনপদ একসময় হয়ে পড়েছে পরিত্যক্ত। তবে রেখে গেছে তাদের নিজস্ব চিহ্ন।
বিশ্বের ২০ পরিত্যক্ত অথচ আকর্ষণীয় স্থান
বেলচাইট, স্পেন। ছবি: রয়টার্স

'আজ সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি/ এমন ছিল না আষাঢ় শেষের বেলা

উদ্যানে ছিল বরষা পীড়িত ফুল- আনন্দভৈরবী।'

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতাটির মতোই কোলাহলমুখর থাকা অনেক শহর কিংবা জনপদ একসময় হয়ে পড়েছে পরিত্যক্ত। তবে রেখে গেছে তাদের নিজস্ব চিহ্ন।

চলুন জেনে নেই বিশ্বের পরিত্যক্ত অথচ আকর্ষণীয় ২০টি স্থান।

ওরাদ্যুর-সুর-গ্লেন, ফ্রান্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই পরিত্যক্ত গ্রামটি। ১৯৪৪ সালের ১০ জুন পর্যন্ত গ্রামটিতে কারো আঁচড় পড়েনি। পরবর্তীতে নাজি পার্টির সামরিক বাহিনী ওয়াফেন এস এস গ্রামটিতে আক্রমণ করে। গ্রামের পুরুষদের সারি বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। নারী ও শিশুরা গির্জায় আশ্রয় নেওয়ায় তা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধের অন্যতম নেতা চার্লস ডি গল সিদ্ধান্ত নেন, এটিকে নাজি বাহিনীর নৃশংসতার একটি নিদর্শন হিসেবে রেখে দেওয়ার। ১৯৯৯ সালে একটি স্মারক জাদুঘরসহ এর কাছে নতুন একটি গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে।

ওরাদ্যুর-সুর-গ্লেন, ফ্রান্স। ছবি: রয়টার্স

ওয়ার‍্যাম পারসি, যুক্তরাজ্য

একসময় এখানে ছিল ২টি ম্যানর হাউস ও একটি গির্জা। মধ্যযুগের এই গ্রামটির অবস্থান ইয়র্কশায়ারের উপকণ্ঠে। ভেড়া পালনের সুবিধার্থে এখানকার গ্রামের মানুষ অন্যত্র চলে যেতে শুরু করায় গ্রামটি ১৫০০ সালের পর থেকে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। অভিজাত পারসি পরিবারের সেই বাড়ি ২টির অবশেষ রয়ে গেছে আজও৷ গির্জাটি আছে তুলনামূলক ভালো অবস্থায়৷ ইংলিশ হেরিটেজ নামে একটি সংস্থা বর্তমানে এর রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

ওয়ার‍্যাম পারসি, যুক্তরাজ্য। ছবি: ইংলিশ হ্যারিটেজ

বেলচাইট, স্পেন

স্পেনের গৃহযুদ্ধকালীন সময় ১৯৩৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর জুড়ে চলা যুদ্ধের কেন্দ্রস্থল ছিল বেলচাইট। ১৯৩৯ সালে জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর বাহিনী এটির পতন ঘটায়। বর্তমানে বেলচাইট দেখতে স্পেনের উত্তর-পূর্বের গ্রাম জারাগোজা থেকে একদিনের ভ্রমণে অনেকেই আসেন। ১৯৩৯ সালের পর এর কাছাকাছি নতুন গ্রামও গড়ে তোলা হয়েছে।

ক্রাকো, ইতালি

ইতালির দক্ষিণের একেবারে শেষ প্রান্তে এই শহরের অবস্থান। চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর এই শহরটি সুয়েজ ও পানির লাইন সংক্রান্ত কাজের জন্য কয়েকবার ভূমিধ্বসের শিকার হয়৷ গত শতাব্দীর ষাট দশক থেকে অধিবাসীরা শহরটি ত্যাগ করতে কেন। ১৯৮০ সালে ইরিপিনিস ভূমিকম্পের পর শহরটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। এখন এটি সিনেমার শুটিং ও পর্যটন কেন্দ্র। জেমস বন্ড সিরিজের 'কোয়ান্টাম অব সোলেস' এর শুটিং হয়েছিল এখানে।

ক্রাকো, ইতালি। ছবি: ফ্যান্টাসমা

কোলমানস্কপ, নামিবিয়া

নামিবিয়ার মরু অঞ্চলের একসময়ের জমজমাট এই শহরটির বহু ভবন এখন ধুলোয় মিশে গেছে। ১৯০৮ সালে স্থানীয় শ্রমিক জাকারিয়াস লেভালা এখানে হীরা পাওয়ার পর শহর গড়ে ওঠে। এরপর জার্মানি থেকে আগত স্বর্ণসন্ধানীদের দৃষ্টি পড়ে এর ওপর। ১৯৫৬ সালে পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া এই মরুশহরে জার্মান ধরনে নির্মিত বলরুম, ক্যাসিনো এমনকি ট্রাম চলাচলের ব্যবস্থাও ছিল।

