দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নবজাগরণ পাঠ জরুরি

রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের মাসিক পাবলিক লেকচার 'বাংলাদেশের নবজাগরণ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজ : অন্বেষা অবলোকন তত্ত্ব' শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। ছবি স্টার

মুসলিম সাহিত্য সমাজের নায়করা নবজাগরণের তথা ইতিহাসের বাঁকবদলের কেবল প্রত্যক্ষদর্শী নন, তারা নিজেরাও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আজকের বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে গড়তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে মঙ্গলবার বিকেলে এক আয়োজনে বক্তারা বাংলাদেশের নবজাগরণ প্রসঙ্গে এ কথা বলেন।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে নবজাগরণের পাঠ জরুরি। সেই জাতি সৌভাগ্যবান যাদের নবজাগরণ ঘটেছে। আমরা এক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান এবং ব্যতিক্রম। আমরা জাগরণের কিছু মানুষ পেয়েছি। তাই সত্যিকার্থে দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের তথা বাংলাদেশের নবজাগরণের চিন্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।

আলোচনায় উঠে আসে মুসলিম সাহিত্য সমাজের নানাদিক। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রসঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলার রেনেসাঁ থেকে বাংলাদেশের নবজাগরণের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।

রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের মাসিক পাবলিক লেকচার 'বাংলাদেশের নবজাগরণ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজ : অন্বেষা অবলোকন তত্ত্ব' শীর্ষক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পড়েন সাংবাদিক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন। আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মোহাম্মদ আজম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিডিং ক্লাবের সভাপতি আরিফ খান।

'বাংলাদেশের নবজাগরণ ও মুসলিম সাহিত্য সমাজ : অন্বেষা অবলোকন তত্ত্ব' শীর্ষক আলোচনায় উপস্থিতির একাংশ। কথা বলছেন কাজল রশীদ শাহীন। ছবি রিডিং ক্লাব।

কাজল রশীদ শাহীন বলেন, 'বাংলাদেশ' রাষ্ট্রের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ঘটনা প্রবাহ সাক্ষ্য দেয় 'বাংলাদেশের নবজাগরণ' ছিল ঐতিহাসিক এক বাস্তবতা। নবজাগরণ যখন উন্মেষিত হচ্ছে এই ভূখণ্ডের নাম পূর্ববঙ্গ। সেই সময়ের পূর্ববঙ্গবাসী ও বাঙালি মুসলমানের প্রধান আকাঙ্খায় পরিণত হয়েছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা। যার ভেতর থেকেই 'বাংলাদেশের নবজাগরণ' তার ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখে।

অন্যদিকে ঊনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ বা রেনেসাঁ সংঘটিত হয়। সেই নবজাগরণ হয়তো ইতালীয় নবজাগরণের আদলে হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের জাগরণ হয় স্বতন্ত্র্যভাবে। এবং বিস্ময়কর হলেও সত্য যে বঙ্গীয় রেনেসাঁয় যাদেরকে প্রাণ পুরুষ বলে জ্ঞান করা হয় এবং আজোবধি মান্যতা দেয়া হয়েছে সেখানে লালন রোকেয়াদের স্থান হয়নি। একে যদি আমরা রহস্য বলে এড়িয়ে যায়, তাহলে সেটা কেবল দীনতা নয়, লজ্জারও।

মোহাম্মদ আজম বলেন, বাংলাদেশের নবজাগরণ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অনেক কথা হয়েছে। আজকের আলোচনা নতুন নয়। তবে ইতিহাসকে এইভাবে পরম্পরায় প্রবাহিত করে আলোচনার ধরণটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যে সময় লোকজন কেবলমাত্র 'একাত্তর', 'বাহান্ন' বলেই ক্লান্ত; সেখানে কাজলের শেকড় সন্ধান, ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা আমাদের আশাবাদী করে তোলে।

সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, কাজলের চিন্তা আমাদের বেশ ভাবিয়ে তোলে। চিন্তার উদ্রেক ঘটায়। মুসলিম সাহিত্য সমাজ আমাদের সমাজকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছেন। তাই আজকের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক মো. মনজুর রহমান, সাবেক সাংসদ সফিকুল ইসলাম ও ইমরান মাহফুজ। 

উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মাহবুব মোর্শেদ, অধ্যাপক সাইফুজ জামান, অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাবন্ধিক কুদরত-ই হুদা, কবি সফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া, গবেষক ফয়সাল আহমেদ, সাংবাদিক মাশরুর শাকিল, গাজী মুনছুর আজিজ ও ইয়াসির আরাফাত। প্রায় দুই শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে আলোচনা প্রাণবন্ত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

15h ago