ভ্রমণের জন্য ক্যারিবিয়ান সাগরের সেরা ৯ দ্বীপ

কেইকোসের মাডজিন হারবার সৈকত বিশ্বের সেরা বালুচরগুলোর একটি। সৈকতের অদূরে বিশাল আকারের পাথরগুলোতে আছড়ে পড়ে সাগরের ঢেউ। এসব কারণে দ্বীপটি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অন্যতম আদর্শ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ক্যারিবিয়ান সাগরের স্বচ্ছ পানিতে শত শত দ্বীপ আছে। ভ্রমণের জন্য কোনো একটি দ্বীপকে বাছাই করা সহজ নয়। প্রতিটি দ্বীপেরই আছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।

ডমিনিকা: প্রকৃতির সৌন্দর্য

আগ্নেয়গিরির সবুজ চূড়া আর গভীর উপত্যকার ২৯০ বর্গমাইল আয়তনের এই দ্বীপে আছে ৩৬৫টি নদী। নদীগুলো বৈচিত্র্যও অবাক করার মতো। ডোমিনিকার নদীর স্বচ্ছ, ঠান্ডা পানিতে গোসল, কায়াকিংসহ বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কার্যকলাপের দারুণ সুযোগ আছে। ডমিনিকা দ্বীপে বেশ কিছু বিলাসবহুল রিসোর্ট আছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এটিকে 'ন্যাচার আইল্যান্ড' বা প্রাকৃতিক দ্বীপ নামে ডাকা হয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটন্ত লেক এই দ্বীপে অবস্থিত। জিও-থার্মাল কারণে এই লেকের পানি ভীষণ গরম।

ইউনেস্কো-ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ মর্ন ট্রি পয়েন্টস জাতীয় উদ্যানের ভেতরে অবস্থিত এমারাল্ড পুলের স্বচ্ছ ও সবুজ পানিতে সাঁতার কেটে নিজেকে চাঙ্গা করে নিতে পারবেন। এই পুলের পানির আসে জলপ্রপ্রাত থেকে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে সহজলভ্য জলপ্রপাত।

এখানে আছে বিশ্বমানের ডাইভিং ও স্নোরকেলিং এর ব্যবস্থা। দ্বীপের জীববৈচিত্র সম্পর্কে জানার জন্য গাইডসহ নদীতে ভ্রমণের ব্যবস্থাও আছে।

উত্তর ও মধ্য কেইকোস: ক্যারিবিয়ানের মৌলিক সৌন্দর্য

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আকাশপথে আসা পর্যটকরা প্রথমে টার্কস অ্যান্ড কেইকোস আইল্যান্ডে এসে নামেন। এরপর কেইকোস দীপপুঞ্জের প্রভিডেন্সিয়ালেস দ্বীপ থেকে ফেরিতে করে উত্তর ও মধ্য কেইকোস আইল্যান্ডে যেতে হয়। এই দ্বীপগুলোতে ঝাঁ চকচকে রিসোর্ট নেই। বরং দ্বীপের গ্রাম্য জীবন দেখা যাবে উত্তর ও মধ্য কেইকোসে। 

মধ্য কেইকোসের মাডজিন হারবার সৈকত বিশ্বের সেরা বালুচরগুলোর একটি। সৈকতের অদূরে বিশাল আকারের পাথরগুলোতে আছড়ে পড়ে সাগরের ঢেউ। এসব কারণে দ্বীপটি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অন্যতম আদর্শ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ছোট ছোট ঢেউয়ের কারণে মধ্য কেইকোসের বামবারা সৈকত সাঁতার কাটার জন্য উপযুক্ত।

দ্বীপের ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহীরা উত্তর কেইকোসের আমেরিকান রেভ্যুলশনারি ওয়ারের স্মৃতি সমৃদ্ধ ওয়েড'স গ্রীন প্ল্যান্টেশনে ঘুরে আসতে পারেন। শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশের জন্য পর্যটকেরা এখানে আসেন। এখানে খুব অল্পসংখ্যক রেস্টুরেন্ট, বার, হোটেল ও কটেজ আছে।