হাশিমা দ্বীপপুঞ্জ, জাপান

নাগাসাকির উপকূলে অবস্থিত এই দ্বীপটিকে বলা হতো 'ব্যাটলশিপ আইল্যান্ড'। ১৮৮৭ সাল থেকে ১৯৭৪ সালের ভেতর এখানে ছিল সমুদ্র তলদেশ থেকে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা। কয়লার চাহিদা ফুরোনোর সঙ্গে সঙ্গে এর গুরুত্বও কমে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এর নাম। এখানে ছিল একটি লেবার ক্যাম্প। হাজারেরও বেশি কোরীয় ও চীনা যুদ্ধবন্দী শাস্তি পেয়েছেন এখানে।

গ্রান্ড-বাসাম, আইভরি কোস্ট

এখানে এখনো লোকবসতি কম নয়। তবে অনেক পুরনো ভবন এখন একেবারেই জনশূন্য। উপনিবেশে পরিণত হবার অনেক আগে ষোল শতকে এখানে অ্যাপোলোনিয়ানরা বসতি গড়ে তোলে। ছিল জমজমাট বন্দর, চমৎকার মাছ চাষ হতো এখানে। একসময়ের ফরাসি উপনিবেশের রাজধানীতে পরিণত হওয়া এই শহরের পুরনো পোস্ট অফিস, কেন্দ্রীয় আফ্রিকান ব্যাংক ও দি হোটেল দে ফ্রান্স এখন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।

বোডিই, ক্যালিফোর্নিয়া

উনিশ শতকের শেষদিক থেকে এই শহরটি গড়ে উঠতে থাকে। স্বর্ণের খোঁজে তখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুড়ে আসছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। 'ওয়াইল্ড ওয়েস্ট' বা বুনো পশ্চিমের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রতীক বোধহয় এই শহরটি। নেভাডা সীমান্তের নিকটবর্তী এই শহরে ৬৫টি স্যালুন, একটি ওয়েলস ফারগো ব্যাংক, এমনকি 'তাও মন্দির' সমেত একটি চায়নাটাউনও ছিল। তবে ১৯২০ সালের ভেতরই স্বর্ণসন্ধানীদের মোহভঙ্গ হওয়ায় এর জনসংখ্যা নেমে আসে ১২০ জনে।

টাইনেহ্যাম, যুক্তরাজ্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ যুদ্ধকেন্দ্রর এক নির্বাহী নির্দেশে লোকজনকে গ্রাম ছাড়তে বলা হয়। ডি-ডে এর রান-আপের জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণার্থে গ্রামটিকে ব্যবহার করা শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্য সরকার গ্রামটি কিনে নেয়৷ বর্তমানে এটি ইংল্যান্ডের এ অঞ্চলে সেনাবাহিনীর অস্ত্রচালনা ও গুলির প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাপ্তাহিক ও জাতীয় ছুটির দিনগুলোয় দর্শনার্থীরা আসতে পারেন।

পিরামিডেন, নরওয়ে

আর্কটিক সার্কেলের অনেক উপরে অবস্থিত এই জায়গাটি একসময় ছিল চমৎকার এক কয়লাখনি। ১৯২৭ সালে সুইডেন এটিকে সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করলে কমিউনিস্ট জমানায় চমৎকার আবাস ও হেলিপোর্ট গড়ে ওঠে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখানে কয়লা উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে এটি এখন একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র।

প্রিপিয়াট, ইউক্রেন

১৯৭০ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের কাছে নির্মাণ শ্রমিকরা এটি খুঁজে পান। পরে এটিকে 'শহর' ঘোষণা করা হয়। চেরনোবিলে বিস্ফোরণের পর প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে ১৯৮৬ সালের ২৭ এপ্রিল এখানে পুনর্বাসিত করা হয়। এখানে এখনো রয়েছে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি। তা সত্ত্বেও পর্যটকেরা ঘুরতে যান।

আর্লতুঙ্গা, অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রে রুক্ষ মরুতে গড়া প্রথম শহর এটি৷ এর আছে ২০ হাজার বছরের আদি ইতিহাস। বর্তমানের পরিত্যক্ত নগরটি অবশ্য ১৮৮৭ সালে ইউরোপিয়ান অভিবাসীরা নির্মাণ করেছিলেন। তারা এসেছিলেন স্বর্ণের সন্ধানে। তখন জনসংখ্যা ছিল ৩০০ জন। এপ্রিল-সেপ্টেম্বরের মাঝে এর পুরাকীর্তি ও ভালোভাবে সংরক্ষিত খনির নিদর্শনগুলো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন।

ব্যাংকহেড, কানাডা

কানাডার রকি পর্বতমালার ব্যানফ ন্যাশনাল পার্কের সঙ্গে অবস্থিত এটি। এটি ছিল প্রায় ১০০০ লোকের সমন্বয়ে গঠিত এক কয়লা খনির শহর। ক্রমে বাড়তে থাকা মজুরি বৈষম্যের ফলে ১৯২২ সালে এখানে বড় শ্রমিক ধর্মঘট হয়। ফলে খনিটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনো ঘিরে থাকা পাহাড় ও চমৎকার 'হাইকিং ট্রেইল' আকর্ষণ করছে পর্যটকদের।

