পাকিস্তানে এক হাসপাতালের ছাদে '৫০০' পচা-গলা মরদেহ

মুলতান নিশতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: হাসপাতালের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
মুলতান নিশতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: হাসপাতালের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

পাকিস্তানের মুলতানে নিশতার হাসপাতালের মর্গের ছাদে শত শত পচা-গলা মরদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

দাবি করা হচ্ছে, সেখানে ২০০ থেকে ৫০০ মরদেহ পাওয়া গেছে।

গতকাল শনিবার পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি কোনো রহস্যময় ঘটনা নয়, বরং মুলতানের হাসপাতালের মেডিকেল নৈতিকতার মানদণ্ড ও মানসম্মত কার্যপ্রণালীবিধি (এসওপি) লঙ্ঘনের ঘটনা।

গণমাধ্যমে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার পর পাঞ্জাব সরকার এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে 'অমানবিক, অনৈতিক ও নীতিমালার লঙ্ঘন' বলে অভিহিত করছেন।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চৌধুরী পারভেজ এলাহী এ ঘটনার জন্য প্রদেশের স্বাস্থ্যসচিবের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছেন।

তিনি জানান, এভাবে হাসপাতালের ছাদে মরদেহ ফেলে রাখা অমানবিক।

নিশতার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

হাসপাতালটির অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মরিয়ম আশরাফ এক ভিডিও বার্তায় ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন, হাসপাতালটিতে কীভাবে অজ্ঞাত ও দাবিহীন মরদেহের ব্যবস্থাপনা করা হয় এবং কীভাবে মরদেহগুলো মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়।

তিনি জানান, হাসপাতালের মর্গে অজ্ঞাত পরিচয় বা দাবিদারহীন মরদেহ সংরক্ষণ করা হয়। মরদেহগুলোতে পচন ধরতে শুরু করলে সেগুলো মর্গের ছাদে প্রচুর বাতাস চলাচল করে, এমন কক্ষে রাখা হয়।

তিনি দাবি করেন, এ ধরনের মরদেহগুলো স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর নীতিমালা মেনে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে ব্যবহার করা হয়।

তিনি একইসঙ্গে তিনি ৫০০ মরদেহ খুঁজে পাওয়ার দাবি অস্বীকার করেন।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক জামান গুজ্জার মুলতানের হাসপাতালটি পরিদর্শনে গেলে এক ব্যক্তি তাকে জানান, মর্গের ছাদে 'লাশ পচে যাচ্ছে'। তিনি এ কথা শুনে মর্গে গেলে সেখানকার কর্মীরা দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে তিনি ছাদে ৪টি মরদেহ দেখতে পান। এ ছাড়া, একটি বন্ধ কক্ষে আরও ২৫টি মরদেহ খুঁজে পান তিনি।

তিনি বলেন, 'মরদেহগুলো শিক্ষার কাজে ব্যবহারের পর সুষ্ঠুভাবে জানাজা শেষে কবর দেওয়া উচিৎ। কিন্তু সেগুলো ছাদে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।'

নিশতার মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ লায়েক হোসেন সিদ্দিকী জানান, মরদেহগুলো কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অ্যানাটমি বিভাগ মরদেহ থেকে হাড় নিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয় এবং এ ধরনের মরদেহগুলোকে বিভিন্ন রাসায়নিকের সাহায্যে সংরক্ষণ করা হয়।

সিদ্দিকী বলেন, 'দক্ষিণ পাঞ্জাবে বন্যার কারণে দাবিদারহীন মরদেহের সংখ্যা বেড়ে থাকতে পারে। হয়তো জায়গার অভাবে এই মরদেহগুলোকে ছাদে রাখা হয়েছে।'

'পুলিশ মৃতদের পরিচয় ও তাদের পরিবার খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানোর পর মরদেহগুলো হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করে', যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, অনেক সময় কেউ মারা যাওয়ার ২-৩ মাস পরেও তাদের আত্মীয়-স্বজন মরদেহ চিহ্নিত করেন।

তিনি আরও বলেন, 'এমনো হয়েছে যে মরদেহ সংরক্ষণের পরেও মৃতের আত্মীয়-স্বজনকে সেটি ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।'

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও দেখে তিনি মন্তব্য করেন, 'এটি হাসপাতালের উদাসীনতা ও এসওপির লঙ্ঘন।'

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu: From student union to shaping Bangladesh’s politics

From Language Movement to anti-Ershad protests, Dhaka University’s student body left a lasting mark on national history

1h ago