কুরাসাও: শহুরে জীবন

ভেনেজুয়েলা থেকে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত কুরাসাও দ্বীপটি ক্যারিবিয়ানের অন্যতম প্রাণবন্ত শহুর কেন্দ্র।

দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত এই দ্বীপটি সপ্তদশ শতকে ডাচরা দখল করে নেয়। একসময় দ্বীপটি ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে পরিচিত ছিল। কুরাসাওয়ের রাজধানী উইলেমস্টাডে তাই স্বাভাবিকভাবেই ডাচ স্থাপত্যকলার নিদর্শনের দেখা পাওয়া যাবে। ফলে শহরটি আপনাকে একটি ইউরো-ক্যারিবীয় অভিজ্ঞতা দেবে।

স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পর্যটকরা দ্বীপের পিয়েটেরমাই এলাকায় ট্রেন্ডি রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেগুলোতে ভীড় করেন। 

উইলেমস্টাড ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। শহরটিতে বেশ কিছু জাদুঘরও আছে। এখানার স্ট্রিট আর্ট সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। আমেরিকা অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন সিনাগগ মিখভা ইজরায়েল-এমানুয়েল সিনাগগ এখানেই অবস্থিত।

সাবা: আকাশ পথের রোমাঞ্চ

মাত্র ৫ বর্গমাইল আয়তনের দ্বীপটি একটি ডাচ ক্যারিবীয় দ্বীপ। পাশ্ববর্তী দ্বীপ সেন্ট মার্টেন থেকে ছোট বিমানে করে কিংবা ফেরিতে করে দ্বীপটিতে যাওয়া যায়। 

বিমানে করে দ্বীপটিতে যাওয়াটা খুবই রোমাঞ্চকর। সাবায় মাত্র ১৩০০ ফুট লম্বা একটি রানওয়ে আছে। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বাণিজ্যিক রানওয়ে বলা হয়।

দ্বীপটিতে ঘন ও দুর্গম বনাঞ্চলের সঙ্গে আছে মাউন্ট সিনারি নামের আগ্নেয় শিলাচূড়া, যেখানে হাইকিং করা যায়। প্রায় অপরিচিত এই দ্বীপে ডাইভিং আরেকটি আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ।

অ্যান্টিগা: বৈচিত্রময় সৈকত

দাবি করা হয় অ্যান্টগায় ৩৬৫টি সৈকত আছে- অর্থাৎ বছরের প্রতিটি দিনের জন্য একটি করে সৈকত! সৈকতপ্রেমীদের জন্য তাই এটি একটি আদর্শ স্থান। বৈচিত্রময় সৈকতের জন্য বিশ্বব্যাপী এই দ্বীপটির পরিচিতি আছে। এজন্যই ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিলাসবহুল ক্রুজ শিপগুলো মাঝেমাঝেই এই দ্বীপে নোঙর ফেলে। 

সাদা বালুচরের ডিকিনসন বে-তে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখতে যান পর্যটকরা। পানিতে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজনও আছে এই সৈকতে। নির্জনতা ও গোলাপি বালুকার দেখা পেতে হাফ মুন বে-তে যান অনেকে। 

রাজধানী সেন্ট জোনসের বাজারে দ্বীপের স্বতন্ত্র অ্যান্টিগা ব্ল্যাক আনারসসহ অন্যান্য ফলমূল বিক্রি হয়।

দ্বীপের অধিবাসীদের রুচির পরিচয় মেলে এখানকার রাস্তার ধারের দোকানগুলোতে। এসব দোকানে রুটি, তরকারি থেকে শুরু করে কাবাবও পাওয়া যায়।

বার্বাডোস: মুখরোচক রান্না ও রাম

দীর্ঘকাল ধরে বার্বাডোসের অর্থনীতির প্রধান উপাদান ছিল আখ। বর্তমানে পর্যটন শিল্প সেই স্থান দখল করে নিলেও এখনো দ্বীপটিতে গেলে আখ নির্ভর রাম সংস্কৃতির চিত্র সহজেই চোখে পড়বে।

