আমাদের জীবনের সবই কি ইউটোপিয়া?
মাদকমুক্ত পৃথিবী একটা ইউটোপিয়া। মানব-ইতিহাসের প্রাচীনকাল থেকেই নানা ধরনের মাদক ছিল, এখনো আছে, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। তবু জগতের বহু মানুষ একটা মাদকমুক্ত পৃথিবীর কল্পনা করেন, এ নিয়ে কথা বলেন, কাজও করেন।
দুর্নীতিমুক্ত দেশও হয়তো একটা ইউটোপিয় ধারণাই। হয়তো কোনোদিনই ওরকম একটা দেশ পাওয়া যাবে না, তবু, কিছু মানুষ জীবনভর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, কাজও করেন। বিশুদ্ধ রাজনীতিও তেমনই এক ইউটোপিয়া। রাজনীতিতে পাপ থাকবে, পতন থাকবে, আদর্শচ্যুতি থাকবে, হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে, এ প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এখনকার পৃথিবীতে। তবু কিছু মানুষ বিশুদ্ধ রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা লালন করেন, স্বপ্ন দেখেন ও দেখান।
এই যে কিছু মানুষ এসব নিয়ে অবিরাম কথা বলে যান, এসব আসে তাদের মঙ্গল-চিন্তা থেকে। তাঁদের কল্পনায় একটা কল্যাণময় জগৎ থাকে, স্বপ্ন থাকে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা মঙ্গলময় পৃথিবী রেখে যাবার দায় থাকে। তাঁরা কথা বলে চলেন, কথা বলার জন্য বিপদে পড়েন, নিগৃহীত হন, কষ্ট পান, তবু তাদেরকে দমানো যায় না। আর সেজন্যই জগৎটা পুরোপুরি অন্ধকারে তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পায়।
প্লেটোর সেই আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনা থেকেই ইউটোপিয়া শব্দটি এসেছে। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো, এমন এক রাষ্ট্র যার কোনো খুঁত নেই। বাস্তবে এরকম রাষ্ট্র অর্জন করা অসম্ভব। এমনকি প্লেটোর সেই ধারণাটিকে পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো, ওই কল্পনার রাষ্ট্রেও খুঁত ছিল। শব্দটি অবশ্য এখন আর কেবল রাষ্ট্রের সংজ্ঞাতেই সীমাবদ্ধ নেই, এমন কোনো চিন্তা বা কল্পনা যা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব সেসবকেও এখন ইউটোপিয়া বলা হয়। কিন্তু সব কল্যাণ-চিন্তা, মঙ্গলকামনা, স্বপ্ন-কল্পনাই কি ইউটোপিয়া? পুরোপুরি না হলেও কিছুটা কি অর্জিত হতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। হাজার বছরের ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয় যে, অধিকাংশ মানুষ প্রচল স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলেও এবং কেবল নিজে বাঁচার জন্য কিংবা পরিবার প্রতিপালনের জন্য জীবন ব্যয় করলেও কিছু কিছু মানুষ সবসময়ই নিজেকে ছাড়িয়ে অপরের মঙ্গল-চিন্তায় কথা বলে গেছেন, কাজ করে গেছেন।
তাদের চিন্তা এবং কাজ হয়তো সেই সময়ে সম্বর্ধিত হয়নি, উল্টো অনেককেই ধিকৃত হতে হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীকালের মানুষের জীবনে সেগুলো ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সব মানুষের জন্য কীভাবে একটা বাসযোগ্য কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেছে ইউরোপ। এবং এই ক্ষেত্রে তারা বেশ এগিয়েও গেছে, বিশেষ করে স্ক্যানডিনেভিয়ান দেশগুলো (নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক কিংবা সুইজারল্যান্ড) জনগণকে মুক্ত-স্বাধীন-সচ্ছল-সাচ্ছন্দ্যের জীবন উপহার দেয়ার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। তাদের কি ভুল হয়নি বা হয় না? নিশ্চয়ই হয়। কিন্তু ভুল থেকে তারা শিক্ষা নেয়, ভুল শুধরে নতুন করে শুরু করে।
আমাদের তো শুরুই হয় না। এমনকি কল্যাণকর কোনো চিন্তার প্রকাশকেও এদেশে বিপুলভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়। শাসকশ্রেণি যা ভাববে সেটাই সঠিক, এর বাইরে আর কোনো সত্য-সুন্দর থাকতে পারে না, কোনো মঙ্গল বা কল্যাণ থাকতে পারে না, এই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের চর্চা। এমনকি একটি সুষ্ঠু-অবাধ-সর্বজনীন নির্বাচনের দাবি তুললেও একদল লোক তেড়ে এসে 'বিকল্প দেখান' 'বিকল্প দেখান' বলে চেঁচাতে থাকে। তাদেরকে বোঝানো অসম্ভব যে, বিকল্প বেছে নেবার দায়িত্ব জনগণের, তাদেরকে সেই সুযোগ দিতে হবে, এটাই গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত। এবং সেই শর্ত পূরণ হলে শাসকদের জবাবদিহিতা থাকবে, দায়বদ্ধতা থাকবে, ক্ষমতা হারানোর ভয় থাকবে।
সহজ ভাষায় বলতে হলে, তাদের স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কমে যাবে। এইসব যুক্তি দিলে ওই তেড়ে আসা লোকগুলো ফের বলবে, গণতন্ত্রের আগে চাই উন্নয়ন। তাদেরকে এও বোঝানো অসম্ভব যে, এ দুটো পরস্পরবিরোধী নয়, বরং পরস্পরের পরিপূরক। গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকে না, বরং হাত ধরাধরি করে বন্ধুর মতো পাশাপাশি চলে। আর যদি গণতন্ত্রের দরকার না-ই থাকে তাহলে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন নামের প্রহসন করার মানে কী? সংবিধান সংশোধন করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেই হয়! যারা কথা বলতে দিতে চায় না তারা মুখে না বললেও তাদের মনে আসলে এই কথাই আছে। তারা চায় রাজতন্ত্র, জমিদারতন্ত্র, লুটপাটতন্ত্র, আর সেজন্যই গণতন্ত্রের কথা বললে ওরকম তেড়ে আসে।
২
আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। এই শব্দগুলো কি অর্থহীন? ঝোঁকের মাথায় লেখা? মোটেই তা নয়। কোনো মহৎ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন করা যায় না। এই ঘোষণাপত্রের ধারাবাহিকতায় স্বাধীন দেশের প্রথম সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের চার মূল নীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করা কি অসম্ভব ছিল?
পরিবর্তিত বিশ্ব-পরিস্থিতিতে সমাজতন্ত্র এখন প্রায় পরিত্যক্ত হতে চলেছে। কিন্তু সাম্য? সাম্যের ধারণা কি অচল হয়ে গেছে? না হয়নি। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র বা সাম্য নিয়েও আছে প্রচুর অপপ্রচার। এগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারাই অপপ্রচারগুলো চালিয়েছে। এবং সব সরকারই তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে উদগ্রীব ছিল বলে তারাও সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা মানুষকে বুঝতে দেয়নি। সাম্য মানে যে একজনের সম্পদ কেড়ে নিয়ে অন্যজনকে বিলিয়ে দেওয়া নয়, এটা বলেনি কেউ। সাম্য মানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং আইন-কানুন, সুযোগ-সুবিধায় সকলের সমান অধিকার, যেহেতু রাষ্ট্র জনগণের সম্পত্তি, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের নয়। সেই সমান অধিকার কি জনগণ পেয়েছে? একটা উদাহরণ দিই। রাষ্ট্রের খাস জমিগুলো কাদের দখলে? কারা অনির্দিষ্টকালের জন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে লিজ নেয় সেগুলো? খোঁজ নিয়ে দেখুন, সব ধনিক শ্রেণির দখলে। অথচ দেশের বহু মানুষ এখনো গৃহহীন, ভূমিহীন। কেন তারা সেই জমিগুলো পায় না? আইন সবার জন্য সমান হওয়ার কথা। আসলেই কি সমান? খুনের মামলায়ও জামিন পায় ধনিক ও শাসক শ্রেণির লোকজন। ফাঁসির আসামী পায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা। অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজা একটা অনলাইন সাক্ষাৎকার গ্রহিতা হওয়ার অপরাধে বছরের পর বছর ধরে কারাগারে পড়ে থাকে, জামিন হয় না। আইন সবার জন্য সমান?
