যশোর ভ্রমণে যেসব স্থান না দেখলেই নয়

মধুপল্লী বা মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি
মধুপল্লী বা মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

প্রবাদ আছে, 'যশোরের যশ খেজুরের রস'। তবে পুরোনো প্রশাসনিক শহর যশোর শুধু খেজুরের রসের জন্যই বিখ্যাত না, জেলাটিতে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান।

যশোর ঘোরার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল। তাই হাতে যদি দুই দিন সময় থাকে, ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন এই স্থানগুলো ঘুরে দেখতে।

যশোর কালেক্টরেট ভবন

যশোর কালেক্টরেট ভবন
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

যশোর সদরেই যশোর কালেক্টরেট ভবন অবস্থিত। এটি মূলত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। কালেক্টরেট ভবনকে কেন্দ্র করে এখানে পার্ক গড়ে উঠেছে। যশোরে আপনার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এখানে পায়ে হেঁটে বা রিকশায় যেতে পারবেন।

প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস এই কালেক্টরেট ভবনের। বর্তমানে এটি দ্বিতল ভবন। লাল রঙের এ ভবনটি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। নানান ফুলের গাছ, পুকুর, পানির ফোয়ারা ও ভাস্কর্যে সুসজ্জিত এর চত্বর।

চাঁচড়া শিব মন্দির

শিব মন্দির
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

যশোর মনিহার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে এই শিব মন্দিরে যেতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে চাঁচড়া ইউনিয়নে এ মন্দির অবস্থিত।

চাঁচড়া শিব মন্দিরটি ৩২৭ বছরের পুরোনো। ১৬৯৬ সালে এটি রাজা মনোহর রায় নির্মাণ করেছেন। মন্দিরের চারপাশে প্রচুর টেরাকোটা বা পোড়ামাটির ফলকের কাজ। আর এজন্যই মন্দিরটি এত চমৎকার দেখতে। মন্দিরটির সামনের দিকে খিলানযুক্ত তিনটি দরজা রয়েছে।

গদখালী ফুলের বাজার

গদখালী
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

গদখালী ফুলের বাজারকে ফুলের রাজধানী বলা হয়। কারণ সারা বাংলাদেশের ৮০ ভাগ ফুলের চাহিদা মেটায় এই গদখালী। যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার প্রায় ৯০টি গ্রামের ৪ হাজার বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করা হয়। বেনাপোল রোড দিয়ে গেলে রাস্তার দুইপাশে দেখা মিলবে দিগন্ত বিস্তৃত লাল, নীল, হলুদ আর সাদা রঙের ফুলের সমারোহ। আর তাতে মৌমাছি আর প্রজাপতির গুঞ্জন।

এখানে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা ও গ্লাডিওলাস। উৎপন্ন এই ফুলগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় গদখালী বাজারে। তারপর তা চলে যায় সারা বাংলাদেশে। সারা বছর বাহারি ফুলের সমারোহ থাকলেও এখানে যাওয়ার উপযুক্ত সময় শীতের সময় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে।

যশোর থেকে বেনাপোল রোডে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে গদখালী বাজার। ৩০ টাকা বাস ভাড়ায় আসা যায় সেখানে। চাইলে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়েও আসা যায়।

মধুপল্লী বা মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি

যশোর সদর থেকে ৪৫ কিলো দূরে মধুপল্লী। যশোর থেকে বাসে এসে কেশবপুর নামতে হবে। তারপর রিকশা করে সাগরদাঁড়ি গ্রামে যেতে হবে। বাস ভাড়া ৫০ টাকা ও অটোরিকশা ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, মধুসূদন জাদুঘর, লাইব্রেরি ও সাগরদাঁড়ি পর্যটন কেন্দ্র এসব মিলিয়ে মধুপল্লী। মধুসূদন দত্তের বাড়ি সংলগ্ন রয়েছে সেই বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ। মধুসূদন দত্তের দ্বিতলা বাড়িটি অপূর্ব নির্মাণশৈলীর জন্য তৎকালীন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটাকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। মধুসূদন দত্তের এই স্মৃতি বিজড়িত জায়গাটি দর্শন করলে অনেক ভালো লাগবে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকীতে এখানে মধুমেলা হয়।

মধুপল্লী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক রোববার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। মধুপল্লীতে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা।

বেনাপোল স্থলবন্দর

যশোর ভ্রমণ
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে এটি অবস্থিত। ভারত বাংলাদেশের স্থল বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এটি পরিচিত। এখান থেকে কলকাতা ৮০ কিলোমিটার দূরে। বেনাপোলে একটি তল্লাশি ঘাঁটি রয়েছে। বেনোপোলের বিপরীতে ভারতের অংশটির নাম পেট্রাপোল। এখান থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগও রয়েছে।

লোকজন সাধারণত এখানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্যারেড অনুষ্ঠান দেখতে যায়। এতে বিজিবি ও বিএসএফ অংশগ্রহণ করে। প্যারেড দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা হিসেবে গ্যালারিও রয়েছে।

যশোর সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শার্শা উপজেলায় বেনাপোল স্থলবন্দর অবস্থিত। বাসে যেতে ভাড়া লাগে ৬০ টাকা। চাইলে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়েও যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে যশোর যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যশোর যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী এবং কলাবাগান থেকে সোহাগ, হানিফ, এসপি গোল্ডেন লাইন, এম.আর এন্টারপ্রাইজ, দেশ ট্র্যাভেলস, একে ট্র্যাভেলস, গ্রিন লাইন, শ্যামলী ও ঈগল পরিবহণের বেশকিছু এসি/নন-এসি বাস চলাচল করে। যশোরগামী নন-এসি বাসে ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা।

আর ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বুধবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য ৬ দিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন যশোর অভিমুখে যাত্রা করে এবং চিত্রা এক্সপ্রেস নামে অন্য একটি আন্তঃনগর ট্রেন সোমবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সন্ধ্যা ৭ টা ও বেনাপোল এক্সপ্রেস বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন রাত ১১ টা ১৫ মিনিট এ যশোরের জন্য যাত্রা করে। শোভন টিকিটের মূল্য ৪৫৫ টাকা, এসি সিটের মূল্য ৭৬০ টাকা ও এসি বার্থের মূল্য ১৬২০ টাকা।

এ ছাড়া ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ডোমেস্টিক টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার নিয়মিতভাবে ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

যেখানে থাকবেন

যশোর শহরে থাকার জন্য পাঁচ তারকা মানের কোনো হোটেল নেই। উন্নতমানের হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল, জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেল, হোটেল আর.এস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শামস ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। এ ছাড়া যশোর সার্কিট হাউজসহ বেশকিছু সরকারি রেস্ট হাউস রয়েছে। এগুলোতে ৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে থাকা যায়।

যা খাবেন

যশোরের খেজুরের গুড় খুবই বিখ্যাত। তাই খেজুরের গুড়ের প্যারা সন্দেশ ও ভিজা পিঠা খেতে ভুলবেন না। এ ছাড়াও হাতে সময় থাকলে খেতে পারেন জামতলার মিষ্টি, ধর্মতলার চা ও চুকনগরের বিখ্যাত চুইঝাল।

 

Comments

The Daily Star  | English

US takes in $87b from tariffs in first half of 2025

More than $87 billion in tariff revenue collected by end of June, surpassing $79 billion total for all of 2024

51m ago