শতবর্ষে নূরজাহান মুরশিদের মুর্শিদাবাদের ভিটে মাটি 

নূরজাহানের মতো উদার, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক মুখের সঙ্গে যথার্থ কোন পরিচয় এই বাংলায় গড়ে ওঠেনি। এটাও দেশভাগের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার প্রত্যক্ষ পরিণাম।
‘দারোগা বাড়ি’র অস্তিত্ব আর নেই, অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অট্টালিকার দেওয়ালের কিছু ভগ্নাংশ, ছবি: লেখক

পদ্মাপাড়ের লম্বা একফালি গ্রাম তারানগর। তাকালে নদীর ওপারে ধূ ধূ করছে বাংলাদেশ। চৈত্রের শুখা মরসুমে বিপুলা পদ্মার নীল জলরাশি কৃপণ হয়ে নদীর তলদেশে ঠেকেছে। পদ্মাপাড় ঘেঁষে তারানগরে ঢুকে 'দারোগা বাড়ি'র কথা জিজ্ঞেস করলে যে কেউ দেখিয়ে দিতে পারেন। বাস্তবে 'দারোগা বাড়ি'র অস্তিত্ব আর নেই, অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অট্টালিকার দেওয়ালের কিছু ভগ্নাংশ, পাকা মেঝের চাতাল, কারুকার্যমণ্ডিত থামের টুকরো। সামনেই সান বাঁধানো ঘাটের সুগভীর জলশূন্য একটি প্রাচীন পুকুর।

পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রমাণ করে এককালের প্রাসাদতুল্য দারোগা বাড়িটি ছিল সমগ্র মহল্লার সর্বাপেক্ষা ঐতিহ্যবাহী বেগ পরিবারের। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন 'অল ইন্ডিয়া রেডিও ব্রডকাস্ট এর সঞ্চালক, নারী আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নূরজাহান মুরশিদ। 

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নূরজাহান মুরশিদের মতো অগ্নিকণার পরিচয় এপারে আজ এক আশ্চর্য অন্ধকারে। কাঁটাতারের দুপারে বিচ্ছিন্ন হওয়া পরিবারের সাক্ষ্য ছাড়াও নূরজাহানের স্মৃতিকথায় লালগোলার তারানগরে বেড়ে ওঠার দিনগুলোর কথা পরতে পরতে সাজানো আছে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে জয়লাভ, ভাষার লড়াই, শিক্ষকতা, সামাজিক আন্দোলন, একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জনমত গঠন বহুমুখী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর এক আপোষহীন জীবন তরী প্রবাহিত হয়েছে। পূর্ববঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার জন্য তিনি বাংলাদেশে শ্রদ্ধা ও সম্মানের। 

৪০ দশকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বড় অভিঘাত দেশভাগ এবং তার বহুমুখী প্রভাব দু'পারের মানুষকে এক বিচ্ছিন্ন সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। ফলে নূরজাহানের মতো উদার, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক মুখের সঙ্গে যথার্থ কোন পরিচয় এই বাংলায় গড়ে ওঠেনি। এটাও দেশভাগের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার প্রত্যক্ষ পরিণাম।

১৯২৪ সালের ২২ মে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার তারানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আইয়ুব হোসেন বেগ ছিলেন স্থানীয় লালগোলা থানার পদস্থ পুলিশ অফিসার। তৎকালীন সময়ে এই অঞ্চলে বেগ পরিবারের প্রভাব, যশ-খ্যাতির কথা লোকেমুখে আজও শোনা যায়। নূরজাহানের পিতামহ কাবাতুল্লা বেগ বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক। তাঁর হাজার বিঘা আবাদি জমি থাকলেও তিনি ছিলেন আক্ষরিক অর্থে শিক্ষানুরাগী, প্রগতিশীল ভাবধারার মানুষ।

বাবার কঠোর নির্দেশ ছিল, 'তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আমার মুখ দর্শন করবে'। অক্ষরে অক্ষরে পালন করে কলকাতা থেকে ঘরে ফিরেছিলেন। কিন্তু এমএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে যেদিন মুর্শিদাবাদে ঘরে ফেরার ট্রেন ধরেন, নিয়তির কী খেলা- সেদিনই আকস্মিকভাবে পিতাকে হারান। এমনই ছিল তার জীবনের বিয়োগান্ত মুহূর্ত।

আইয়ুব হোসেন ও তার এক ভাই হিশাম উদ্দিন বেগ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। লেখাপড়া শিখে আইয়ুব হোসেন পুলিশ অফিসার ও হিশাম উদ্দিন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে আরবি- ফারসি ভাষার অধ্যাপকের চাকরি করেন। আইয়ুব হোসেনের আর এক ভাই শামসুদ্দিন বেগ পেশোয়ারে চাকরি করতেন। পেশোয়ার থেকে জনৈকা পার্শিয়ানকে বিবাহ করে ঘরে ফিরলে বেগ পরিবারে সঙ্গে পারসিক সংস্কৃতির এক অপূর্ব সমন্বয় করে উঠেছিল। নূরজাহানের অপর এক চাচা অবিভক্ত দিনাজপুরে শিক্ষকতা করতেন। তৎকালীন সময়ে বেগ পরিবারের মতো উদার মনস্ক, আধুনিক প্রগতিশীল চিন্তা চেতনা মুসলমান সমাজে প্রায় বিরল ঘটনা। 

