প্রকৃতি আর প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে ঘুরে আসুন জাতীয় স্মৃতিসৌধ

আপনি যদি ঢাকা শহরের ব্যস্ততা থেকে একদিনের জন্য একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে চান, সঙ্গে যদি ইতিহাসের ছোঁয়া, কিছুটা প্রকৃতির প্রশান্তি আর নিরিবিলি সময় কাটানোর সুযোগ পেতে চান—তাহলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ হতে পারে আপনার জন্য একেবারে উপযুক্ত জায়গা।
ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধের পথ মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টার। গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে বাসে উঠলেই সাভার। ভাড়া খুব বেশি না, লোকাল বাসে ৫০-৭০ টাকার মধ্যেই।
আর আপনার যদি প্রাইভেট গাড়ি থাকে, তাহলে তো আরও সুবিধা। সকালে রওনা দিয়ে বিকেলের মধ্যেই পুরোটা ঘুরে ফেরা যায়। অর্থাৎ একদিনেই একরকম মানসিক বিশ্রাম নিয়ে ফিরতে পারবেন।
যা দেখবেন
প্রথমেই বলি—এটা শুধু একটা স্থাপনা না, এটি আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক ইতিহাস। আমাদের আবেগের, আমাদের গর্বের স্থান। জাতীয় স্মৃতিসৌধ একটানা তাকিয়ে থাকার মতো এক নিঃশব্দ শক্তি। বিশাল সবুজ মাঠের একপাশে উঠে দাঁড়ানো সেই উঁচু সাতটি স্তম্ভ—যা আমাদের স্বাধীনতার সাতটি ধাপের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথম দেখাতেই মনে পড়ে সেই ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ নারীর আত্মত্যাগ।
আপনি মূল সৌধ পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে দেখবেন কত গোছানো, কত পরিচ্ছন্ন এই জায়গাটা। কোনো জায়গায় ময়লা নেই, ভিড় থাকলেও কেমন যেন শৃঙ্খলার এক আবহ।
স্মৃতিসৌধের পাশেই রয়েছে একটা সুন্দর মায়াবী লেক। লেকের জলে সৌধের প্রতিচ্ছবি পড়ে যেন আরেকটা সৌধ তৈরি হয় জলের গায়ে। অনেকেই এখানে এসে বসে থাকেন—কেউ একা, কেউ পরিবার নিয়ে। হালকা হাওয়া, নীরবতা, আর পাখির ডাক—সব মিলিয়ে স্মৃতিসৌধের পরিবেশ একদম শান্ত।
অনেকেই শুধু স্মৃতিসৌধ দেখে ফিরে যান। তারা কিন্তু অনেক কিছু মিস করেন। পুরো চত্বরটা ঘুরে দেখতে পারেন—চমৎকার বাগান আছে, গাছের ছায়া আছে, পাখিদের আনাগোনা আছে। রোদের দিনেও বসে থাকা যায়, এতটাই ছায়া আর বাতাস।
বিশেষ করে বিকেলের দিকে সৌধের ছায়া যখন লম্বা হয়ে পড়ে, আর সূর্যটা একটু ঢলে যায় পশ্চিমে, তখন জায়গাটা আরও সুন্দর লাগে। আপনি যদি ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাহলে স্মৃতিসৌধের বিকেলটা মিস করবেন না।
আবার অনেকেই জানে না, স্মৃতিসৌধের পাশেই আছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু তথ্যচিত্র, ছবি আর দলিল নিয়ে সাজানো ছোট গ্যালারি। এছাড়াও অজানা শহীদদের কবর। সময় নিয়ে চাইলে সেখানে ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন।
ছোট বড় সবাইকে নিয়ে যাওয়া যায় স্মৃতিসৌধে। শিক্ষার্থী কিংবা সন্তানদের জন্য স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ একটা শিক্ষা সফরের মতো।
প্রবেশমূল্য ও সময়সূচি
স্মৃতিসৌধে ঢুকতে কোনো টিকিট লাগে না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। বিশেষ দিবস বা নিরাপত্তার কারণে কখনো কখনো ভেতরে যাওয়া বন্ধ থাকে। কিন্তু তা ছাড়া সাধারণ সময় গেলে কোনো সমস্যা হয় না।
খাবার
স্মৃতিসৌধের পাশে কিছু দোকান আছে। তবে আপনি চাইলে বাসা থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে গিয়েও খেতে পারেন সেখানে। ছোটখাট একটা পিকনিকও হয়ে যাবে।
এছাড়া আশেপাশে চিপস, পানি, ঠান্ডা পানীয় পাওয়া যায়। তবে প্লাস্টিক বা ময়লা ফেলে যাওয়া একদমই ঠিক হবে না, তাই এসব নিয়ে গেলে নিজের ব্যাগেই ফেলা উচিত।
ওয়াশরুম, বসার জায়গা, পানির ব্যবস্থা সবই আছে এখানে। আর সবচেয়ে ভালো লাগে, এখানে কোনো কোলাহল বা হইচই নেই।
যাবেন কেন?
অনেকে মনে করেন, 'স্মৃতিসৌধ তো একবার গিয়েই দেখেছি'। কিন্তু আমি বলি, এই জায়গা বারবার যাওয়ার মতো। আপনি ভিন্ন সময় গেলে ভিন্ন সৌন্দর্য দেখবেন। কখনো সকালে, কখনো বিকেলে, কখনো ফুল ফোটার সময়ে।
একদিনের ছোট ট্রিপে এমন জায়গা খুব কম আছে যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি আর প্রশান্তি—সব একসঙ্গে পাওয়া যায়। আর যারা ঘোরাঘুরির পাশাপাশি একটু নিজেকে সময় দিতে চান, তাদের জন্য তো এই জায়গাটা অসাধারণ।
তাই, মনটা ক্লান্ত থাকলে, চারপাশে শুধু শব্দ আর চাপ থাকলে—একদিন সময় বের করুন। পরিবার, বন্ধু বা একা—যেভাবেই হোক, চলে যান জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
স্মৃতিসৌধের নিরিবিলি প্রকৃতি, গর্বের ইতিহাস আর কিছুটা নীরব সময়—আপনাকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেবে।
Comments