গণআন্দোলনের সূতিকাগার ৩২ নম্বর

বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ধানমণ্ডির এই বাড়িটি।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ কামরার দোতলা একটি বাড়ি। ধানমণ্ডির অনেক পুরোনো বাড়ির মতো আদতে সাদামাটা মনে হলেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের দীর্ঘ পথচলাই বাড়িটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ধানমণ্ডির এই বাড়িটি। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কিংবা সত্তরের নির্বাচন; পূর্ব পাকিস্তানের অজস্র আন্দোলন সংগ্রামের রূপরেখার জন্ম হয়েছিল এই বাড়িতেই।

যেভাবে এ বাড়ির জন্ম

ড. জগন্নাথ বড়ুয়া রচিত 'বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ি' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৫ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি আব্দুল গণি রোডের ১৫ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। সে বছর গণপূর্ত অধিদপ্তর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া শুরু করে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আগ্রহে আবেদনের ফরম কিনে আনেন বঙ্গবন্ধুর পিএস নুরুজ্জামান।

৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ১৯৫৭ সালে বেগম মুজিবের নামে ধানমণ্ডিতে এক বিঘা জমির প্লট বরাদ্দ হয়। তখন পাকিস্তান চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এককালীন ২ হাজার টাকা ও কিস্তিতে বাকি চার হাজার টাকা পরিশোধের শর্তসাপেক্ষে জমির মূল্য পরিশোধ করেন শেখ মুজিব।

রাজনৈতিক কারণে নিয়মিতই কারাগারে বন্দী থাকতেন শেখ মুজিব। ১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেব তিনি থাকতেন ১১৫ সেগুনবাগিচায়।

আইয়ুব খানের সমালোচনার দায়ে ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ফের কারাগারে যান বঙ্গবন্ধু। এ সময় তিন দিনের মধ্যে তার পরিবারকে সরকারি বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়।

তখন বাড়ি ছেড়ে সিদ্ধেশ্বরী বালক বিদ্যালয়ের পাশে মাসিক ২০০ টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে ওঠেন তিনি। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারী, ক্রমাগত হুমকির মুখে তাকে সে বাড়িও ছাড়তে হয়। একপর্যায়ে কবি সুফিয়া কামালের সহযোগিতায় ৭৬ সেগুনবাগিচার আরেকটি বাড়িতে উঠে বঙ্গবন্ধুর পরিবার।

ক্রমাগত প্রশাসনিক চাপে কোনো বাড়িতেই দীর্ঘ সময় থাকতে পারছিল না তার পরিবার। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার সময়ে নিয়মিতই তার পরিবারকে চরম অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।

১৯৬০ সালের ১ অক্টোবর মুক্তি পেলেও ৬ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হন বঙ্গবন্ধু। তখন আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কন্ট্রোলার অব এজেন্সিস পদে চাকরি শুরু করেন তিনি। বেগম মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, সময় থাকতেই তাকে ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই তুলতে হবে। শেষপর্যন্ত তার পীড়াপীড়িতে বন্ধুবান্ধব থেকে ধার-কর্জ ও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ঋণ নিয়ে বরাদ্দকৃত জমিতে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৬১ সালে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা বাড়ি নির্মিত হলে সপরিবারে সেই বাড়িতে উঠেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ির দ্বিতীয়তলার কাজও সমাপ্ত হয়। তখন বাড়ির নিচতলার বৃহৎ অংশকে গ্রন্থাগার ও দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন বঙ্গবন্ধু।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগুন দেওয়া হলে পুড়ে যায় ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি এবং নথিপত্র, সংরক্ষিত ব্যবহার্য সামগ্রী, পাঠাগারের দুর্লভ বই থেকে ঐতিহাসিক এই বাড়ির জানালা দরজাও। ছবি: সংগৃহীত

ধানমণ্ডির বাড়ি যখন আন্দোলনের সূতিকাগার

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বহু আন্দোলনের বিরল সাক্ষী ৬৭৭ নম্বরের বাড়িটি। মূলত বাষট্টির আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন দিয়েই এই বাড়ির রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। 'বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ি' গ্রন্থে বলা হয়, 'ধানমণ্ডির বাসভবন ক্রমেই হয়ে উঠে পূর্ব বাংলার রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে।…শেখ মুজিব ১৯৬২ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন ঐতিহাসিক এই বাড়ি থেকেই।'

১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর কার্যত নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এই পরিস্থিতিতে ১৯৬৪ সালে ২৫ জানুয়ারি ধানমণ্ডির বাড়িতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে সভাপতি ও শেখ মুজিবকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংগঠিত করেছিল।

রাজনীতির বাইরেও চৌষট্টির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এই বাড়িতে বহু মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবার।

১৯৬৬ সালের ছয় দফার খসড়াও ধানমণ্ডির বাড়িতে বসে করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা তার 'শেখ মুজিব আমার পিতা' গ্রন্থে লিখেছেন, '৬ দফা দেবার পর কার্যক্রম ও বেড়ে যায় নিচতলা তখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেই ব্যতিব্যস্ত।'

লাহোরে ৬ দফা উত্থাপনের পর ধানমণ্ডির বাড়িতেই ছয় দফা পাস করিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।  মহিউদ্দিন আহমদ তার 'আওয়ামী লীগ-উত্থান পর্ব-১৯৪৮-১৯৭০' গ্রন্থে লিখেছেন,  '২১ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবের ধানমণ্ডির বাসায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির এক সভায় ছয় দফা পাস করিয়ে নিতে সক্ষম হন।'

সে বছরের ৮ মে নারায়ণগঞ্জের জনসভা থেকে ফেরার পরে দেশরক্ষা আইনে বঙ্গবন্ধু ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে আটক হলেও ছয় দফার আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি অনেকাংশেই পরিচালিত হয়েছিল এই বাড়ি থেকেই। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বেগম মুজিব নিয়মিতই বাড়িতে বসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ও পরামর্শ করতেন।

১৯৬৮ সালের  জানুয়ারি মাসে সামরিক প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকার্য শুরু করলে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।  ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন।

১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় রাজনৈতিকদলগুলো নিয়ে গঠিত ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি সামরিক প্রশাসনের শর্ত মোতাবেক বঙ্গবন্ধুকে প্যারেলে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ আজিজ তখন বেগম মুজিবের সঙ্গে ধানমণ্ডির বাড়িতে বৈঠক করে প্যারোলে মুক্তির বিরোধিতা করেন। একপর্যায়ে জনতার চাপে নিঃশর্তে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার।

সত্তরের নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণার সমস্ত কর্মকৌশলও ধানমণ্ডির বাড়িতে বসেই তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

মহিউদ্দিন আহমদ 'প্রতিনায়ক' গ্রন্থে লিখেছেন, '১৯৭১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব তার ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ধানমণ্ডির বাসায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, এম মনসুর আলী ও তাজউদ্দীন আহমদ।

১৯৭১ এর ১ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করলে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ধানমণ্ডির বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. ফারল্যান্ড ও বেসামরিক প্রশাসক রাও ফরমান আলীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।'

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পূর্ব প্রস্তুতিও বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন ধানমণ্ডির বাড়িতে বসেই। ৬ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতা ও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। একইসঙ্গে পরামর্শ করেছেন বেগম মুজিবের সঙ্গেও।

২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ধানমণ্ডির বাড়িতে নিজ হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেও ২৫ মার্চ দিনভর ধানমণ্ডির বাড়িতে বসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতা ও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এদিন রাতে আক্রমণ হতে পারে জেনেও বাড়িতেই অবস্থান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ঘেরাও করে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে বাসিন্দারা না থাকায় বাড়িটি ফাঁকা ছিল। বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা পূর্বেই ঠিক করা ভাড়াবাড়িতে চলে যান। মে মাসে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর সড়কের ২৬ নাম্বার বাড়িতে গৃহবন্দী করে।

গণভবনের বদলে ধানমণ্ডির বাসভবন

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণভবনের বদলে ধানমণ্ডির বাড়িতেই বসবাস করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তবে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের উপুর্যপুরি বুলেটের আঘাতে বাড়িটি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছিল।

পাকিস্তান থেকে লন্ডন হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু প্রথমে ধানমণ্ডি ১৮ নম্বর সড়কের ২৬ নম্বর বাড়িতে উঠেছিলেন। এরপর বাড়ির সংস্কারের কাজে হাত দেন বঙ্গবন্ধু। দেড় মাস সংস্কারের পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের আগস্টে নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই বাড়িতেই ছিলেন বঙ্গবন্ধু।

'মুজিব ভাই' গ্রন্থে সাংবাদিক এ বি এম মুসা লিখেছেন, 'তবে প্রশ্ন হলো কর্মমুখর সারাটি দিনের শেষে ক্লান্ত শেখ মুজিব ভবন দুটির সুরক্ষিত দুর্গে না থেকে কেন অরক্ষিত ৩২ নম্বারের বাড়িতে রাত কাটাতে আসতেন? উত্তর একটি, বেগম মুজিব ৩২ নম্বর বাড়িটির দোতলার পূর্বদিকের কোনের ঘরটি ছেড়ে আসতে রাজি হননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথি হয়ে অথবা রাষ্ট্রপতির পত্নী পরিচয়ে ফার্স্ট লেডি হতে চাননি।'

ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক এই বাড়িতে এসেছিলেন অসংখ্য বিদেশি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে আসা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর প্রমুখ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমণ্ডির এই বাড়িতে একদল ঘাতকের বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্য নিহত হন।

বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তীতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত বাড়িটি সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে সিলগালা ছিল। সে বছরের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেও তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ১৯৮১ সালের জুন মাসে বাড়িটি নিলামে তোলে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন। শেষপর্যন্ত সুদাসলে ১২ হাজার টাকার কিস্তি শোধ করে বাড়ি বুঝে পান শেখ হাসিনা।

তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়ে বলেন, 'ঐতিহাসিক এই ভবনটি জনগণের হবে।' 

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাড়িটি সিলগালা থাকায় পরিত্যক্ত ছিল। পুরো বাড়িতে বুলেটের আঘাত ও রক্তের ছাপ থাকায় কয়েক দফা সংস্কারের পর ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট বাড়িটিকে 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে বাড়িটি দেখভালের জন্য গঠন করা হয় স্বতন্ত্র ট্রাস্ট।

জাদুঘরের তিনতলা ভবনটিতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি, স্মৃতিবিজড়িত ব্যবহার্য সামগ্রী, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত পাঠাগারের দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে সমৃদ্ধ ছিল জাদুঘরের সংগ্রহশালা। ১৯৯৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গত ৩০ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগুন দেওয়া হলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তিন তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু ভবনের সমস্ত ঐতিহাসিক নথিপত্র, সংরক্ষিত ব্যবহার্য সামগ্রী, পাঠাগারের দুর্লভ বই থেকে ঐতিহাসিক এই বাড়ির জানালা দরজাও। অগ্নিসংযোগের আগে ভাঙচুর করা হয় বাড়িটিতে।

Comments