বাঙালি মুসলিম পরিবারের ধর্মীয় বিধি-নিষেধকে তোয়াক্কা না করে চারুকলা, গান, আবৃতি, নাটকের সৃজনশীল শিল্পকলার প্রতি নূরজাহানের অনুরাগ এসেছিল পৈতৃক সূত্রেই। বাবার কঠোর নির্দেশ ছিল, 'তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আমার মুখ দর্শন করবে'। অক্ষরে অক্ষরে পালন করে কলকাতা থেকে ঘরে ফিরেছিলেন। কিন্তু এমএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে যেদিন মুর্শিদাবাদে ঘরে ফেরার ট্রেন ধরেন, নিয়তির কী খেলা- সেদিনই আকস্মিকভাবে পিতাকে হারান। এমনই ছিল তার জীবনের বিয়োগান্ত মুহূর্ত।

নূরজাহান পরিবারের সর্বোচ্চ সম্মান ও গৌরব অর্জন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে স্নাতকোত্তর করেন। তার বর্ণময় জীবনের গৌরবময় সংগ্রামী যাত্রার সূত্রপাত হয় স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে, যখন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রথম কোনও বাঙালি মুসলমান মেয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে। চল্লিশের দশকের প্রথম থেকে তিনি বামপন্থী আদর্শে অনুরক্ত হন তৎকালীন বিশিষ্ট নেত্রী রেনু চক্রবর্তীর প্রভাবে। রেনু চক্রবর্তীর তাঁকে কমিউনিজমের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছিলেন। 

রেনু চক্রবর্তী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধান রায়ের ভগ্নি। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া উদ্যমী নূরজাহান কলকাতায় বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। কবি সুফিয়া কামাল লিখেছেন, '১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের সময় বর্ধমানে এবং '৪৬ এর 'ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে'র হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর বিপন্ন এবং আহতদের মধ্যে কাজ করেছি। এই সময়ে হাজেরা মাহমুদ, রোকেয়া কবীর, হোসনা রশীদ ও নূরজাহান মুরশিদের সঙ্গে আমার পরিচয় হল।'

অতপর জীবনে একটার পর একটা সিড়ি ভেঙে আলোর পথে পা বাড়িয়েছেন নূরজাহান। দেশভাগের ক্ষত তাকে থামাতে পারেনি। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যশস্বী গবেষক, অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। শিক্ষকতার পাশাপশি রাজনীতি, সামাজিক আন্দোলন, সাংবাদিকতা, সাময়িকপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন নারী সংগঠ তাঁর যাত্রাপথের বর্ণময় সরণি। নিবিড় ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন বহুমূখী কাজের সঙ্গে। তার সৌভাগ্য যে, শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ ছিল প্রগতিশীল। তার উপর উদারমনস্ক দাম্পত্য সঙ্গী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ খান সারোয়ার মুরশিদের নিরন্তর সহযোগিতা ও উৎসাহে পূর্ববঙ্গের সংসদীয় রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। 

খান সারোওয়ার মুর্শিদ ও নূরজাহান মুরশিদ, ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক আইনসভায় সরাসরি নির্বাচিত হওয়া দুজন নারীর একজন ছিলেন নূরজাহান মুরশিদ। একই বছরে তিনি মওলানা হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনেও যুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের তার উল্লেখযোগ্য ও বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় আইন সভার উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাকে নিরুদ্দেশ অবস্থাতেই ১৪ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করে। পরে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতি এর প্রথম সভাপতি ছিলেন। 

১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেন। তার বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবনে কখনও তিনি ভাষাকন্যা, কখনও রাজনৈতিক ময়দানের নেত্রী বা সংসদীয় কক্ষের সচিব ভূমিকার হাল ধরেছেন। আবার পেশাদার নাট্যশিল্পীর মতো ভূমিকায় তাঁর ছিল সহজাত প্রতিভা। শত ব্যস্ততার মাঝেও এক সহনশীল, মমতাময়ী জননীর চারিত্রিক গুণাবলীও তার ছিল অসামান্য। চার সুসন্তানের জননী ছিলেন তিনি ।

দেশভাগ পরবর্তী সময়কালে জীবনের নূন্যতম সাংসারিক দায়-দায়িত্ব বাদে, সবটাই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন নূরজাহান মুরশিদ। পৈতৃক ভিটেতে আসার সুযোগ কমই হয়েছে। বিভাগ পরবর্তীকালে তাঁর পরিবার ও আত্মী়স্বজনদের অনেকেই পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি দিলেও তার পিতা স্বদেশভূমি ছাড়েননি। পিতার সঙ্গে থেকে যান ছোট দুই ভাই জাহিদুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম। সিরাজুল ইসলাম পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ইপিআর বিভাগে চাকরি পেয়ে রাজশাহী চলে যান। ভিটেমাটি পরিবার-পরিজন সবকিছুই একে একে কালের নিয়তিতে বিভাজিত হয়ে গেল।