সাম্যের কথা যদি বাদও দিই, তবু প্রশ্ন থেকে যায়, ভারসাম্য কি আছে এই সমাজে? ঢাকার যেকোনো একটা দামি রেস্তোঁরায় যান, কিংবা যান বিয়েবাড়িতে, দেখুন কী পরিমাণ খাবার অপচয় হচ্ছে। অথচ বাইরে হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষ। একটু চোখ বুলিয়ে দেখুন, বিপুলাকার অট্টালিকার পাশে রাস্তায় শুয়ে রাত কাটাচ্ছে কত মানুষ! চিকিৎসার জন্য কেউ সিঙ্গাপুর যাচ্ছে, কেউ বা সরকারি হাসাপাতালের করিডোরে, বারান্দায়, ফ্লোরে কাতরাচ্ছে। শিক্ষার জন্য ছেলেমেয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে সুবিধাভোগীরা, অন্যদিকে গরিবের ছেলেমেয়েরা মাদ্রাসায় মার খাচ্ছে, স্কুলের পাঠ্যক্রম নিয়ে চলছে যথেচ্ছ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়কে করে তোলা হচ্ছে সরকারি দলের টর্চার সেল। সাম্যই বা কোথায়, ভারসাম্যই বা কোথায়?
এই ভারসাম্যটুকু না থাকলে জনগণের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে কী করে? রাষ্ট্র এবং সরকার তো মানুষকে মানুষ বলে মনেই করে না। মানুষের স্বীকৃত অধিকারকেও তারা স্বীকার করে না। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা – বইতে পড়া মানুষের এই পাঁচ মৌলিক চাহিদা এখনো অপূর্ণই রয়ে গেল। সমাজতন্ত্র পরিত্যক্ত, গণতন্ত্রও হয়ে গেল সোনার হরিণ। ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হলো নিপুণ কৌশলে। এই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হয়েও এই আমাদের অর্জন?
আমরা যদি অন্তত ভারসাম্য চাই, চাই মানবিক মর্যাদা, চাই গণতান্ত্রিক অধিকার, সেটাও কি ইউটোপিয়া?
৩
বাংলাদেশে সেই ধরনের মানুষ খুব বিপদে থাকেন যাদের নিজস্ব দার্শনিক মতাদর্শ আছে কিন্তু তা কোনো সংজ্ঞায়িত বা সুনির্দিষ্ট ফ্রেমে বন্দি করা যায় না। বিপদে থাকে তারাও যাদের একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তা মেলে না।
মানুষ রাজনৈতিক প্রাণী। যে যাই বলুক, সত্য হচ্ছে এই যে, প্রতিটি মানুষই রাজনীতি-সচেতন, কারণ সে জানে যে, সে রাজনীতি-নিয়ন্ত্রিত এবং এটা তার চাওয়া না চাওয়ার ওপর নির্ভর করে না। এমনকি যে তরুণদের 'আই হেইট পলিটিক্স' প্রজন্ম বলে নিন্দা করা হয়, তারাও রাজনীতি-সচেতন, কারণ ওই বাক্যটিই রাজনৈতিক। প্রচলিত রাজনীতির ভয়াবহ পাপ ও পতন দেখে তাদের ভেতরে জন্ম নিয়েছে এক তীব্র ক্রোধ এবং ঘৃণা। এবং তাদের সামনে বিকল্প রাজনীতির কোনো উদাহরণ নেই বলে তারা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মেতে উঠেছে অন্য সব ভোগবাদিতায়। যেহেতু রাজনীতি নিয়ে সবারই কিছু না কিছু ভাবনা আছে, সুতরাং তাদের কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে। সেটি যদি কোনো দলের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে সে সেই দলের সমর্থক হবে অথবা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে কর্মী হবে। কিন্তু এমনও তো মানুষ থাকতে পারে যার মতাদর্শ কোনো দলের সঙ্গেই মিলছে না! সে তখন কী করবে?
নিজের মতামত প্রকাশ করবে না? নীরব দর্শক হয়ে থাকবে? কেন তা থাকবে? কিন্তু প্রকাশ করলেই সমস্যা। প্রকটভাবে রাজনৈতিক বিভাজনে বিভক্ত এই সমাজে যখন কেউ দেখবে যে, এমন এক রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা বলা হচ্ছে যা তার সঙ্গে মিলছে না, তখন তারা সেই মানুষটিকে বিরোধী কোনো দলের সমর্থক বলে ধরে নেবে। ধরে নিয়েই ক্ষান্ত হবে না, তারা একটা ট্যাগ ঝুলিয়ে দেয়া হবে তার গলায়, তবেই না শান্তি। আর এসব যন্ত্রণা সইতে না পেরে কল্যাণকামী মানুষগুলো কথা বলাই বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেটা কি ভালো হচ্ছে সবার জন্য?
একটা গল্প বলে আজকের লেখা শেষ করি। গল্প নয় অবশ্য, সত্য ঘটনা, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে গল্প বলেই মনে হবে।
হবীবুল্লাহ বাহার ছিলেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর আত্মীয়। বাহার সাহেবকে নিয়ে তাঁর একটা স্মৃতিচারণমূলক লেখা আছে। অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করেছেন তিনি, কিন্তু একটা বিশেষ কথা আমার মনে দাগ কেটে আছে। কথাটি এরকম :
'যাঁরা তাঁকে (হবীবুল্লাহ বাহারকে) জানতেন তারা এ-কথা জানেন যে তিনি অনর্গল কথা বলতেন। সে-কথা মনে হলে কখনো কখনো ভাবি, মুসলমান সমাজের দীর্ঘ তমসার পর যাঁরা সর্বপ্রথম কথা বলতে শুরু করেন তাঁদের অন্যতম তিনি।... তিনি এত কথা বলতেন যে, যাদের হাতে সময় নেই তারা একবার তার খপ্পরে পড়লে আর নিস্তার পাবেন না -- এই ভয়ে তাঁকে এড়িয়ে যেতেন। ট্রামস্টপে ট্রাম ধরতে গিয়ে তাঁকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। একটার পর একটা ট্রাম চলে যাচ্ছে, তিনি ট্রাম ধরছেন না। কারণ, ট্রাম ধরতে যারা আসছে তাদের সঙ্গে গল্পগুজব শুরু করেছেন। ট্রামস্টপ এমন একটি জায়গা যেখানে লোকের সঙ্গে দেখা হয়ই। কে জানে, হয়তো সেজন্যেই তিনি ট্রামস্টপে হাজির হতেন। সত্যিই যদি কোথাও যাওয়ার ছিল তবে এমনভাবে পাশ দিয়ে ট্রামের পর ট্রাম চলে যেত কি? ... তিনি অনর্গল এত কথা বলতেন কিন্তু নিজের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলতেন না।... যে-বিশ্বাসের ওপর তাঁর নবীন জীবন গড়ে উঠেছিল, সে বিশ্বাসের ক্ষেত্র ছিল সমাজ জাতি দেশ, নিজের ব্যক্তিগত জীবন নয়।'
যে সময়টির বর্ণণা দিয়েছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সেটি ছিল ব্রিটিশ আমল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা তখনও আসেনি। হবীবুল্লাহ বাহার ছিলেন দারুণ প্রজ্ঞাবান, বাকপটু এবং সমাজ-জাতি-দেশের প্রতি দায়বদ্ধ মানুষ। কিন্তু তাঁর কথাগুলো তিনি বলবেন কাকে? সেজন্যই অনির্দিষ্ট শ্রোতার খোঁজে তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন ট্রামস্টপে, নিজে কোথাও যেতেন না, চলমান ট্রামযাত্রীদের সঙ্গে অনর্গল কথা বলে যেতেন।
কী অদ্ভুত এক দায়বোধ!
পিছিয়ে থাকা সমাজে এরকম কিছু মানুষের জন্ম হয় যাঁরা দায়বোধ করেন কিছু করার জন্য, কিছু পরিবর্তন আনার জন্য। তাঁরা অনর্গল কথা বলেন। তাঁদের কথা শুনতে চাইলে শুনুন, আর বিরক্ত হলে এড়িয়ে যান, তবু তাদেরকে কথা বলতে দিন। টুঁটি চেপে ধরবেন না দয়া করে। তাতে ক্ষতি হবে আপনার সমাজের, জাতির, দেশের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের। এই দাবিও কি ইউটোপিয়া বলে মনে হচ্ছে আপনাদের কাছে? আমাদের সমগ্র জীবন কি তাহলে ইউটোপিয়া বা অসম্ভব দিয়েই ভরা থাকবে?
Comments