‘ওর হাসিমাখা মুখটা এখনো চোখের সামনে ভাসছে’
কয়েকদিন আগে দেড় মাস বয়সী মেয়ে রিপাকে নিয়ে বরিশালের হিজলার শ্বশুরবাড়ি থেকে ঝালকাঠির রাজাপুরে বাবার বাড়ি বেড়াতে যান আইরিন (২০)। বেড়ানো শেষে আজ শনিবার সকালে যখন শ্বশুরবাড়িতে ফিরবেন, তখন তাদের পৌঁছে দিতে সঙ্গে যান আইরিনের ভাই নয়ন (১৮)। কথা ছিল বোন-ভাগনিকে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসবেন নয়ন। কিন্তু তা আর হলো না। ঝালকাঠির বাস দুর্ঘটনায় তারা ৩ জনই প্রাণ হারান।
আজ দুপুরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানান আইরিন ও নয়নের বড় ভাই রুবেল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'আমার ভাই, বোন, ভাগনি— দুর্ঘটনায় ৩ জনেরই প্রাণ কেড়ে নিল।'
'আমার ভাই নয়ন বলেছিল, বোন আর ভাগনিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই ফিরে আসবে। এখন ৩ জনই হাসপাতালে লাশ হয়ে পড়ে আছে। সকালেও ভাগনিকে কত আদর করছি। ওর হাসিমাখা মুখটা এখনো আমার চোখের সামনে ভাসছে।'
মা খাদিজা বেগমকে (৪০) চিকিৎসক দেখাতে ওই বাসেই বরিশাল যাচ্ছিলেন খুশবু আক্তার (১৬)। চিকিৎসক দেখানো শেষে কথা ছিল আজই রাজাপুরের নিজামিয়া গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু, এই দুর্ঘটনায় তারাও প্রাণ হারান।
খাদিজার ছেলে মো. রহমত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মা বলেছিল বরিশালে ডাক্তার দেখিয়েই বাড়িতে ফিরে আসবে। কিন্তু তাদের আর ফেরা হলো না। ভাবতেই পারছি না আমার মা আর বোন আর এ পৃথিবীতে নেই।'
৭ বছর বয়সী ছেলে মাহাদিকে চিকিৎসক দেখাতে বরিশালে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভাণ্ডারিয়ার ওষুধ ব্যবসায়ী তারেক (৩২)। ওই দুর্ঘটনায় মাহাদি প্রাণে বাঁচলেও প্রাণ হারান তারেক।
তারেকের ভাই আব্দুল খালেক হাসপাতাল থেকে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছুদিন আগে মাহাদির হাত ভেঙে যাওয়ার পর ভাই তাকে বরিশালে চিকিৎসা করিয়েছিল। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে দ্বিতীয়বার সে বরিশালে যাচ্ছিল। ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার সময় সে খুবই প্রাণবন্ত ছিল। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।'
আজ সকাল পৌনে ১০টায় ঝালকাঠি সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি পুকুরে পড়ে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন।
নিহতদের মধ্যে ৩ শিশু, ৮ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। আর আহতদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী।
Comments