শিশুটিকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিলেন অটো রিকশাচালক, হাসপাতালে নেন ২ হিজড়া

তাৎক্ষণিকভাবে ৭ মাস বয়সী হোসেনকে তার বাবার হাত থেকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক গজ দূরে ফেলে দেয় অনিক। পরপরই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান।
৭ বছর বয়সী হোসেন এখন সুস্থ আছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির তোড় কিছুটা কমে এলে বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন মিজানুর রহমান (৩২) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২২)। ৭ মাস বয়সী হোসেন তখন বাবার কোলে, মায়ের হাত ধরে হাঁটছিল ৭ বছর বয়সী লিমা।

রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মিজানুর, মুক্তা, লিমা ও অটোরিকশাচালক অনিক।

মিরপুর এলাকার হাজী রোডের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টা ৫৮ মিনিটে তারা হঠাৎ হাঁটুসমান পানিতে রাস্তায় পড়ে যায়। আশেপাশে তখন অনেক লোক ছিল। পড়ে যাওয়ার পরপরই তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান অটো রিকশাচালক অনিক (১৮)। তারা সবাই যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে, সেটি তখনো বুঝতে পারেননি তিনি।

তাৎক্ষণিকভাবে ৭ মাস বয়সী হোসেনকে তার বাবার হাত থেকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক গজ দূরে ফেলে দেয় অনিক। পরপরই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান।

অনিকের চাচাতো ভাই ইকবাল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক মিনিট ধরে ভেসে থাকা শিশুটিকে কেউ স্পর্শ করার সাহস পায়নি। এরপর, শিশুটির মামা আরিফ রাস্তার বিপরীত দিক থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং হোসেনকে পানি থেকে তোলেন।'

হোসেনকে কোলে নিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে নিয়ে আসেন কয়েকজন নারী। সেখানে ছিলেন হিজড়া পার্বতী রায়, বৃষ্টি রায় ও আমিনা খাতুন। তারাই হোসেনকে বাঁচিয়ে তোলেন।

প্রবল বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তা তখনো ডুবে আছে। মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশ যাত্রী, সবাই যানবাহনের খোঁজে। এর মধ্যেই শিশুটিকে তারা প্রথমে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

পার্বতী রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টির সময় আমরা বাসায় ছিলাম। হঠাৎ হট্টগোল শুনতে পেয়ে বের হই। শুনি কয়েকজন মারা গেছে। তখন শিশুটির দিকে চোখ পড়ে। কেউ একজন শিশুটিকে তুলে এনে দিয়ে গেছে।'

শিশুটিকে বাসায় নিয়ে গায়ে তেল মালিশ করেন হিজড়া পার্বতী রায়, বৃষ্টি রায় ও আমিনা খাতুন।

'আমরা তার শরীরে ফোস্কা দেখছি। তাকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার এটা বারবার চিৎকার করে বলছিলাম। কিন্তু তার কোনো আত্মীয় বা পরিচিত কেউ সেখানে ছিল না। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে কে? আমরাই শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম,' পার্বতী বলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শুক্রবার সকালে হোসেনকে তার দাদা-দাদির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহত মিজানুরের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। মিরপুর চিড়িয়াখানার সামনে জুস, ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন তিনি। বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছে একটি বস্তিতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন।

হোসেনের দাদা সানোয়ার শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিজানুর বৃহস্পতিবার সকালে পরিবার নিয়ে লঞ্চে ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় ফেরেন। এরপর ঝিলপাড় বস্তিতে শ্বশুর বাড়িতে যান। রাতে সেখান থেকে নিজের বাসায় ফিরছিলেন তারা।'

তিন জনের মরদেহ দাফনের জন্য ঝালকাঠিতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরের এক পরিবারের চারজন যখন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন, তখন ৭ মাস বয়সী হোসেন তার বাবার কোলে। হাজী রোডে

তাদের মধ্যে অনিক (১৮) নামে একজন অটোরিকশা চালক তারা দুর্ঘটনাবশত সেখানে পড়ে গেছে ভেবে তাদের উদ্ধার করতে আসেন। তবে তিনি জানতেন না যে তারা সবাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago