অপরিশোধ্য ঋণ অথবা জীবনের পূর্ণতা
মাঝে মাঝে ভাবি, যে মহার্ঘ জীবন আমরা না চাইতেই উপহার পেয়েছি, সেই জীবন পূর্ণ হয় কীভাবে? কত কিছু করার পরিকল্পনা করি, কত সাধ কত স্বপ্ন আমাদের, তার সবকিছু তো পূরণ হয় না। কিংবা একটা পূরণ হলে আরেকটা তৈরি করে নিই এবং এভাবে একটার-পর-একটা আকাঙ্ক্ষার ফাঁদে জীবন কেটে যায়, পূর্ণতা আর আসে না।
আমাদের তো চাওয়ার শেষ নেই, আমরা ভুলে গেছি যে, কোথাও একসময় থামতে হয়, তৃপ্তি এবং সন্তুষ্টিও তাই অধরাই থেকে যায়। চলে যাওয়ার সময় আমরা ভাবি, কতকিছু করার ছিল, সেগুলো না করেই চলে যেতে হচ্ছে! এই অপূর্ণতা যেন মানব জীবনের এক অলঙ্ঘনীয় বিধিলিপি। সেজন্য জীবনকে পূর্ণ করার সাধ ও স্বপ্ন আমরা বহন করে চলি সারাজীবন। কিন্তু কীভাবে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত পূর্ণতা?
যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কি পূর্ণতা আসে? সেই দায়িত্বই বা কীরকম? আমরা কি সত্যিই নিশ্চিত হতে পারি যে, আমাদের দায়িত্ব ঠিক কতটুকু এবং কী কী? পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র আমাদের ওপর কিছু দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়, সেগুলো পালন করতে গিয়েই আমরা হাঁপিয়ে উঠি এবং অধিকাংশ সময়ই ব্যর্থ হই। এসবের বাইরেও যে মহত্তর কোনো দায়িত্ব-- না-চাইতেই-পেয়ে-যাওয়া-মহার্ঘ-জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলার মহৎ দায়িত্ব-- থাকতে পারে তা তো আমরা ভাবার সুযোগই পাই না। আমাদের জীবন তো কেবল পারিবারিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য নয়, এমনকি কেবল সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বা বৈশ্বিক মানুষের জন্যও নয়, বরং গভীরভাবে প্রাকৃতিক এবং মহাজাগতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্যও বটে। কী সেই উদ্দেশ্য? প্রকৃতি আমাদেরকে দিয়ে কী করিয়ে নিতে চায়? কী করে বুঝবো তা?
নাকি জীবন পূর্ণ হয় ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে? সেই জন্মমুহূর্ত থেকে কতরকম ঋণে যে আবদ্ধ হয়ে আছি, সেগুলো শোধ করবো কবে? কীভাবেই বা শোধ করা যায়? নাকি অপরিশোধ্যই রয়ে যাবে সেসব? ঋণের কথা ভাবলে অবশ্য সবারই প্রথমে মনে পড়বে মা-বাবার কথা, তারপর ভাই-বোন এবং আত্মীয়স্বজনের কথা। বড়োজোর এমন কোনো মানুষের কথা যিনি দুঃসময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এইসব ঋণ অবশ্যই অমূল্য এবং অপরিশোধ্য কিন্তু আমাদের ঋণ তো কেবল পরিবারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়, এমনকি কেবল মানুষের কাছেও নয়। এই ঋণ অনেক বিস্তৃত পরিসর জুড়ে ছড়িয়ে আছে। একটু বিস্তারিতভাবেই না-হয় আলাপ করি।
পরিবারের ঋণের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। মা-বাবার কাছে ঋণের কথা যদি বলি, তাহলে শিশুর জন্মেরও আগে তার শুরু। মাতৃগর্ভে থাকার সময় কতই না উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগে দিন-রাত কেটেছে তাদের! পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার আগেই তারা সেই না-দেখা সন্তানকে আপন করে নিয়েছেন। কাঁথা সেলাই করে, ছোট ছোট কাপড়চোপড় বানিয়ে, গর্ভস্থ সন্তানের পুষ্টির কথা ভেবে সাধ্যমতো খাওয়াদাওয়া করে, আর নানারকম কল্পনায় সাজিয়ে অনাগত অতিথিকে বরণ করে নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করেছেন।
একসময় তাদের কোলজুড়ে এসেছে সেই কাঙ্ক্ষিত সন্তান আর তারপর থেকেই তাদের পুরো জীবনই আমূল বদলে গেছে। সন্তানের জন্য উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ তাদের চিরসঙ্গী হয়ে গেছে। কী কী করেন তারা আমাদের জন্য তার হিসেব করে কূল পাওয়া যাবে না, বরং বলা ভালো কী না করেন? নিজের সমস্ত কিছুর বিনিময়ে হলেও সন্তানের মঙ্গল কামনা থেকে এক মুহূর্তও বিরত হন না তাঁরা। সন্তান বড়ো হতে হতে মা-বাবার কাছ থেকে দূরে সরতে থাকে, তার নিজের একটা জগৎ তৈরি হয়, অধিকাংশ সময় সেই জগতের সঙ্গে মা-বাবার সংযোগ থাকে না, কিন্তু যখন সে নিজে সন্তানের জন্ম দেয়, তখন উপলব্ধি করতে পারে মা/বাবা হবার মানে কী!
