১০০ ফিট: ঢাকায় বিনোদনের নতুন কেন্দ্র
অত্যন্ত জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় একটু ফাঁকা জায়গা পাওয়াটাই যেন দুষ্কর। সেদিক থেকে নতুনবাজার সংলগ্ন ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউ ঢাকাবাসীর জন্য নতুন প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। শহুরে কোলাহল থেকে সরে এসে নিভৃতে সময় কাটানোর জন্য এখানে আছে নানা রকমের রেস্টুরেন্ট, আছে নানা খেলার আয়োজনও।
১০০ ফিট সড়কটি ঢাকার নতুনবাজার থেকে শুরু হয়ে বালু নদীর দিকে চলে গেছে। দীর্ঘ ও প্রশস্ত এই রাস্তাটিকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় গড়ে উঠেছে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার হরেক রকম আয়োজন। এই রাস্তাটি প্রথম পরিচিতি পায় শেফস টেবিল কোর্টসাইডের জন্য। তবে ধীরে ধীরে এই ফুডকোর্টটি ছাড়াও এই এলাকায় বিনোদন, কেনাকাটা, খাওয়া দাওয়া ও সময় কাটানোর আরও উপাদান যোগ হতে থাকে।
১০০ ফিটের জমজমাট বিভিন্ন দিক হচ্ছে-
স্ট্রিট মার্কেট
কম দামে ভালো পোশাকের জন্য, বিশেষ করে শীতের পোশাকের জন্য ঢাকার বঙ্গবাজার ও নূরজাহান মার্কেটের কোনো তুলনা নেই। কিন্তু যারা বসুন্ধরা এলাকায় থাকেন, তাদের জন্য এই মার্কেটগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। ১০০ ফিটের স্ট্রিট মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের পোশাক, জুতা, বেল্ট সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে। এই পণ্যগুলো আসল পণ্যের কপি হলেও অতটা স্পষ্ট বোঝা যায় না।
ক্রেতারা টপস থেকে শুরু করে ফ্যাশনেবল টি-শার্ট, আরামদায়ক প্যান্ট, শার্ট সবই পাবেন ১০০ ফিটের স্ট্রিট মার্কেটগুলোতে।
খাবারের স্বর্গরাজ্য
ঐতিহ্যবাহী পিঠা, অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুচকা, জিভে জল আনা চটপটি এসবের মাধ্যমে ঢাকার খাবারের স্বাদ আস্বাদন করা যায়। কিন্তু আপনি যদি আরও ভিন্নধর্মী কিছু খেতে চান, তাহলে ১০০ ফিটের রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্টগুলো সেই চাহিদা পূরণে পুরোপুরি সক্ষম। এখানকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ক্রিসপি পরোটা, কাবাব, লুসি, খিচুড়ি, তেহারি, বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন ধরনের মজাদার খাবার পাওয়া যায়। ১০০ ফিটের প্রতিটি রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ, গন্ধ, রং আপনার জিহ্বাকে এক অপার্থিব সুখের অভিজ্ঞতা দেবে।
নানান খেলাধুলা
১০০ ফিটে প্রবেশের পর যতই সামনে এগুবেন, ততই বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের নতুন জগত সামনে উন্মোচিত হতে থাকবে। আছে অনেকের পছন্দের গো-কার্ট। আপনি ড্রাইভিং বা রেসিং পছন্দ করেন বা না করেন, এই গো-কার্টিং ট্র্যাকে রেসিংয়ের আনন্দ কিছুতেই মিস করতে চাইবেন না! সাধারণত বন্ধুবান্ধব বা সদলবলে মানুষ গো-কার্টিং করে। তবে একইসঙ্গে অপরিচিত কোনো রেসিং সঙ্গীর সঙ্গে সহজেই বন্ধুত্বও হয়ে যেতে পারে এখানে।
শিশুদের জন্য নানা রকম আয়োজন আছে কোর্টসাইডের ভেতরে। ক্লাসিক ট্রেন রাইড, সুইংস, স্লাইডস, বাউন্সি ক্যাসল খেলে সময় কাটাতে পারে শিশুরা। শিশুকে সৃজনশীল কিছু শেখাতে চাইলে শেফস টেবিলের ভেতরে ক্লে স্টেশনে যেতে পারেন, সেখানে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা যাবে। শুধু আনন্দ করার জন্যই নয়, শিশু ও পরিবারের সবার সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটানোর জন্যও ১০০ ফিটের শেফস টেবিল কোর্টসাইডে যেতে পারেন।
জিরো গ্র্যাভিটিতে না গেলে ১০০ ফিটের আনন্দ পুরিপুরি উদযাপন করা হয় না। কোর্টসাইডে অবস্থিত জিরো গ্রাভিটি দেশের প্রথম ট্রাম্পোলিন পার্ক। অবাধ আনন্দে মেতে উঠার জায়গা এটি। প্রাপ্তবয়ষ্কের গণ্ডি এবং মাধ্যাকর্ষণের টান, দুটোকেই সাময়িকভাবে অকার্যকর করে এই পার্কে আনন্দে মেতে উঠতে পারেন।
ডোনাট স্লাইড, ওয়াল ক্লাইম্বিং, জিপ লাইনিংয়ের পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য রয়েছে কিডস জোন।
১০০ ফিটের বিভিন্ন আউটডোর অ্যাকটিভিটিগুলো গরমকালে কিছুটা কম আনন্দদায়ক, তবে শীতের দিনের জন্য এগুলো খুবই আদর্শ। তাই পরিবারের সঙ্গে খুব ভালো কিছু সময় কাটানোর জন্য শীতের দিন ১০০ ফিট ঘুরে আসতে পারেন। মজার খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন খেলাধুলায়ও অংশ নিতে পারবেন, যা আপনার ঢাকার অভিজ্ঞতাকে নিশ্চিতভাবে সুখকর করবে।
উল্লেখ্য, ঢাকার উত্তরাংশের যানজটের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে এই সড়কটিকে প্রশস্ত করার প্রকল্প চালু হয় এবং ৬ লেন সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১০০ ফুট প্রশস্ত এই সড়ক মোট ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ।
অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল
Comments