আমগাছে পেঁচিয়ে রাখা বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে ২ শিশুর মৃত্যু

২ সন্তান হারিয়ে হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা মারফত মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

আমগাছের চারপাশে তার পেঁচিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রেখেছিলেন এক ব্যক্তি। আজ বুধবার সেই বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি রাজধানীর ডেমরা বামৈল এলাকার। 

মৃত আরিয়ান মিয়া (৮) ও রায়হান মিয়া (২) ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার বাজিতপুর গ্রামের মারফত মিয়ার ছেলে। ৩ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তারা ছিল ছোট। ডেমরা বামৈল এলাকায় মফিজ মিয়ার বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়ায় থাকেন মারফত। আরিয়ান স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়তো।

দুপুরে ঘটনার পর অচেতন অবস্থায় শিশু দুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

মারফত মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান। স্ত্রী এ্যানি বেগম ছাতা কারখানায় কাজ করেন। সকালে তিনি রিকশা নিয়ে বের হন। এ্যানি বেগম বামৈল ব্যাংক কলোনি সাধুর মাঠ সংলগ্ন ছাতা কারখানায় কাজে যান। আরিয়ান ও রায়হান মায়ের সঙ্গে যায়। এরপর দুপুরে তিনি খবর পান, তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান।

২ সন্তান হারিয়ে দিশেহারা মা এ্যানি বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা আমগাছে বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে রেখেছিল। এটা কোনো মানুষের কাজ।'

'আমার সন্তানদের জীবনের চেয়ে কি আমের দাম বেশি। ওদের বড় করে তুলতে আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমি ওদের ফেরত চাই', আহাজারি করতে করতে বলেন এই মা।

ব্যাংক কলোনি সাধুর মাঠ এলাকার বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি ইয়াসির আরাফাত ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি জানালা দিয়ে দেখতে পান, পাশের বাড়ির আমগাছের নিচে ২ শিশু উপুড় হয়ে পড়ে আছে। সন্দেহ হলে তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন, গাছের নিচে বিদ্যুতের তার পেঁচানো। তখন আশপাশের লোকজনের সহায়তায় শিশু দুটিকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, 'আমগাছের মালিক দিপু। কেউ যেন আম পেড়ে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য তিনি গাছের নিচে চারপাশে বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে রেখেছিলেন। গত বছরও তিনি একই কাজ করেছিলেন। সেই তারে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডেমরা এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত ২ শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তারা মারা যায়। তাদের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।'

ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, আম পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে ২ ভাই। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যায় তারা।'

'আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। ইতোমধ্যে ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত দিপু পলাতক', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

1h ago