গাজীপুরে মার্কেটে আগুন: উদ্ধারের নামে লুটপাটের অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হাজী আব্দুর রহিম পাইকারি কাপড়ের মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া অনেকে উদ্ধারের নামে 'লুটপাট' করেছে।
গাজীপুরে পাইকারি মার্কেটে আগুন
ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্কেটের ২ শতাধিক দোকান ও মালামাল পুড়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হাজী আব্দুর রহিম পাইকারি কাপড়ের মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া অনেকে উদ্ধারের নামে 'লুটপাট' করেছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্কেটের ২ শতাধিক দোকান ও মালামাল পুড়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের।

এর আগে, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজী আব্দুর রহিম পাইকারি কাপড়ের মার্কেট আগুন লাগে। তবে, আগুনে কোনো হতাহতের খবর, ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ ও আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।

পাইকারি মার্কেটের ব্যবসায়ী সাইফুদ্দিন জানান, আগুনের সূত্রপাত হয় রাত সাড়ে ৯টার দিকে মার্কেটের পূর্ব অংশ থেকে। পরে তা মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তার দোকানে ২০ লাখ টাকার শাড়ি ও লুঙ্গি  ছিল। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দোকান থেকে মালপত্র বের করতে পারেননি তিনি।

আরেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রংধনু ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক রমজান আলী জানান, দোকানে থাকা শীতের কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিসসহ কোনো কিছুই বের করতে পারিনি। দোকানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল মজুত করা ছিল। চোখের সামনে লাখ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেল। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।

কান্না কণ্ঠে সাংবাদিকদের কাছে একই বর্ণনা দেন হাজী আব্দুর রহিম পাইকারি কাপড়ের মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, প্রায় দুইশ দোকান ও তিন'শ ভিট ভাড়া নিয়ে এ মার্কেটে ছোট বড় মিলে ৫শ থেকে ৬শ ব্যবসায়ী ব্যবসা পরিচালনা করতো। শীতের বিভিন্ন ধরনের কাপড়সহ শাড়ি, লুঙ্গী, থ্রি-পিস, ওড়না, কম্বলসহ সব দোকানেই মালামালে পরিপূর্ণ ছিল। সারাদিন টুকটাক কাস্টমার থাকলেও সন্ধ্যার পর মার্কেটে প্রচুর ভিড় হয়। রোববার রাত ৯টার কিছু সময় পর হঠাৎ মার্কেটের পূর্ব-দক্ষিণ পাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং আশপাশের দোকান গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

তৈরি পোশাকের দোকান এসটিএল গার্মেন্টসের মালিক মুক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আগুন লাগার পর মালপত্রসহ দোকানে থাকা নগদ টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে এক শ্রেণির মানুষ। দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা কাপড় উদ্ধার করে বাইরে রাখার পর সেখান থেকে লুটপাট হয়েছে।

উদ্ধারের নামে যারা এখানে এসেছিল তাদের অনেকেই এগুলো করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

একই অভিযোগ করেন কাজী গার্মেন্টসের দোকান মালিক জয়নাল কাজী সাংবাদিকদের বলেন, 'সোমবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানে গিয়ে দেখি আমার ক্যাশবাক্সে থাকা নগদ ৩ লাখ টাকা নেই। মালামালও পুড়ে গেছে। এক শ্রেণির মানুষ সুযোগ বুঝে উদ্ধারের নামে দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।'

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, 'আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ও পরে টঙ্গী থেকে আরও ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। রাত ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ৩ ঘণ্টা নির্বাপণের কাজ করা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'মার্কেটের রাস্তা খুব সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।'

Comments