এবারের ফ্লুর ধরন কেমন, কী লক্ষণ দেখা যাচ্ছে

এই মৌসুমে ফ্লু
ছবি: সংগৃহীত

এই মৌসুমে জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে অনেকের। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুর মতো মনে হলেও কোভিড-১৯ বা অন্য কোনো ভাইরাসের কারণেও এটি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এবারের ফ্লু সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু কী

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, সাধারণত ফ্লু বলতে আমরা বুঝি এক ধরনের ভাইরাল জ্বর। ইনফ্লুয়েঞ্জা নামের ভাইরাসের মাধ্যমে জ্বর, কাশি হয়। শ্বাসযন্ত্রের অংশ নাক, গলা এবং ফুসফুস যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় তখন তাকে ফ্লু বলে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু একটি সংক্রামক রোগ। তবে বিভিন্ন কারণে জ্বর, কাশি হতে পারে। সবগুলো ফ্লু না।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কয়েক ধরনের আছে। যেমন- টাইপ এ, বি, সি এবং ডি। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাস এই দুই টাইপের সংক্রমণে ফ্লু হয়। এর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসের কয়েকটি সাব টাইপের মধ্যে A(H1N1) এবং A(H3N2) এর মাধ্যমে প্রতি বছরই ফ্লু সংক্রমণ হয়।

ফ্লু কীভাবে ছড়ায়

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু অত্যন্ত ছোঁয়াচে। কথা বলার সময় ড্রপলেট বা থু থুর সঙ্গে যে ছোট ছোট কণাগুলো বের হয় অথবা সর্দি, কাশি, হাঁচির মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যদি অন্য কারো শ্বাসযন্ত্র নাক, মুখের মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে সেই ব্যক্তিও সংক্রমিত হতে পারেন। যখন কোনো ব্যক্তি ফ্লু আক্রান্ত হন তখন রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার দুই দিন আগে থেকেই তিনি আরেকজনের মধ্যে ফ্লু ছড়াতে পারেন। লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত অন্যদের সংক্রমিত করতে পারেন।

ফ্লুর লক্ষণ

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, সর্দি, কাশি, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, শীত শীত ভাব, ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

প্রতি বছর মাইল্ড, মডারেট ও সিভিয়ার ফ্লুতে সংক্রমিত হয় অসংখ্য মানুষ। সাধারণ ফ্লু ক্ষতির কারণ না হলেও, সিভিয়ার ফ্লু মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে জানান ডা. সোহেল মাহমুদ।

ফ্লুর ঝুঁকি বেশি কাদের

১. পাঁচ বছরের নিচে শিশু, বিশেষ করে ২ বছর বয়সের নিচে যেসব শিশু তাদের ঝুঁকি বেশি।

২. যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।

৩. সন্তানসম্ভবা নারী।

৪. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে যাদের।

৫. সিভিয়ার অ্যাজমা আছে যাদের।

৬. হার্ট ডিজিজ, লিভার ডিজিজ, কিডনি ফেইলিউর, ক্যানসারসহ যাদের সিরিয়াস কো-মরবিডিটিস আছে এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে ফ্লু মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

ফ্লুর চিকিৎসা

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ফ্লুর সাধারণ চিকিৎসা হিসেবে জ্বর, মাথা ব্যথা হলে রোগী প্যারাসিটামল, এন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন- ফলের শরবত, ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন। বিভিন্ন ফল, সবজিসহ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে রোগীকে।

ফ্লুর কারণে অনেক ধরনের জটিলতা হতে পারে। সাধারণ জ্বর থেকে দেখা যায় কারো কারো মাসল ইনজুরি বা মায়োসাইটিস হতে পারে, মস্তিষ্কের প্রদাহ, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভালো হয়ে যাওয়ার পরও কারো কারো ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে নিউমোনিয়া হওয়ার জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেকেন্ডারি ইনফেকশন হিসেবে দেখা যায় ফ্লু ভালো হয়ে যাওয়ার পর ফুসফুসে নতুন করে জীবাণু সংক্রমণের কারণে আবার জ্বর, কাশি, কফ হলুদ হয়ে যেতে পারে। সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।

এবারের ফ্লুর ধরন কি আলাদা?

এই মৌসুমে ফ্লুর ধরন আলাদা কি না এই প্রসঙ্গে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, 'শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশনের জন্য আরও অনেক ধরনের ভাইরাস আছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছাড়াও রাইনো ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস, কোভিড১৯ ভাইরাস, কমন কোল্ড ভাইরাস ছাড়াও আরও কিছু ভাইরাস আছে, যেগুলোর জন্য জ্বর, সর্দি, কাশি হতে পারে। এবার অনেকেই জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। যেসব রোগী এসব সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন তাদের লক্ষণ অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা অন্যরকম '

 ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, 'এবার যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের গলা ব্যথার মাত্রা খুব বেশি হচ্ছে, নাক বন্ধ হয়ে থাকছে এবং কাশির মাত্রাও অনেক বেশি। কারো কারো কাশি দীর্ঘমেয়াদী হচ্ছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়েই যে এবার সংক্রমণ হচ্ছে তা বলা যাবে না। এটা হয়তো অন্য কোনো ভাইরাসের কারণেও হতে পারে। ভাইরোলজি বিভাগ বা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বিষয়টি পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে পারবে।'

'বর্তমানে অনেকে কোভিড-১৯ ভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে আসা কিছু রোগী কোভিডে আক্রান্ত, কিন্তু সেটি পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে তারা নিশ্চিত হচ্ছেন না। কারণ কোভিড এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি', বলেন তিনি।

ফ্লু থেকে সুরক্ষায় সতকর্তা

কিছু সতর্কতা মেনে চললে ফ্লু কিংবা অন্য যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।

১. সংক্রমিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিশেষ করে যাদের বয়স ৫ বছরের নিচে, ৬৫ বছরের বেশি এবং কো-মরবিডিটি আছে তাদের সাবধান হতে হবে।

২. যেখানে সেখানে কফ, থু থু ফেলা যাবে না।

৩. রোগীসহ অন্যদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাত ধুতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা হিসেবে যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন তাদের প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যাবে। আর ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলেও জটিলতা কম হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

6h ago