ভ্রমণ

ফটোগ্রাফারদের চোখে দেশে ছবি তোলার সেরা ৭ স্থান

দক্ষিণ এশিয়ার অপার সৌন্দর্যের এই দেশটিতে আছে নানা রকম অত্যাশ্চর্য স্থান, যা যেকোনো আলোকচিত্রীর জন্যই একটি স্বর্গরাজ্য!
ছবি: ইন্তিসাব শাহরিয়ার

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বাংলাদেশে দর্শনীয় স্থানের কমতি নেই। একদিকে যেমন আছে সুন্দরবনের মনোমুগ্ধকর অরণ্য, অপরদিকে আছে পানাম নগরের ঐতিহাসিক পরিত্যক্ত ভবন, যা আমাদের দেশের গৌরবময় অতীতের সাক্ষী।

দক্ষিণ এশিয়ার অপার সৌন্দর্যের এই দেশটিতে আছে নানা রকম অত্যাশ্চর্য স্থান, যা যেকোনো আলোকচিত্রীর জন্যই একটি স্বর্গরাজ্য!

পেশাদার বা সৌখিন যেকোনো ধরনের আলোকচিত্রীর জন্য ছবি তোলার জন্য বাংলাদেশের ৭টি স্থানে যাওয়ার লোভ সামলানোটা মুশকিল।

রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই লিংক রোড, রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই লিংক রোডকে শুধু একটি রাস্তা বললে ভুল হবে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কতটা অনবদ্য হতে পারে, তা এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্পষ্ট বোঝা যায়। 
রাস্তাটির দুই পাশের প্রকৃতি যেন ছবির মতো সুন্দর। রাস্তার প্রতিটি মোড়ে রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিবার নতুন রূপে ধরা দেয়।

রাঙ্গামাটি। ছবি: জয়িতা তৃষা

ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার জয়িতা তৃষা বলেন, 'রাঙ্গামাটিতে আমি যেসব জায়গায় গিয়েছি, তার মধ্যে রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই লিংক রোডকেই সবচেয়ে মুগ্ধকর মনে হয়েছে। রাস্তাটি কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ পানি এবং পাহাড়ের মধ্যে একটা বিস্ময়কর জুটি তৈরি করেছে। এছাড়া সূর্যাস্ত এবং মনোরম পাহাড়ি দৃশ্য যেকোনো ফটোগ্রাফারের জন্যই আকর্ষণীয়।'

রাঙ্গামাটির তবলছড়ি বাজার থেকে সিএনজিতে অটোরিকশায় করে এই রাস্তায় যাওয়া যাবে। ভাড়া পড়বে প্রায় ৩০০ টাকা।

টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা দুই উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জৈববৈচিত্রের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা জায়গা। এই অনন্য জলাভূমি প্রকৃতিপ্রেমী, পাখিবিদ এবং ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি স্বর্গরাজ্য।

টাঙ্গুয়ার হাওর। ছবি: সাকিব আহমেদ

টাঙ্গুয়ার হাওর বহু প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। শীতকালে হাওরাঞ্চলে বহু প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মেলে। তাই প্রকৃতি ও পাখির সান্নিধ্য উপভোগের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরের কোনো তুলনা হয় না। 

নৌকায় ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির রোমাঞ্চ ক্যামেরায় ধরে রাখতে চাইলে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের তালিকায় থাকা উচিত।

সুন্দরবন

সুন্দরবন শুধু ঘন ম্যানগ্রোভ বন এবং বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রের অনন্য সংমিশ্রণের জন্যই পরিচিত নয়, বরং বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফারদের জন্যও একটি জনপ্রিয় স্থান।

সুন্দরবন। ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ও নদীগুলো সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম নিরবচ্ছিন্ন জোয়ারবিধৌত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ যেকোনো আলোকচিত্রীর জন্যই বহুল কাঙ্ক্ষিত। 

সৌন্দর্যের বাইরেও রয়েল বেঙ্গল টাইগার যদি কোনো আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ধরা পড়ে, তাহলে তো কথাই নেই।

