আইবিএস কী ও কেন হয়, কোন লক্ষণে বুঝবেন

আইবিএস
ছবি: সংগৃহীত

আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম পেটের একটি সমস্যা। আইবিএস নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ থাকা সম্ভব। আর সেটি রোগীর উপরেই নির্ভর করে অনেকাংশে।

আইবিএস সম্পর্কে জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এফ কে চৌধুরী চঞ্চলের কাছ থেকে।

আইবিএস কী ও কেন হয়

ডা. এফ কে চৌধুরী বলেন, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস পেটের বিরক্তিকর এবং দীর্ঘমেয়াদী একটি সমস্যা। সাধারণভাবে অনেকে আইবিএসকে পুরাতন আমাশয়ও বলে থাকেন। দেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।  পুরুষদের তুলনায় নারীরাই আইবিএসে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ভুগে থাকেন। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম হচ্ছে পরিপাকতন্ত্রের ফাংশনাল সমস্যা। এখানে পরিপাকতন্ত্রের গঠনগত কোন পরিবর্তন হয় না।

এখন পর্যন্ত আইবিএস কেন হয় এর সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে আইবিএস কেনো হতে পারে এমন কিছু কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। যেমন-

১. যেসব কারণে আইবিএস হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম পরিপাকতন্ত্র থেকে স্নায়ুতে সংকেতজনিত সমস্যা।

২. পরিপাকতন্ত্রের অস্বাভাবিক সংকোচন ও প্রসারণ।

৩. পরিপাকতন্ত্রের অতি সংবেদনশীলতা।

৪. পরিপাকতন্ত্রে উপকারি এবং অপকারি ব্যাকটেরিয়ার অসামঞ্জস্যতা।

৫. অত্যাধিক মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তা।

আইবিএসের লক্ষণ

ডা. এফ কে চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পেটে ব্যথা, মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন যেমন- পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, পেট ফুলে থাকা এগুলো সাধারণত আইবিএসের মূল লক্ষণ।

আইবিএস সাধারণত কিছু কিছু খাবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকে। যেমন- দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার, শাক পাতা, ফাস্ট ফুড, পোলাও, বিরিয়ানি, মসুর ডাল, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার। এই ধরনের খাবার খেলে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বেশি হয়ে থাকে৷

আইবিএস শনাক্ত

রোগীদের কাছ থেকে রোগের ইতিহাস শুনে ও লক্ষণ দেখে এই রোগ নির্ণয় করতে হয়। রক্ত পরীক্ষা কিংবা পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি করে সাধারণত আইবিএস শনাক্ত করা সম্ভব নয়। কিছু লক্ষণ বা রোম ক্রাইটেরিয়া দেখে আইবিএসের প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। আইবিএস নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে Rome IV ক্রাইটেরিয়া সর্বাধিক প্রচলিত।

আইবিএস দুই ধরনের হতে পারে। যেমন-

আইবিএস ডি:  যেখানে পেট ব্যথার সঙ্গে পাতলা পায়খানা বা ক্রনিক ডায়রিয়া হতে পারে।

আইবিএস সি:  যেখানে পেট ব্যথার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে আইবিএস ডি এবং আইবিএস সি দুটোই একসঙ্গে থাকতে পারে। যেমন- পাতলা পায়খানা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য।  এটাকে বলা হয় আইবিএস এম।

মূলত লক্ষণ এবং রোগের ইতিহাস শুনেই আইবিএস শনাক্ত করা হয়। তবে পরিপাকতন্ত্রজনিত অন্য কোনো জটিলতা বা সমস্যা আছে কিনা সেটি জানার জন্য অনেক সময় কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়।

আইবিএস চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

আইবিএসের অন্য কোনো ঝুঁকি আছে কিনা এই প্রসঙ্গে ডা. এফ কে চৌধুরী বলেন, আইবিএসের একটা ভালো দিক হচ্ছে এই রোগ থেকে বড় ধরনের কোনো জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা নেই। আইবিএসে আক্রান্ত রোগীরা পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগে থাকেন। কিন্তু তাদের বড় ধরনের কোনো শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি নেই। তবে কিছু কিছু আইবিএসের কিছু বিপদ চিহ্ন আছে। যেমন-

১. আইবিএসে যদি কারো মলের সঙ্গে রক্ত যায়।

২. ওজন কমে যায়।

৩. কেউ যদি পেটে চাকা অনুভব করেন।

৪. রাতে ঘুম থেকে উঠে মলত্যাগ করতে হয়।

৫. যদি রক্তশূন্যতা থাকে।

৬. পরিবারের কোনো সদস্যের যদি আগে থেকেই পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন জটিল সমস্যা থাকে।

এই বিপদ চিহ্নগুলো যদি থাকে তাহলে রোগীকে দ্রুত পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

আইবিএস এর নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই, তবে  নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যেসব খাবার খেলে সমস্যা হয় সেসব খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে দুধ ও দুধের তৈরি বিভিন্ন খাবার, শাক পাতা। কোন খাবারে কোন রোগীর সমস্যা হয় সেটা আগে থেকে চিহ্নিত করতে পারলে এবং সেই খাবার যদি পরিহার করা যায় তাহলে রোগী অনেকটা ভালো থাকবেন। এছাড়া রোগীর মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুঃশ্চিন্তা কমাতে হবে। প্রয়োজনে আইবিএসের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসক ওষুধ দেবেন রোগীকে।

সঠিক খাদ্যাভাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে রোগী নিজেই আইবিএস নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ থাকতে পারবেন। এক্ষেত্রে দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, শাক পাতা, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত, তেলে ভাজা ও ডিপ ফ্রাই খাবার পরিহার করতে হবে। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে খাবার খেতে হবে এবং একসঙ্গে অনেক খাবার না খেয়ে সারাদিন অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। মুক্ত বাতাসে নিয়মিত হাঁটা এবং মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Banks see sluggish deposit growth as high inflation weighs on savers

Banks have registered sluggish growth in deposits throughout the current fiscal year as elevated inflation and an economic slowdown have squeezed the scope for many to save, even though the interest rate has risen.

14h ago