জন্মের পর কয়েক বছর মানবশিশুরা কতই না অসহায় থাকে। কারো-না-কারো নিবিড় পরিচর্যা ছাড়া একা একা কিছুই করতে পারে না তারা। অন্যান্য পশুপাখির কথা ভাবুন। একটা বিড়াল ছানা বা কুকুর ছানা, কিংবা গরু-ছাগল-ঘোড়ার ছানা, অথবা হরিণ-সিংহ-বাঘের শাবক কত দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। পাখির ছানারাও তাই। জন্মের পর অবশ্য তারাও কিছুদিন নির্ভরশীল হয়ে থাকে, ওদের মায়েরাও ছানাদের শিখিয়ে দেয় অনেক কিছু, কিন্তু মানবশিশুর মতো দীর্ঘ সময় ধরে নয়।
এই অসহায় আর পূর্ণ নির্ভরশীলতার সময়কালে মানবশিশুরা যত্ন-আদর-ভালোবাসা-পরিচর্যা পায় কেবল মা-বাবার কাছ থেকেই নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের এবং আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকেও। অনাত্মীয় প্রতিবেশিরা কিংবা অচেনা মানুষরাও শিশুদের প্রতি যত্নশীল হয়ে থাকেন, তাদের কোনো দুঃখ-দুর্দশা-অসহায়ত্ব দেখলে সবার হৃদয়ই আর্দ্র হয়ে ওঠে। এমনকি আমাদের যে গৃহকর্মীরা থাকেন, তারাও কী অপত্য স্নেহ বিলিয়ে যান আমাদের জন্য!
এই যে এত এত মানুষের যত্নআত্তি-ভালোবাসা-মমতায় আমাদের বেড়ে ওঠা, আমরা কি তাদের ঋণ স্বীকার করি? স্বীকার করলে না-হয় শোধ করার প্রশ্ন আসে। কিংবা শোধ করা কি আদৌ সম্ভব? ধরুন, আপনার দুঃসময়ে কোনো এক দয়ালু মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই দুঃসময় কাটিয়ে উঠবার জন্য তার সেই সহায়তা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এখন আপনার সুসময়, দুর্যোগ কেটে গেছে, যোগ্য হয়ে উঠেছেন, আপনি যদি তার ঋণ শোধ করতে চানও, পারবেন বলে মনে করেন? ধরা যাক তখন আপনি ক্ষুধার্ত ছিলেন, তিনি আপনার খাওয়াদাওয়ার নিশ্চিত করেছিলেন এবং আপনার জীবন রক্ষা হয়েছিল, এখন কী দিয়ে তাঁর ঋণ শোধ করবেন? তাকে দশগুণ খাইয়ে দেবেন? কিন্তু সেটা তো তার দরকার নেই। তাহলে উপায় কী? আবার ধরুন, আপনি যোগ্য হয়ে উঠতে উঠতে তিনি মারা গেছেন, তাহলে ঋণ শোধ করার জন্য তাকে পাবেন কোথায়?
