পর্যালোচনা

স্বাধীনতা প্রসঙ্গে অসামান্য এক অন্বেষণ  

পৃথিবীর ইতিহাসে নীরবে ঘটে যায় মর্মন্তুদ এক অধ্যায় দেশভাগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধবিহীন এরকম ঘটনা কল্পনা করা দুরূহ হলেও, বাস্তব হয় তারও অধিক কিছু। বাস্তুচ্যুত হয় লাখ-লাখ মানুষ। কোনো ঘোষণা ছাড়াই, কোনোপ্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ভিটেছাড়া-স্বজনহারা হয়ে পড়ে অগণন হিন্দু ও মুসলমান। যুদ্ধ ছাড়াই দানবীয় এক গণহত্যা দেখেও চুপকরে থাকে সদ্য স্বাধীন দুটি দেশ এমনকি বিশ্ব বিবেকও। ভারত ও পাকিস্তানের তড়িঘড়ি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ‘হঠকারিতা’র শিকার হন বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ড, যা তদানীন্তন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান নামে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সঙ্গে। ‘হঠকারিতা’র কথা বলা হচ্ছে এই কারণে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো যুতসই কারণ নেই। ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিগত ভাবে তো নয়ই, ভৌগলিক ভাবেও নয়। এমনকি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কোনো সংজ্ঞাতেও আজোবধি এরকম কোনো দেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব হয়নি। ফলে, না তত্ত্বী, না ব্যবহারিক কোনভাবেই এরকম রাষ্ট্রের বাস্তবতা কোনোকালেই ছিল না।

পৃথিবীর ইতিহাসে নীরবে ঘটে যায় মর্মন্তুদ এক অধ্যায় দেশভাগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধবিহীন এরকম ঘটনা কল্পনা করা দুরূহ হলেও, বাস্তব হয় তারও অধিক কিছু। বাস্তুচ্যুত হয় লাখ-লাখ মানুষ। কোনো ঘোষণা ছাড়াই, কোনোপ্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ভিটেছাড়া-স্বজনহারা হয়ে পড়ে অগণন হিন্দু ও মুসলমান। যুদ্ধ ছাড়াই দানবীয় এক গণহত্যা দেখেও চুপকরে থাকে সদ্য স্বাধীন দুটি দেশ এমনকি বিশ্ব বিবেকও। ভারত ও পাকিস্তানের তড়িঘড়ি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ 'হঠকারিতা'র শিকার হন বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ড, যা তদানীন্তন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান নামে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সঙ্গে। 'হঠকারিতা'র কথা বলা হচ্ছে এই কারণে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো যুতসই কারণ নেই। ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিগত ভাবে তো নয়ই, ভৌগলিক ভাবেও নয়। এমনকি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কোনো সংজ্ঞাতেও আজোবধি এরকম কোনো দেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব হয়নি। ফলে, না তত্ত্বী, না ব্যবহারিক কোনভাবেই এরকম রাষ্ট্রের বাস্তবতা কোনোকালেই ছিল না।

পাকিস্তান রাষ্ট্র বিভাজিত ছিল পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান নামে দুটি ভূখণ্ডে। মাঝে দূরত্ব ছিল ১২০০ মাইল, আর এর মধ্যে ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন একটা দেশ ভারত। দুই পাকিস্তানের সঙ্গে জল-স্থল-আকাশপথে সরাসরি কোনো যোগাযোগ ছিল না। কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ  বিপরীত ধর্মী। শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে দুটি ভূখণ্ডকে এক দেশের মানচিত্রে সেঁটে দেওয়া হয়। ফলে, আজকের বাংলাদেশ ভূখণ্ড ১৯৪৭ এ স্বাধীনতা পেলেও তা ছিল শুধু কাগজে কলমে। বাস্তবতা ছিল এরকম যে, ব্রিটিশ হটিয়ে পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত হয়। যা বুঝতে বাঙালিদের মোটেই সময়ক্ষেপণ করতে হয়নি। বছরের মধ্যেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার প্রশ্নে তা খোলতাই হয়ে পড়ে। 

পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা হলেও উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করতে সকল প্রকার অসাধুতার আশ্রয় নেয় জিন্নাহ ও তার উত্তরসূরিরা। এই প্রেক্ষাপটেই জন্ম নেয় ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে বাঙালিরা। আর এ আন্দোলনের কেন্দ্রে থেকে আরও অনেকের সঙ্গে নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান ও দল আওয়ামী লীগ। এরপর মুক্তি সংগ্রামের নানা ঘটনা পরম্পরায় একাত্তরে হাজির হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামে বাংলাদেশকে পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে ভারত। ইতিহাস রাঙ্গা সেসব দিন ও সময়ের পূর্বাপর বুঝতে ও জানতে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির বই 'ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান (অজানা তথ্য)'  অবশ্যপাঠ্য এক দলিল। এতে যেমন রয়েছে অজানা অনেক বিষয়, তেমনি রয়েছে লোকমুখে ছড়িয়ে থাকা ও শ্রুত বিষয়ের একটা প্রামাণ্যরূপ।

বইটির ভূমিকায় রয়েছে, 'এই বইটি হবে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। সেই ১৯৬২ সালে যখন স্বাধীনতার ধারণাকে আত্মস্থ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতারা ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলেন, সেই থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত যখন ইতিহাসের চড়াই উতরাই পার হয়ে দেশটি শান্তিময় এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মাঝখানে নিজের অবস্থান গড়ে নিচ্ছে। ... উপমহাদেশের সাম্রাজ্যবাদ-পরবর্তী ইতিহাস থেকে রক্তের দাগ কখনও শুকোয়নি। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের স্বার্থান্বেষী বিরতিহীন শত্রুতা নিশ্চিত করে যে এই রক্ত গঙ্গা বইতেই থাকবে। তাই আমার বইয়ের ভূমিকায় পাকিস্তান ও ভারতের বহুমাত্রিক চমকপ্রদ সম্পর্কের কথা সংক্ষিপ্ত হলেও আসা উচিত। কারণ, এই সম্পর্কের দীর্ঘ ছায়া বাঙলাদেশের জন্ম সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। তাই আমার বাঙলাদেশের গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি না পাকিস্তানের কথা বলি। পাক-ভারত সম্পর্ক দুটি ভিন্ন বিশ্বাসের সংঘাতের উপর প্রতিষ্ঠিত। একদিকে পাকিস্তান যেমন আপন করে নিয়েছে ধর্মীয় অন্ধত্ব, অসহনীয়তা এবং সংঘাত, অন্যদিকে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, বহুজাগতিকতা ও মুক্তচিন্তার সমাজ-ব্যবস্থা।'

উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিতে স্পষ্টত যে আলোচ্য বইয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুমাত্রিক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রামকে বুঝতে হলে বইটির নিবিড়ি পাঠ আবশ্যিক। অনেকগুলো অধ্যায়ে লেখক চুম্বকীয় আকারে ইতিহাসের বাঁক বদলানো সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন অভিজ্ঞতার আলোকে। রাজনীতর জটিল পাঠ ও বিবিধ ঘটনাবলীর মেরুকরণ বুঝতেও বইয়ে উপস্থাপিত লেখকের অবলোকনসমূহ ভীষণভাবে গুরুত্ববহ। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে শুধুমাত্র ১৯৭১ সালের নয় মাসের ঘটনা বলে জিগির করেন। সামরিক যুদ্ধ বলে ৭১ কে দাগিয়ে দিতে কোশেশ করেন না মোটেই। তাদের বিভ্রান্ত বৌদ্ধিক অবস্থানকে প্রকৃত সত্যে আলোকিত করতে এই বই ঐতিহাসিক এক দলিল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। আলোচ্য বইয়ের লেখক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ উপ্ত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। প্রসঙ্গক্রমে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেবা যারা মনে করেন স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্ন উনারা দেখেছিলেন, তাদের জন্যও এই বই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে-এ সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজ ও তথ্য-উপাত্ত হাজির সাপেক্ষে। কেননা, তারা যেটা সীমাবদ্ধ রেখেছিল সীমিত পরিসরের আলোচনা ও কার্যাবলীতে, বঙ্গবন্ধু সেখানে কূটনৈতিক তৎপরতায় শুরু করেছিলেন তারও ঢের আগে।

শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। ছবি: সংগৃহীত

শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি ইতিহাসের নানা ঘটনার সাক্ষী। তিনি ইতিহাস যেমন দেখেছেন, ঠিক সেভাবেই উপস্থাপন করেছেন। কোনো প্রকার রং লাগানোর চেষ্টা করেননি। লেখকের এই সংযম, পরিমিতিবোধ ও নির্মোহতা ঘটনাসমূহকে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কতভাবে আমাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে তার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও বর্ণনায় লেখক সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে প্রতিবেশী দেশটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলকে কীভাবে প্রভাবিত ও উদ্বুদ্ধ করেছে, বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কী ভূমিকা পালন করেছেন তারও বিশ্বস্ত বয়ান রয়েছে আলোচ্য বইয়ে।

