ভোরে একসঙ্গে বেরিয়েছিলেন, ফিরলেন ভাইয়ের নিথর দেহ নিয়ে

নিহত আশফাকুজ্জামান লিংকন। ভোরে ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামানের সঙ্গে একই বাসে রওনা হয়েছিলেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত

খুব ভোরে ২ ভাই খুলনার টুটপাড়ার বাড়ি থেকে একসঙ্গে বের হয়েছিলেন। পথে ছোট ভাই গোপালগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে ট্রেনে করে রাজবাড়ির উদ্দেশে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের ২০৩ নম্বর বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে।

পরে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে ভাইয়ের সর্বশেষ তথ্য জানার চেষ্টা করেন ব্যাংক কর্মকর্তা ইশরাকুজ্জামান। শেষে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে জানানো হয় তার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

এখন বড় ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ইশরাকুজ্জামান।

প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনায় নিহত আশফাকুজ্জামান লিংকন পেশায় ছিলেন একজন ঠিকাদার। ঢাকা ও খুলনায় তার কাজ চলছে। আর ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান রাজবাড়িতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত।

ইশরাক জানান, গত বৃহস্পতিবার রাজবাড়ি থেকে টুটপাড়ার বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। আজ খুব ভোরো ২ ভাই একসঙ্গেই বের হন।

তিনি বলেন, 'বাসে আমার পেছনের আসনে বসেছিল লিংকন। শুরু থেকেই গাড়িটি খুব দ্রুত গতিতে চলছিল। চালককে এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও সে শোনেনি। ভোর ৬টার দিকে গাড়িটি গোপালগঞ্জে পৌঁছায়। সেখান নামার আগে লিংকন বলেছিল, "ভালো থাকিস"। এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ কথা।'

দুপুরে মাদারীপুর থেকে ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন ইশরাক। বলেন, '২ ভাই একসঙ্গে বের হলাম। এখন ভাইয়ের লাশ নিয়ে ফিরছি। বাবা-মাকে কি বলে সান্ত্বনা দেবো জানি না।'

এই ২ সহোদর টুটপাড়া আমতলা মসজিদ এলাকার শাহাজাহান মোল্লার ছেলে। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন লিংকন।

নিহতদের মধ্যে খুলনার ৪ জন

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা প্রশাসন এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত খুলনার ৪ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। লিংকন ছাড়াও এই তালিকায় আছেন সোনাডাঙা এলাকার শেখ আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২), চিত্ত রঞ্জন মণ্ডলের ছে‌লে চিন্ময় প্রসন্ন মণ্ডল ও ডুমু‌রিয়া উপ‌জেলার প‌রিমল সাধুর ছে‌লে মহা‌দেব কুমার সাধু।

দুপুরের দিকে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনা কবলিত বাসে থাকা যাত্রীদের বেশ কয়েক জনের স্বজন উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।

এদের মধ্যে শামস জেবিন নামের একজন ডেইলি স্টারকে জানান, তার এক মামা বাসটিতে ছিলেন।

ইমাদ পরিবহনের খুলনা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, 'দুর্ঘটনাকবলিত বাসের ড্রাইভার মো. জাহিদ বেঁচে আছেন কিনা আমরা এখনো জানি না।'

ফুলতলা কাউন্টার থেকে আজ ভোর ৪টার দিকে ছেড়ে খুলনার রয়েল হোটেল মোড় ও সোনাডাঙা বাস টার্মিনাল হয়ে ৫টার পর ঢাকার দিকে রওনা হয় বাসটি।

সোনাডাঙা বাস কাউন্টারের কাউন্টার ম্যান মো. সবুজ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোনাডাঙা ছেড়ে যাওয়ার সময় বাসটিতে মোট ১৩ জন যাত্রী ছিলেন। আর দুর্ঘটনার সময় বাসে যাত্রী ছিলেন ৪৩ জন। চালক-সহকারীসহ স্টাফ ছিলেন ৪ জন।'

মাদারীপুরের শিবচরে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে যে ১৮ জনের পরিচয় জানা গেছে তাদের মধ্যে ৯ জনই গোপালগঞ্জের।

রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় রেলিং ভেঙে খাদে পড়া ইমাদ পরিবহনের বাসটি খুলনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল।

খুলনা থেকে অল্প কিছু যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা বাসটির অধিকাংশ যাত্রীই গোপালগঞ্জ থেকে উঠেছিলেন বলে জানা গেছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

4h ago