আমি মাঝেমাঝে ভাবি, ছোটবেলায় আমাদের বাসা-বাড়িতে যেসব গৃহকর্মী ছিল, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম পরিশ্রম করতো, কত যে আদর-স্নেহ পেয়েছি তাদের কাছ থেকে, সেই ঋণ আমি শোধ করবো কীভাবে? তাদেরকে খুঁজেই বা পাবো কোথায়? আত্মীয় তো নন তারা, কোথায় হারিয়ে গেছেন, তাও তো জানি না যে খুঁজে বের করে কৃতজ্ঞতা জানাবো কিংবা তাদের সমস্যাগুলো দূর করতে পারবো। তাহলে কি এই অপরিশোধ্য ঋণ নিয়েই আমাকে চলে যেতে হবে? আবার এও ভাবি, না-দেখা কত মানুষের কাছেও তো ঋণ জমে আছে।
যে কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়েও বছরের-পর-বছর উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে গেছেন, তাতেই তো আমার খাদ্যের সংস্থান হয়েছে। যদি তারা সেটি না করতেন, যত টাকাই থাকুক, কীভাবে পেতাম সেই খাদ্যশস্যগুলো? পৃথিবীতে কতরকম হরতাল-ধর্মঘট-কর্মবিরতি হয়, যদি একবার কৃষকরা তেমনটি করতেন, যদি এক মওশুম ফসল না ফলাতেন, এ পৃথিবীর মানুষ বাঁচতো কীভাবে? মাঠে-ময়দানে, কল-কারখানায় কাজ করা সেইসব না-দেখা শ্রমজীবী মানুষদের জন্যই না আমাদের জীবনের সবকিছু এত সহজলভ্য হয়েছে। অথচ তাদের ঋণ শোধ করা তো দূরের কথা, স্বীকারও করিনি কোনোদিন।
শুধু কি তাই? এও ভাবি যে, দরিদ্র একটা দেশে আমার জন্ম হয়েছিল, মানুষের ঠিকমতো খাওয়াই জুটতো না, সেই দেশেরই রাষ্ট্রীয় খরচে আমার স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা চলেছে। শিক্ষকরা আমাদেরকে পড়িয়েছেন, আমি শিক্ষিত হয়েছি, যোগ্য হয়েছি, এবং ভুলে গেছি, আমার এই এতদূর আসার জন্য কারা জীবনপাত করেছেন! যখন ভাবি, আমার দেশের মানুষদের শ্রম-ঘামের অর্থায়নে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেই আমি আজকের অবস্থানে এসেছি তখন শ্রদ্ধায়-কৃতজ্ঞতায় মাথা নত হয়ে আসে এবং তাদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না জেনে বেদনাবোধ করি।
এখন আমার আয়ের অনেকখানি অংশ সরকার-নির্ধারিত বিভিন্নরকম ট্যাক্স দিতেই ব্যয় হয়ে যায়। তাতে দুঃখ বোধ করি না, ভাবি, যদি আমার আয়ের এই অংশটি দেশের অসহায়-দুঃখী মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হয়, তাহলে কিছুটা দায় শোধ হবে। কিন্তু যখন দেখি, নানা প্রকল্পের নামে, তখাকথিত উন্নয়নের নামে, আমার এবং আমার মতো আরো অনেকের কষ্টার্জিত অর্থ লুটপাট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে, তখন দুঃখে-কষ্টে-ক্ষোভে বুক ভারী হয়ে ওঠে আর অভিশাপ দিই সেই লুটেরাদের।
ঋণের কথা বলছিলাম। একটা কথা আমরা ভুলেই গেছি যে, এই দেশটা একসময় প্রায় পুরোপুরি পরনির্ভরশীল ছিল। আমাদের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন হতো বিদেশী সহায়তা এবং ঋণের ওপর নির্ভর করে। সেই দেশগুলো বছরের-পর-বছর ধরে আমাদের সহায়তা করে গেছে। আমাদের দুর্দশা দেখে বিশ্বমানবতার হৃদয় কেঁদে উঠেছে বলেই তারা সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল। যদিও সেসব সাহায্য-সহায়তার বেশিরভাগই লুটেরাদের পকেটে গেছে তবু এও তো সত্য যে, সেগুলো না পেলে এই দেশ চিরতরে মুখ থুবড়ে পড়তো। আমাদের ঋণ তো তাদের কাছেও।
এসব ঋণের হিসাব করলে শেষ হবে না। কিন্তু যে-কথাটি এখনো বলা হয়নি, তা হলো, ঋণ কেবল মানুষের কাছে নয়। আমাদের ঋণ আছে পশুপাখি-কীটপতঙ্গ-গাছপালা-নদীনালাসহ প্রকৃতির সকলের কাছে। আমরা মাছ-মাংস খেয়েছি, সেজন্য জীবন দিতে হয়েছে কোনো-না-কোনো প্রাণীকে। শাকসবজী কিংবা ফুল-ফলের জন্য হাত পেতেছি গাছের কাছে, তারা অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে, কখনো 'না' বলেনি। নদীনালা-খালবিল দিয়েছে জল, পলিমাটি, মাছসহ অজস্র উপহার। সূর্য দিয়েছে আলো ও তাপ, চাঁদও দিয়েছে আলো আর জোয়ারভাটা, বায়ুমণ্ডল দিয়েছে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন-নাইট্রোজেনসহ সব উপাদান, অজস্র নক্ষত্ররাজি থেকে এসেছে বস্তু তৈরির মৌলিক উপাদান।
বিপুল মহাবিশ্বের বিশালতা আমাদের ভাবতে শিখিয়েছে, আমরা কেবল এই পৃথিবীরই নই, বরং এক মহাজাগতিক পথিক। প্রকৃতির এইসব ঋণ কি অস্বীকার করা যায়? না, যায় না। ঋণ থাকলে তো শোধ করতে হয়। কিন্তু করবো কীভাবে? যে মানুষগুলো নানাভাবে আমাদের উপকার করেছে, তাদের সবাইকে তো খুঁজেই পাবো না। যে প্রাণীটি জীবন দিয়েছে আমার খাদ্যের জোগান দিতে গিয়ে তাকেই বা পাবো কোথায়? প্রকৃতির এইসব অপার দানেরই বা প্রতিদান কী?
এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আদৌ উত্তর আছে কি না তাও জানি না। তবে আমার মনে হয়, এইসব ঋণ হয়তো শোধ করতে পারবো না, কিন্তু যাদের কাছে ঋণী হয়ে আছি তাদের কথা স্মরণ করে আমার আশেপাশে যারা আসবে তাদের সবার প্রতি যদি সহমর্মী হয়ে উঠতে পারি তাহলেও অনেকখানি ভার লাঘব হবে। সহমর্মী হওয়া মানে কেবল টাকাপয়সা দিয়ে সহায়তা করা বোঝায় না, মানুষ বড়ো অসহায় আর দুঃখী প্রাণী, তাদের সেই অসহায়ত্ব আর দুঃখের সময়ও যেন তাদের পাশে থাকতে পারি। এটা এক চেইন রিঅ্যকশনের মতো ব্যাপার। বহু মানুষের স্নেহ-মমতা-যত্ন-ভালোবাসা-সহযোগিতা-সহমর্মিতার ফলে আমার আজকের এই জীবন, আমিও যেন তেমন করেই অন্য মানুষের সহমর্মী হতে পারি। কেবল মানুষ নয়, সব ধরনের জীবজন্তু, পশুপাখি, এমনকি কীটপতঙ্গও যেন এই সহমর্মিতা থেকে বঞ্চিত না হয়।
প্রকৃতিতে সবাই সবার দায়িত্ব পালন করছে। তারা হয়তো জানে, কী তাদের দায়িত্ব, কী করতে হবে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। মৌমাছি, প্রজাপতি, ফড়িং বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ যে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়, তা কি কেবল মধু সংগ্রহের জন্য? না, মোটেই তা নয়। তারা এক ফুল থেকে অন্য ফুলে গিয়ে বসে বলেই পরাগায়ন হয়, ফুল থেকে জন্ম হয় ফলের, শস্যের। আর সেগুলো উঠে আসে আমাদের খাদ্যের তালিকায়। এই কাজগুলো ওরা করে কেন? করে, কেননা, ওরা জানে, এগুলো ওদের কাছে প্রকৃতিপ্রদত্ত দায়িত্ব। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে নিজেদের জীবনকে পূর্ণ করে ফিরে যায় প্রকৃতির কাছে। যেসব প্রাণী নিজেদের জীবন বিলিয়ে অন্যের খাদ্যে পরিণত হয়, তাদের জীবনও হয়তো পূর্ণতা পায় এই আত্মত্যাগে। কেবল মানুষই জানে না, কিসে তাদের জীবন পূর্ণ হবে। আমারা যখন প্রকৃতি নিয়ে কথা বলি, তখন নিজেদেরকে প্রকৃতি থেকে বিযুক্ত করে ফেলি। যেন আমাদের স্বতন্ত্র কোনো পরিচয় আছে।
আমরা ভুলে গেছি যে, অন্যান্য পশুপাখি-কীটপতঙ্গ-গাছপালার মতো আমরাও প্রকৃতিরই অংশ। প্রাকৃতিক জীবন থেকে দূরে সরে এসে, সভ্যতা তৈরি করে আর সেই সভ্যতার ফাঁদে পড়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আর সংলগ্নতা। সেজন্যই আমরা জানতে পারি না, বুঝতেও পারি না, কী আমাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত দায়িত্ব, কেন এবং কী উদ্দেশ্যে প্রকৃতি আমাদের জন্ম দিয়েছিল এবং এত যত্ন করে লালন করেছিল এবং করছে। এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার জন্যই আমাদের এত হাহাকার, এত দুর্যোগ, এত প্রশ্ন।
আমাদের হয়তো আর প্রাকৃতিক জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু অন্যান্য পশুপাখি-কীটপতঙ্গ-গাছপালার প্রাকৃতিক জীবনের দিকে গভীর অভিনিবেশ নিয়ে তাকালেই অনেক ইশারা ও ইঙ্গিত পাওয়া যায়, জানা যায় কীভাবে জীবন পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
Comments