বিজ্ঞানী থেকে শিল্পপতি: আম্বানিকন্যা ইশার শাশুড়ি স্বাতী

স্বাতী পরিমল। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপের মালিক মুকেশ আম্বানির মেয়ে ইশার স্বামী শিল্পপতি আনন্দ পরিমল। ইশার শাশুড়ি স্বাতী পরিমলের খ্যাতিও নেহাত কম নয়। প্রথম জীবনে বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি। জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন, কাজ করেছেন পোলিও নিয়ে। স্বাতী একজন শিল্পপতিও বটে।

পরিচয় 

প্রখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী ও শিল্পপতি স্বাতী পরিমলের জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৮ মার্চ। জনস্বাস্থ্য ও উদ্ভাবনী কাজে জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি। 

স্বাতী একাধারে পরিমল গ্রুপের ভাইস-চেয়ারপারসন, সমাজসেবী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং লেখক। শুধু তাই নয়, ভারতের ক্ষমতাবান ২৫ নারীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। স্বাতী পরিমল বেশ কিছু বই ও পাবলিক পলিসি পেপার লিখেছেন। পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।

ইশা আম্বানি (বামে) ও স্বাতী পরিমল (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা জীবন

ছোটবেলায় মুম্বাইয়ের ওয়ালসিংহাম হাউস স্কুলে পড়েছেন তিনি। সেখান থেকে পাশ করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিক্যাল ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন স্বাতী। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৯২ সালে। 

কর্মজীবন

পড়াশোনা শেষে স্বাতী জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৭০ এর মাঝামাঝি সময়ে এক সহকর্মীর সঙ্গে গড়ে তোলেন একটি পোলিও সেবা কেন্দ্র। সেখানে হাজার হাজার পোলিও আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করেছেন স্বাতী। পাশাপাশি টিকার প্রচারের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ পরিচালনা করেছিলেন তিনি।

শিল্পপতি 

কাজের মাঝেই পরিমল গ্রুপের চেয়ারম্যান অজয় পরিমলের সঙ্গে ঘর বাঁধেন স্বাতী। সংসার শুরুর প্রথম দিকে নিজের গবেষণা ও জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। পরে অবশ্য স্বামীর ব্যবসায় ধীরে ধীরে যুক্ত হন। অল্পদিনের মধ্যেই শিল্পপতি হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পরিমল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

নতুন জীবনে খুব দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। পরিমল গ্রুপকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তার হাত ধরেই রিয়েল এস্টেট, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে পরিমল গ্রুপের।

অর্জন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবসায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করা হয়। তিনি ভারতের অ্যাপেক্স চেম্বার অব কমার্সের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

হার্ভার্ড বোর্ডের সদস্যপদের মতো সম্মানিত পদ ক্যারিয়ারে অর্জন করেছেন স্বাতী। হয়েছেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল , জনস্বাস্থ্যের ওভারভার এবং ডিনের উপদেষ্টা।

তার পরিমল গ্রুপের পেটেন্ট সেলের অর্ধেকের বেশি বিজ্ঞানী নারী, যারা বিশ্বব্যাপী তাদের কাজের জন্য সমাদৃত। 

তিনি মুম্বাইয়ের গোপীকৃষ্ণ পরিমল মেমোরিয়াল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযান চালু করার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন স্বাতী। 

গত তিন দশক ধরে সাশ্রয়ী এবং বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। গত সপ্তাহে তাকে এক্সপ্রেস অ্যাওয়ার্ডস ফর উইমেন এন্টারপ্রেনারদের (এক্সপ্রেসএডব্লিউই) ২০২৪ এর লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। 

জুরি সদস্য বায়োকনের চেয়ারপারসন কিরণ মজুমদার বলেন, স্বাতী পরিমল দীর্ঘদিন ধরে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে একজন অত্যন্ত শক্তিশালী নারীর কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত। তিনি এমন একসময় গবেষণা ও উদ্ভাবনে সময় বিনিয়োগ করেন, যখন বেশিরভাগ ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলো এ ক্ষেত্র নিয়ে ভাবেনি। তার এই দূরদর্শিতার কারণেই পরিমল গ্রুপ নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা হিসেবে প্রমাণ করেছে।

আরেক জুরি সদস্য জিয়া মোদি বলেন, পরিমল তার ক্যারিয়ার জুড়ে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করে গেছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

1h ago