রুবি, অ্যারিজোনা

মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী আমেরিকান এই শহরটি গত শতকের ত্রিশের দশকে খনি শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ এখানে সোনা, রূপা, সীসা ও দস্তার মতো খনিজ উপাদান আহরণের কাজ করতেন। ১৯৪০ সালে খনিজ উত্তোলন বন্ধ হওয়ার একবছরের মাথায় এটি জনশূন্য ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে ব্যক্তিমালিকানাধীন এই পর্যটন কেন্দ্রে ১৫ ডলারের বিনিময়ে পর্যটকেরা দেখতে পারেন সে সময়ের পরিত্যক্ত খনি, স্কুল ও জেলখানা।

কায়াকোয়, তুরস্ক

বর্তমানে জাদুঘরে পরিণত করা এই গ্রামটি পেয়েছে ইউনেস্কোর 'বিশ্ব বন্ধুত্ব ও শান্তিপূর্ণ গ্রাম' এর স্বীকৃতি। তুরস্কের দক্ষিণ পশ্চিমের এই শান্তিময় গ্রামটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ছারখার হয়ে যায়। গ্রীস ও তুরস্কের লড়াইয়ের যাঁতাকলে পড়ে এখানকার মানুষ নিরাপত্তার জন্য গ্রাম ছেড়ে চিরতরে চলে যায়। তারা আর কখনোই এই গ্রামে ফিরতে পারেননি।

ভরকুটা, রাশিয়া

রাশিয়ার রুক্ষ উত্তর আর্কটিক অঞ্চলবর্তী ভরকুটাকে ঘিরে আছে পরিত্যক্ত শহরতলি ও গ্রাম। গুলাগে পাঠানো বন্দীদের দিয়ে গত শতকের ত্রিশ থেকে ষাটের দশকে এখানে কয়লা খনন ও উত্তোলন করানো হতো। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের এখান থেকে সরিয়ে উচ্চ বেতনে অন্যান্য জায়গায় কাজে পাঠানো হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর এখানে থাকা বন্দীরাও চলে যান অন্যান্য জায়গায়৷ কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়, পড়ে থাকে শূন্য সব ঘরবাড়ি। প্রতি শীতে সেগুলো ঢেকে যায় বরফের চাদরে।

ভারোশা, সাইপ্রাস

সাইপ্রাসের শহর ফামাগুস্তার এই এলাকাটি একসময় ছিল হাজারো মানুষের পদচারণায় কোলাহলমুখর এক পর্যটন কেন্দ্র। ১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে তুরস্ক আক্রমণ করলে ভারোশা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। তখন থেকে এই রিসোর্টের মতো শহরটির ভবনগুলো নিঃস্ব হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ক্ষয় হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটিকে আবার পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে সমুদ্র সৈকতে আবারো পর্যটন সুবিধা চালু হয়েছে, এমনকি অনুমতি রয়েছে তুরস্কেরও!

হাম্পি, ভারত

১৪ কিংবা ১৫ শতকে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল ভারতের হাম্পি। সারা পৃথিবী থেকে এখানে জ্ঞানার্জন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মানুষ আসতেন। বিজয়নগরী সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এটি। ১৬ শতাব্দীতে গজনীর সুলতান মাহমুদের সেনাদের আক্রমণে এটি ধ্বংস হয়। এতে থাকা দুর্গ, মন্দির ও বাজারের ধ্বংসাবশেষ ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কোর কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়।

হৌতৌওয়ান, চীন

সাংহাইয়ের কাছে, শেংশ্যান দ্বীপপুঞ্জে ছিল এই গ্রামটি। একসময় ২ হাজার জনের বেশি লোক এই গ্রামে বাস করতেন। ১৯৯০ সালের পর গ্রামটি ছেড়ে মানুষ চলে যেতে শুরু করে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় খাবার সংগ্রহ ও যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমানে পাহাড়ের ওপরে থাকা বাড়িগুলোকে সবুজের সমারোহে ক্যামোফ্ল্যাজ করা হয়েছে। যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

ইপেকিউয়েন, আর্জেন্টিনা

ল্যাগুনা ইপেকিউয়েন এর তীরে গত শতাব্দীর বিশের দশকে গড়ে ওঠে আধুনিক পর্যটন সুবিধাসম্পন্ন এই নগরীটি। রাজধানী শহর বুয়েন্স এইরেস থেকে অনেকে স্বল্প সময়ের ছুটি কাটাতে এখানে আসতেন। এর লোনা ধরণের চমৎকার নীলাভ পানি ছিল পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

১৯৮৫ সালে 'সেইকি' নামে খুব দুর্লভ অথচ শক্তিশালী এক সামুদ্রিক ঝড়ে পুরো এলাকায়  মহাজলোচ্ছ্বাস হয়! ২ যুগের প্রচেষ্টার পর ২০০৯ সালে এসে পানি নামানো সম্ভব হয়। লবণভর্তি হয়ে ভবনগুলো রয়ে যায় পরিত্যক্ত অবস্থায়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

1d ago