তারানগরের বাড়ির চৌহদ্দিতে অযত্নে, অবহেলায় পড়ে আছে পিতার কবর। পাশাপাশিই শুয়ে আছেন নূরজাহান মুরশিদের ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম। ভরা প্লাবনে পদ্মার বিধ্বংসী ভাঙন গৃহের দুয়ারে হুমকি দেয়। যেকোনো মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হওয়ার অপেক্ষায়। এভাবেই পরিবারের এককালের বিশাল ভূসম্পত্তি ধীরে ধীরে পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। অশিক্ষা, দারিদ্রতার কষাঘাতে এপারের বেগ পরিবারের উত্তরসূরীরা আজ আর্থিকভাবে দুর্বল। বাপ দাদার কবর , ভিটেমাটির সংরক্ষণ করা তাঁদের কাছে যেন বিলাসিতা। 

জাহিদুল ইসলামের তিন পুত্র- যথা তারিকুল ইসলাম (মৃত), ফারিকুল ইসলাম ও আনারুল ইসলাম। ভালো কোন কর্মসংস্থান নেই, পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে প্রান্তিক জীবন কাটে তাদের। নুরজাহান মুরশিদের পরিবারের সঙ্গে এপারের ভাইপো-ভাইঝিদের পার্থক্যটা সকল অর্থেই যেন আলো-অন্ধকারের মতো। জীবিত অবস্থায় শেষ বার নূরজাহান মুরশিদ কবে লালগোলার ভিটেতে পা রেখেছিলেন তা আর স্মরণে নেই অনেকের। নূরজাহান মুরশিদের নিজের ভাবীজান লুৎফুন্নেসা (জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ) এখনও জীবিত আছেন ,আশিউর্ধ বয়সে স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে। 

নুরজাহান মুরশিদের পরিবারের সঙ্গে এপারের ভাইপো-ভাইঝিদের পার্থক্যটা সকল অর্থেই যেন আলো-অন্ধকারের মতো। ছবিতে নুরজাহান মোর্শেদের চাচাতো ভাই গোলাম মোস্তফা বেগ (সাদা শার্ট) , পাশে ভাতিজা ফারিকুল ইসলাম। চাদর গায়ে নুরজাহান মুরশিদের ভাবি লুৎফুন্নেসা।

ফুফু আম্মাকে এ বাড়িতে কখনো দেখেছেন কিনা ফারিকুল তেমন কিছু স্মরণ করতে না পারলেও নূরজাহানের আপন চাচাতো ভাই ডাক্তার গোলাম মোস্তফা বেগ বলেন, "বুবু (নূরজাহান বেগ) মুক্তিযুদ্ধের সময় দিল্লিতে এসে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সেই সময় কয়েকদিনের জন্য লালগোলায় বেগ পরিবারে উৎসবের ঢল নামে। চাচার সাবেক বাড়িতে বুবু আর দুলা ভাইকে (খান সরওয়ার মুরশিদ ) বর-কনে সাজিয়ে ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। বাড়ির মেয়েরা ঢোল বাজিয় গীত গেয়েছিল। সেদিন আমাদের অপূর্ণ বাসনা তৃপ্ত করেছিলাম আনন্দ আড্ডার মধ্য দিয়ে। আজ আর্থিক অনটনে পড়ে ভাইপোরা সেই স্মৃতিময় বাড়িটি ভেঙে ফেলল! এটা ভাবলেই দুঃখ হয়।"

ব্যক্তিত্বময়ী নূরজাহান বেগ মুরশিদের অনেক আত্মীয় লালগোলা, মানিকচক, জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে আছেন। শামসুদ্দিন বেগ নামে তার নিজের এক চাচা পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করতেন। তিনি খোরাসানের খায়রুন্নেসা নামে একজনকে বিবাহ করেন। শামসুদ্দিন সাহেবের পুত্র হাজিকুল আলম লালগোলা মানিকচক মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। নূরজাহান বেগ মুরশিদের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাঁর চাচাতো ভাই হাজিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। 

ডাক্তার গোলাম মোস্তফা দাবি করেন যে, নূরজাহান মুরশিদের অনেক চিঠিপত্র হাজিকুল সাহেবের কাছে দেখেছেন তিনি। এপারে নূরজাহান বেগ মুরশিদের স্মৃতি বিজড়িত পৈতৃক বাড়িটি ২০০৯-২০১০ সালে ভেঙে ফেলা হয়। ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত (সম্ভবত ১৯৩৩ সাল) পাঁচ'ছটি কামরা বিশিষ্ট বিশ ইঞ্চি দেওয়ালের সুদৃশ্য বাড়িটি 'দারোগা বাড়ি'টি আজ হয়তো হেরিটেজের মর্যাদা পেতে পারতো। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে নূরজাহান বেগ মুরশিদ নিজের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিলম্ব হওয়ায় আর আগায়নি। বর্তমানে আর্থিক অনটনে প্রায় পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ। 

Comments