আজ সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালে এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে।

ছাত্রজীবনে আবুল মকসুদ ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী ও বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একাত্তরের ২৫ মার্চের পরে মস্কোপন্থী ন্যাপের নেতা ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল হালিম চৌধুরীর গঠিত মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ছাড়াও কলকাতা থেকে প্রকাশিত আবদুল মান্নান সম্পাদিত "জয়বাংলা" পত্রিকায় প্রতিবেদন পাঠাতেন। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ সরকারের ইনফরমেশন সেল-এ যোগদান করেন। বাসস-এ ছিলেন বার্তা সম্পাদক ও উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক হিশেবে। তাঁর বন্ধু হুমায়ুন আজাদকে আহত করা নিয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি লেখার জন্য বিএনপি-জামায়াত সরকার থেকে লেখা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ায় তার প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ৯ মার্চ তিনি বাসস থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ –এর তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে তাঁর আবির্ভাব ষাটের দশকে। প্রথম থেকেই তিনি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ সহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ জার্মানীর জার্নাল (১৯৭৯) যা প্রকাশের পরপরই পাঠকপ্রিয়তা পায়। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ গোবিন্দচন্দ্র দাসের ঘর-গেরস্থালি (১৯৮১) এবং প্রথম কবিতার বই বিকেলবেলা (১৯৮১)। একজন গবেষক হিসেবে সৈয়দ আবুল মকসুদ বহু মৌলিক আঁকর গ্রন্থের প্রণেতা – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র জীবন ও সাহিত্য ( ১ম খণ্ড ১৯৮১ এবং ২য় খণ্ড ১৯৮৩), মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৯৯৪), পথিকৃৎ নারীবাদী খয়রন্নেসা খাতুন (১৯৯২), হরিশ্চন্দ্র মিত্রঃ ঢাকার সাহিত্য ও সাময়িকপত্রের পথিকৃৎ প্রভৃতি।  তিনি শুধু মওলানা ভাসানীর পূর্ণাঙ্গ জীবনই রচনা করেননি, মওলানার ওপর লিখেছেন পাঁচটি বই।

বাংলাদেশে মহাত্মা গান্ধী বিষয়ে গবেষণার পথিকৃৎ সৈয়দ আবুল মকসুদ। Gandhi, Nehru and Noakhali (২০০৪) এবং Gandhi Camp: A Chronology of Noakhali Events 1947-49 (২০১৪) নোয়াখালীতে গান্ধীর কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন দিক উন্মোচন করেছে। গান্ধী বিষয়ে তিনি আরো সম্পাদনা করেছেন Pyarelal's Unpublished Correspondence: The Noakhali Peace Mission of Mahatma Gandhi এবং নোয়াখালী গান্ধী মিশন ডায়েরী (২০১১)। গান্ধী প্রচারিত চিন্তা চর্চা অ গবেষণার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন "মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদন"। 

গবেষণায় আবুল মকসুদের আরেকটি অনন্য অবদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, স্যার ফিলিপ হার্টগ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ে চর্চায় অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠেছে।  

২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আক্রমণের প্রতিবাদে তিনি ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সত্যাগ্রহ শুরু করেন এবং বর্জন করেন পাশ্চাত্য পোশাক ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। ইরাকে হামলার প্রতিবাদে এই সত্যাগ্রহ যতটা ঠিক ততটাই সেটা ছিলো ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, পশ্চিমী সংস্কৃতি, ভোগবাদ অসাম্রদায়িকতা এই চার অপশক্তির বিরুদ্ধে। এসময় তিনি বাংলাদেশের সমস্ত জেলায় প্রচারাভিযান চালান তাঁর সত্যাগ্রহের সমর্থনে। আমৃত্য তিনি এই পোশাক পরিধান করেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন বাংলাদেশে পরিবেশ ও সামাজিক আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ও মানবাধিকার কর্মী। বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সঙ্গথনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সমাজে নিগৃহীত জনগোষ্ঠী – নারী, সংখ্যালঘু, আদিবাসী – যেখানেই আক্রান্ত হয়েছে তিনি শুধু বলিষ্ঠ কণ্ঠে তার প্রতিবাদই করেননি, নিপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। একজন সক্রিয় বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি সমাজে সর্বস্তরে গৃহীত হন।

সাহিত্যচর্চা ছাড়া, সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন একজন জনপ্রিয় কলামিস্ট। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তিনি নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রথম আলো পত্রিকায় তাঁর সহজিয়া কড়চা ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় কলামগুলোর অন্যতম। 

সৈয়দ আবুল মকসুদ বিভিন্ন পদক ও সন্মানে ভূষিত হয়েছেন – সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৯৫), মহাত্মা গান্ধী স্মারক পুরস্কার (২০১৭), মওলানা ভাসানী জাতীয় পুরস্কার, ঋষিজ পুরস্কার-সহ বিভিন্ন পদক।

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

6h ago