শ্রীযুক্ত শশাঙ্কবাবু এই বইয়ে ভারত-পাকিস্তানের ভেতরকার অনেক জটিল ও কূটিল দিক যেমন হাজির করেছেন তেমনি সেই সময়ের ক্রীড়নক চরিত্রগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। পষ্ট করে জানিয়েছেন কার কী ভূমিকা। পাকিস্তান থেকে কীভাবে কোন কূটনীতির জের ও জোরে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেলেন আর কেনইবা তিনি লন্ডন-দিল্লী হয়ে বাংলাদেশে ফিরলেন তার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সবকিছু চমৎকারভাবে হাজির করেছেন। এমনকি দীর্ঘ বিমানযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কী কী কথা হয়েছিল তাও তুলে ধরেছেন। এতে লেখকের বেশকিছু পরামর্শও রয়েছে, সেটা যেমন কখনো কখনো তার ব্যক্তিগত তেমনি অন্যের পরামর্শক্রমেও। তিনি যেহেতু একজন কূটনীতিক, একারণে তার ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তির ঊর্ধ্বে থাকে সবসময়। ফলে, কখন তিনি ব্যক্তি আর কখন তিনি প্রতিনিধি তার ফারাক রাখা দুরূহ। তবে তিনি যা বলেছেন, তার পেছনে অকাট্য যুক্তিও হাজির করেছেন। 

আলোচ্য বই তাই ব্যক্তির বয়ানে ইতিহাসের দলিল। তবে, এ ধরণের বইয়ের যে মানের সম্পাদকীয়তা ও সম্পাদনা প্রয়োজন তার খামতি রয়েছে। এর দায় অবশ্য লেখকের নয়, প্রকাশকের। পাঠকের এই অস্বস্তি থেকে সৃষ্ট বিরাগ অবশ্য লেখকের ওপর গিয়েই পড়ে। যেমন উল্লিখিত হয়েছে, '১৯৭১ সালে, যখন জন্ম নিচ্ছে বাঙলাদেশ। মুক্তি সংগ্রামকে দমন করার লক্ষ্যে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালায় বাঙলাদেশের বুকে। তারা মাত্র নয় মাসের ব্যবধানে সে দেশের প্রায় পনের লক্ষেরও বেশি মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। শত্রুদের ঘাঁটিতে ও ব্যাংকারে প্রায় আড়াইলক্ষ নারী অসহায়ভাবে ধর্ষিত হয়।' কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃতসত্য হল, ত্রিশলক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আর তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে। এসব ত্রুটি যদি সংশোধিত হওয়া জরুরি। কেননা যে বই ইতিহাসের আকর সত্য উপস্থাপন করছে সাগ র সেঁচে, সেই বইয়ে এ ধরণের ত্রুটি ও মুদ্রণপ্রমাদ বিভ্রান্তি যেমন ছড়াবে তেমনি দুর্মুখের হাতে তুলে দেবে অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত কু-তর্কের মুখরোচক ফিরিস্তি ও পরিসংখ্যান।

শশাঙ্ক এস ব্যানার্জীর বই, 'ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান (অজানা তথ্য)' বইটি প্রকাশ করেছে অপরাজিতা সাহিত্য ভবন। বাংলায় ভাষান্তর করেছেন তানভীর চৌধুরী। এধরণের গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশে যাদের আগ্রহ এবং অনুবাদে যিনি নিমগ্ন হয়েছেন, উভয়ে যদি বইটি নির্ভুল করতে আরও বেশি আন্তরিক ও নিবেদিত প্রাণ হতেন তাহলে বইটির সদর্থক অর্থেই নান্দনিক ও সপ্রশংস ধন্যবাদ প্রাপ্তির দাবিদার হয়ে উঠতো।

আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সুলুকসন্ধানী বইটি কেন প্রচারের আড়ালে রয়েছে। এসব নিয়ে কেন তেমন কোন আলোচনা নেই, তা মস্তো বড়ো এক প্রহেলিকা বটে। মুক্তিযুদ্ধ জাতির জন্য সবিশেষ গর্ব ও গৌরবের। জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জন আরও বেশি গৌরবমণ্ডিত ও অর্থবহ হয়ে উঠবে, যখন আমরা এর পূর্বাপর সবিস্তারে ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে সক্ষম হব। একারণে ইতিহাসের সেসব আধার ও আধেয় নিয়ে যেন বেশি বেশি গবেষণা ও অনুসন্ধান হয় তার জন্য সবধরণের পৃষ্ঠপোষণ জরুরি।

Comments