নিজের ঘরেই উপেক্ষিত প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ

ব্রিটিশ ভারতে যে সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন রাতদিন, অবলীলায় বিলিয়ে দিয়েছেন অর্থ, সময় ও শ্রম, প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা। তার প্রতিষ্ঠানগুলো আজ সমাজে আলো ছড়ালেও সেটা পৌঁছায় না স্বয়ং প্রতিষ্ঠাতার মুখে।

ব্রিটিশ ভারতে যে সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন রাতদিন, অবলীলায় বিলিয়ে দিয়েছেন অর্থ, সময় ও শ্রম, প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা। তার প্রতিষ্ঠানগুলো আজ সমাজে আলো ছড়ালেও সেটা পৌঁছায় না স্বয়ং প্রতিষ্ঠাতার মুখে।

চর্চা করা হয় না প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁকে। তার নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজেও রাখা হয়নি তার রচনা সংগ্রহ। বলা যায় নিজের ঘরে নিজেই উপেক্ষিত উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম প্রিন্সিপাল, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক ইব্রাহীম খাঁ।

দীর্ঘকাল ইংরেজদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বের হবার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। কাজ করেছেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে। বিশেষ করে ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধে এসে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণের প্রেরণা সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।

প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ বাঙালি মুসলমান সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন- 'ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়', 'ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়', 'করটিয়া জুনিয়র গার্লস মাদ্রাসা ও ভূঞাপুর কলেজ'। দায়িত্ব পালন করেছেন 'করটিয়া সরকারি সাদ'ত' বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হিসেবে।

১৯৭৮ সালে ইবরাহীম খাঁর মৃত্যুর পর তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে ভূঞাপুর কলেজটি 'ইবরাহীম খাঁ কলেজ' নামকরণ করা হয়। এটি টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অন্তর্গত একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরিতে পুরনো বইগুলো উঁইপোকা খাচ্ছে। অনেক মূল্যবান বই নষ্ট হতে চলছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিজুড়ে ইবরাহীম খাঁর মাত্র ৩টি বই- 'বাবরনামা', 'রূপকথার গল্প' ও 'বাতায়ন' খুঁজে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে তার নামে নেই কোনো কর্নার, তার নামে বের হয় না কোনো বার্ষিক প্রকাশনা। সবশেষ কলেজের যে স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে উইকিপিডিয়ার পুরনো তথ্য ব্যবহার করা হয়। গত ৭০ বছরেও কলেজ থেকে বের হয়নি তাকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো স্মরণগ্রন্থ।

লাইব্রেরিতে পুরনো বইগুলো উঁইপোকা খাচ্ছে। ছবি: ইমরান মাহফুজ

এই প্রসঙ্গে গ্রন্থাগারিক আশরাফুল তরফদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর ৬৫টি বই। এর মধ্যে কিছু বই লাইব্রেরিতে আমরা অনেক যত্ন করে রাখছি। তবে কিছু পুরনো বই নষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা সংগ্রহ করছি প্রয়োজনীয় আরও বই। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ইব্রাহিম খাঁর সবগুলো বই সংগ্রহ করতে পারিনি।'

কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জয়েন করেছি করোনার মধ্যে। সে সময় চাইলে সব কাজ করা যায়নি। প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর সবগুলো রচনা আমরা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। কিছু বই আমরা নিয়েছি বাংলা একাডেমি থেকে। বাকি বইগুলো রাখার বিষয় গ্রন্থাগারিককে বলে রেখেছি।'

এই কলেজের পাশেই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পাঠাগার। সেখানেও নেই ইব্রাহিম খাঁর সবগুলো বই। গ্রন্থাগারিক রিপন তালুকদার জানান, লেখক পরিবার থেকে পাননি বলে, বইগুলো সংগ্রহে রাখা যায়নি।

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পাঠাগার। ছবিঃ স্টার

প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর নাতি ডা. মোসাদ্দেক হাবিব মিন্টু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কলেজে অন্তত এক সেট বই থাকতে পারতো। কেন রাখেনি আমি জানি না। তবে আমার মা সাবেক সংসদ সদস্য বেগম খালেদা হাবিব বইগুলোর বিষয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন। আম্মা মারা যাবার পরে অনেক সংকট তৈরি হয় তার বই প্রচার প্রকাশনা নিয়ে। এখন আমরা নতুন করে ভাবছি তার বইগুলো পাঠকরা যেন পেতে পারে

উল্লেখ্য ইবরাহীম খাঁ ১৮৯৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর থানার শাবাজনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষা, সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, নাটক, ভ্রমণ কাহিনী, রসরচনা, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস ও জীবনচরিত, শিশু সাহিত্য, পাঠ্য বই ও অনুবাদ মিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
High temperature days record in Bangladesh

High Temperature Days: Barring miracle, record of 76yrs breaks today

At least 23 days of this month were heatwave days, which equals the record set in 2019 for the entire year.

14h ago