সুন্দরবন পরিদর্শন নিঃসন্দেহে যে কোনও ফটোগ্রাফারকে আজীবন সংগ্রহে রাখার মতো ছবির ভাণ্ডার জোগাড় করতে সাহায্য করবে এবং একইসঙ্গে এই বনের বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র সম্পর্কেও আরও ভালো ধারণা পেতে সাহায্য করবে।

পানাম নগর, নারায়ণগঞ্জ

ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং পরিত্যক্ত অসংখ্য ভবনের সমাহার থাকায় নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত পানাম নগর ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি স্বর্গ।

পানাম নগর। ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ
 

ঔপনিবেশিক আমলের অসাধারণ স্থাপত্যকলায় নির্মিত ভবনগুলোর দিকে তাকালেই প্রাচীন কারুকার্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভবনগুলো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 
একসময় এই ভবনগুলোতেই গুরুত্বপূর্ণ পরিবারগুলো বসবাস করত ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হতো।

ফটোগ্রাফাররা পানাম নগরের দুই পাশের সারি সারি ভবনের মাঝখান দিয়ে চলা সরু ও সংকীর্ণ গলিতে সৃষ্ট আলো-ছায়ার অনন্য মিথস্ক্রিয়া ফ্রেমবন্দী করার সুযোগ পাবেন।

শাঁখারি বাজার, পুরান ঢাকা

পুরান ঢাকার কথা আসলেই শাঁখারী বাজারের নামটি সবার আগে মনে পড়ে। সমৃদ্ধ ইতিহাস, প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং সরু গলিপথের কারণে শাঁখারী বাজার আলোকচিত্রীদের কাছে বরাবরই আকর্ষণীয় একটি স্থান।

ফটোগ্রাফি শিক্ষার্থী সিলভিয়া মাহজাবিন বলেন, 'এখানকার মোঘল ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ভবনগুলো অতীতের কোনো সময়ে নিয়ে যায়। এখানকার কাপড়, দোকান এবং মানুষের ঘনত্ব- সবকিছুই আমার কাছে একটি ক্লাসিক সিনেমার দৃশ্যের মতো মনে হয়। আমার বিশ্বাসই হয় না যে এটি আমাদের শহরের একটি অংশ!'

পুরান ঢাকার মূল চিত্র ফুটে ওঠে, শাঁখারি বাজার ঘুরে দেখলে এমন অনেক চমকপ্রদ ছবি তোলা যাবে।

রাতারগুল জলাবন, সিলেট

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার গুয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত রাতারগুল জলাবন বছরের উল্লেখযোগ্য একটা সময় পানির নিচে ঢাকা থাকে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট। বহু আলোকচিত্রীর জন্যই এটি একটি আকর্ষণীয় জায়গা।

রাতারগুল। ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় সবুজে ঢাকা জলাবনটি অনন্য রূপে ধরা দেয় এবং এটি বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীর অভয়ারণ্য। পর্যটক ও আলোকচিত্রীরা সাধারণত নৌকায় করে এই জলাবনে যেতে পারেন। 

বনে ঢুকলেই অসংখ্য প্রজাতির বৈচিত্র্যময় গাছ ও প্রাণীর দেখা মিলবে। প্রকৃতিকে ক্যামেরায় ধরে রাখার জন্য এটি অন্যতম সেরা একটি জায়গা। 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজার

প্রকৃতির কোলাহলকে খুব কাছ থেকে ক্যামেরাবন্দী করতে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি সঠিক জায়গা হতে পারে। 

লাউয়াছড়া। ছবি: রায়হান ভুঁইয়া

লাউয়াছড়া বন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বানর এবং হরিণসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীদের আবাসস্থল। যারা প্রকৃতির ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তারা এই উদ্যানে বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর অসংখ্য ছবি তোলার সুযোগ পাবেন।

মূল লেখা: আয়মান আনিকা

ইংরেজী থেকে অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

Comments