কুনিপাড়া বস্তিতে আগুন

জমানো টাকায় কেনা ৫টি সেলাই মেশিন পুড়ে ছাই রেহেনার

১৪ বছর ধরে কষ্ট করে জমানো টাকা দিয়ে ৫টি সেলাই মেশিন কিনেছিলেন রেহেনা। গতকাল সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ার বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে তার দুই রুমের টিনশেড ঘর, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৫টি সেলাই মেশিন।
কুনিপাড়া
সকাল থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া মালামাল থেকে নিজের সেলাই মেশিনগুলো বের করার চেষ্টা করছেন রেহেনা। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

সকাল থেকে একটি চামচ নিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া মালামাল থেকে নিজের সেলাই মেশিনগুলো বের করার চেষ্টা করছেন রেহেনা বেগম। ৬ ঘণ্টা ধরে একাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চোখের পানি মুছে মুছে খুঁজে যাচ্ছিলেন সেগুলো। 

১৪ বছর ধরে কষ্ট করে জমানো টাকা দিয়ে ৫টি সেলাই মেশিন কিনেছিলেন রেহেনা। গতকাল সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ার বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে তার দুই রুমের টিনশেড ঘর, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৫টি সেলাই মেশিন।

চোখে অশ্রু নিয়ে রেহেনা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার আর কিছুই রইল না। আমার পরিবার চলত এই সেলাই মেশিনগুলো চালিয়ে।' 

সোমবার রাতে রাজধানী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়ায় বস্তিতে আগুন লেগে প্রায় ৫০টি ঘর পুড়ে যায়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট কিংবা গ্যাসলাইন লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।

রেহেনা বেগম বলেন, '১৪ বছর ধরে টাকা জমিয়ে আমি পুরাতন ৫টি সেলাই মেশিন কিনেছিলাম। সর্বশেষ ৩ বছর আগে ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি আধুনিক বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিন কিনি। সংসার চলত এ সেলাই মেশিন দিয়ে।'

কাপড় সেলাই, নতুন কাপড় বিক্রি করেই সংসার চালাতেন তিনি। টিনশেড ঘরের একটি কক্ষে সেলাই মেশিনে কাজ করতেন। আরেকটি কক্ষে স্বামী ও সন্তান নিয়ে থাকতেন। ঘটনার সময় প্রতিবেশীদের চিৎকার শুনে দেখেন আগুন। 

'দেখি ঘরে আগুন লেগে গেছে। কিছুই বের করতে পারিনি। আসবাবপত্র, জামাকাপড়, জমানো টাকা সবই পুড়ে গেছে,' বলেন রেহেনা। 

রেহেনার স্বামী রফিকুল ইসলাম পুরোনো নষ্ট সামগ্রী সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। তাদের এক ছেলে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। আগুনে তার সব বইও পুড়ে গেছে। 

রেহেনা বেগমের মতো একই অবস্থা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাকি পরিবারগুলোর। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা পুড়ে যাওয়া বাসা থেকে নিজেদের মালামাল খুঁজে বের করছেন। তবে কিছুই আর অক্ষত নেই। 

কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলামিন হোসেন। বলেন, 'ঘরে টেলিভিশন, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক পাখা, খাট ও আলমারি ছিল। কোনো কিছুই নিয়ে বের হতে পারিনি। কীভাবে এখন নতুন করে শুরু করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।' 

নির্মাণশ্রমিক দিদার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আট বছর ধরে ঘরে যেসব আসবাব গড়েছিলাম, সবই শেষ হয়ে গেল আগুনে। পরনের কাপড় ছাড়া এখন আর কিছুই নেই।'

আগুন লাগার পর থেকে বস্তির বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সবই বিচ্ছিন্ন বলে জানান তিনি।

কুনিপাড়ার বস্তিটি রোলিং মিল বস্তি নামে পরিচিত। এখানে প্রায় ৫০০টি ঘর আছে। বস্তির বাসিন্দারা সাধারণত পোশাককর্মী, রিকশাচালক, রাজমিস্ত্রিসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। 

Comments