মাউন্ট গে রাম এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত রাম। সেই ১৭০৩ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি রাম উৎপাদন করে যাচ্ছে। ইতিহাস বলে, বার্বাডোসে রামের ইতিহাস শুরু হয়েছে তারও আগে। দ্বীপে অসংখ্য দোকানে রাম পাওয়া যায়। পর্যটকেরা রামের ডিস্টিলারিতে (কারখানা) ঘুরতে যেতে পারেন।

দ্বীপটি বার্বাডিয়ান বা বাজান কুইজিনের জন্য বিখ্যাত। এটি আফ্রিকান, ভারতীয়, আইরিশ এবং ব্রিটিশ খাবার ও উপাদানের সংমিশ্রনে তৈরি ডিশ।

ফ্লায়িং ফিশের সঙ্গে কোকু হচ্ছে দ্বীপের জাতীয় ডিশ। সৈকতের পাশে ডাইনিংয়ের জন্য আকর্ষণীয় রেস্টুরেন্টের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত। এসব রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে খাবার উপভোগ করতে পারবেন। 

সেন্ট বার্টস: বিলাসিতা

দ্বীপটির আসল নাম সেন্ট বার্থেলেমি হলেও এটি সংক্ষেপে সেন্ট বার্টস নামে পরিচিত। বিলাসিতাপ্রেমী ধনী পর্যটকদের জন্য এটি আদর্শ জায়গা।

সংস্কারের পর ২০২১ সালে পুনরায় চালু হওয়া রোজউড ল্য গুয়ানাহানি সেন্ট বার্থ থেকে অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এখানকার হলুদ, নীল ও বেগুনী রঙের ভবনগুলোর এ সৌন্দর্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে ‍তুলেছে।

ঐতিহাসিক ইডেন রক রিসোর্টে এখনো গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের ছোঁয়া পাওয়া যায়। তবে এর সঙ্গে আধুনিক সুযোগ সুবিধা যোগ হওয়ায় এটি সহজেই তারকাদের আকৃষ্ট করতে পারে। রিসোর্টের রান্নার দায়িত্ব বিখ্যাত ফরাসী শেফ জন-জর্জস ভনরিশটেনের হাতে।

শেভাল ব্লাঙ্ক ও ল্য টইনির মতো বিলাসবহুল হোটেলগুলোর কারণেও অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। 

পুয়োর্তো রিকো: গান ও নাচ

বোম্বা, প্লেনা, ডেসিমা, সালসা, রেগেটন- এগুলো সবগুলোই পুয়োর্তো রিকোর স্বতন্ত্র নাচের ধরন। রাত্রিকালীন জীবন ও বৈচিত্রময় ককটেল (ফলের রস বা অন্যান্য অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের মিশ্রনে তৈরি পানীয়) সংস্কৃতির কারণে এটি অন্য দ্বীপগুলোর তুলনায় অনন্য। 

সালসা নাচের জন্য ক্যামবিও এন ক্লেভ-এ যেতে পারেন। আর বোম্বা ও প্লেনার জন্য যেতে পারেন ডন রাফায়েল সেপেডায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাচীন এসব নাচকে সংরক্ষণ ও বিস্তারে কাজ করে। 

এখানকার ককটেল বারগুলোও বিখ্যাত। সান হুয়ানের ল্য ফ্যাক্টরিয়া নিয়মিত বিশ্বের সেরা ৫০টি বারের তালিকায় থাকে। 

মার্টিনিক: ক্যারিবিয়ানে ফরাসী স্বাদ

মার্টিনিক দ্বীপটি ফরাসী পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় গন্তব্য। তাই ইউরোপীয় স্বাদ ও সংস্কৃতির দেখা মিলবে এই দ্বীপে। 

ক্যারিবিয়ানে ফরাসী খাবারের উষ্ণতা উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন বিখ্যাত ল্য ম্যান্ডোলিন রেস্টুরেন্টে। 

দ্বীপের উত্তরাঞ্চল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন দ্বারা আচ্ছাদিত। দ্বীপের বিভিন্ন জায়গা রাম কারখানা আছে, যার এর ক্যারিবিয় বৈশিষ্টকে বীবিত রাখতে সাহায্য করে। 

সূত্র: সিএনএন

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago