জন্মদিনে হেলাল হাফিজ

‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি’

হেলাল হাফিজ। ফাইল ফটো- হাসিবুর রেজা কল্লোল

'কথা বলতে পারছি না। গতকাল রাতে এমন হয়েছে মনে হচ্ছে আমি যেন আজই মরেই যাব। প্রেশার কমে গিয়েছিল, কথা বলতে পারছিলাম না বলে কাউকে ডাকতেও পারিনি। এতোটা অস্থির ছিলাম। ৪-৫ ঘণ্টা পর আবার ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছি। এইভাবে প্রায় সারাক্ষণ ক্লান্ত ও অস্থির লাগে।' 

৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে কথা হয় কবি হেলাল হাফিজের সঙ্গে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি আরও বলেন, শরীরে এখন অসুখের শেষ নেই। খেতে পারি না, হাঁটতে পারি না। দীর্ঘদিন গ্লুকোমায় আক্রান্ত। পাশাপাশি কিডনি, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতায় ভুগছি। শারীরিক- মানসিক নানা জটিলতার সঙ্গে নিঃসঙ্গতা তো আছেই। এখন মনে হয়, এই জীবন দীর্ঘ হোক তা আর চাই না। সময়টা যেভাবে এগুচ্ছে মনে হয় মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি।'

মাত্র দুটি কবিতার বই দিয়েই হেলাল হাফিজ জয় করেছেন অজস্র পাঠকের হৃদয়। বলা যায়, 'ভালোলাগা' একাকীত্বকে সঙ্গী করেই কেটে যাচ্ছে তার জীবন। নানাবিধ রোগে ভুগতে থাকা এই কবি এখন অনেকটা শয্যাশায়ী। কয়েকমাস আগে রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছিলেন শাহবাগের একটি হোটেলে। গত কয়েক বছর ধরে এখানেই থাকছেন তিনি।

কবিকে কিছুদিন আগে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন হোটেলে থাকেন? জবাবে বলেছিলেন, 'আমি হোটেল জীবন এনজয় করি। নিঃসঙ্গতা, নির্জনতা আমার ভালো লাগে। একাকীত্বের এই বেদনাকে আমি উপভোগ করি।, তবে এই জীবন আর কেউ গ্রহণ করুক তা চাই না। কারণ ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত নিঃসঙ্গ থাকা যায়, চলা যায় কিন্তু তারপর একজন মানুষের পাশে মানুষ লাগবেই। আমি এখন এসে এটা বুঝতে পেরেছি। এই সময় এসে বুঝেও কোন লাভ নেই।'

এত অল্প লিখেই মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা পেলেন। এটা কীভাবে সম্ভব?

কবি বলেন, 'আমার মতো সৌভাগ্যবান কবি বাংলা সাহিত্যে নেই। এত অল্প লিখে এত ভালোবাসা আর কেউ পায়নি। আমি অনেক সময় অপচয় করেছি। আরামপ্রিয় মানুষ আমি। আলস্যকে সঙ্গী করে একজীবন এইভাবে পার করে দিয়েছি। কেবলমাত্র কবিতার জন্য মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা, প্রাপ্তি আমায় মুগ্ধ করেছে। বাংলা সাহিত্যে আমার মতো দ্বিতীয় কেউ নাই। জন্মদিনে সবার দোয়া চাই।'

বাংলা ভাষার জনপ্রিয় এই কবি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন।  বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার। মায়ের নাম কোকিলা বেগম। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' নামে একটি কবিতা লিখেন। এক কবিতাতেই রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তারপর ১৯৮৬ সালে তার প্রথম সাড়া জাগানো কবিতার বই 'যে জলে আগুন জ্বলে' প্রকাশিত হয়।

সেই বইয়ের ৫৬টি কবিতা দিয়ে কবি বাংলা কবিতার জগতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান হেলাল হাফিজ। ২৫ বছর পর ২০১২ সালে বের হয় কবির 'কবিতা একাত্তর'। এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের নাম হয় 'দ্য টিয়ার্স দ্যাট ব্লেজ'। কবিতা একাত্তরে প্রথম গ্রন্থের ৫৬টি কবিতার সঙ্গে নতুন ১৫টি নতুন কবিতা যুক্ত হয়। এ বছরের গোড়ায় এর সঙ্গে ১৭টি নতুন কবিতা যুক্ত হয়ে বের হয় দ্বিভাষিক বই 'এক জীবনের জন্মজখম'। এর ইংরেজি অনুবাদ অংশের নাম দেয়া হয় 'বার্থ উন্ড অব ওয়ান লাইফ'। কবিতার জন্য ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
 

Comments

The Daily Star  | English

External balance swings to surplus after 3yrs

The country’s balance of payments returned to a surplus in the fiscal year (FY) 2024-25, ending a three-year spell of deficits.

11h ago