বেইলি রোডে ভবনের আগুনে ৪৪ জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ২২

আগুনে দগ্ধ ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
ভবন থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

রাজধানীর বেইলি রোডে ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জন মারা গেছেন।

এর মধ্যে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছেন। এছাড়া, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।

এছাড়া আগুনে দগ্ধদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, 'আমি সংবাদ পেয়ে দ্রুত চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত আসতে বললেন। এখানে এসে যা দেখলাম তা ভয়াবহ অবস্থা। বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছে।'

মন্ত্রী আরও বলেন, 'যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাদের বেশিরভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বেঁচে আছে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। বাইরে কেউ আছে কি না, এখনো তথ্য পাওয়া যায় নি।'

তিনি বলেন, 'ঢামেক হাসপাতালে ১৪ জন ও বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৮ জন চিকিৎসাধীন আছে। তাদের অবস্থা গুরুতর।'

'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এক ব্রিফিংয়ে বলেন, 'আগুনের ঘটনায় দগ্ধ একজন রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মারা গেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে যত শিগগির সম্ভব স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের চেষ্টা করব।'

এর আগে, রাত দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ফায়ার সার্ভিস ভবনটি থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। 

ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বলেন, 'আমাদের ১৩টি ইউনিট আগুন নির্বাপণে কাজ করে। আমরা ৩ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। ৪২ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছি এবং জীবিত অবস্থায় ৭৫ জনকে উদ্ধার করেছি।'

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ওই ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে এবং রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং ঘটনাস্থলকে 'ক্রাইম সিন' ঘোষণা দিয়ে ভবনটির সামনে হলুদ ফিতা আটকে দেন। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।

ভবনটিতে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ছাড়াও, স্যামসাংয়ের শোরুম, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, ইলিন, খানাস ও পিৎজা ইন আছে বলে জানা গেছে।

আগুন লাগার পর ছয়তলা ওই ভবনের ভেতর বেশ কয়েকজন আটকা পড়েন বলে ফায়ার সার্ভিস জানায়।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন রাত পৌনে ১টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কর্মীরা ওই ভবন থেকে একের পর এক লোকজনকে উদ্ধার করে আনছেন। সবাই অচেতন অবস্থায় আছে এবং তাদের সংখ্যা ২৫-৩০ জনের এর কম না।'

'সুতরাং, কতজন মারা গেছে তা এখনই বলা সম্ভব না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে সঠিকভাবে বলতে পারবে। আমরা ভবন থেকে কাউকে উদ্ধার করা মাত্র দেরি না করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।'

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আগুনের ঘটনায় আহত মোট ১৯ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়।

তিনি আরও জানান, আহত অন্তত ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহতরা হলেন-শাকিল (২৪), উজ্জল (২৩), জোবায়ের (২১), ওমর ফারুক (৪৩), শাকিল (২২) ও জুয়েল (৩০), সিজান (২২), দীন ইসলাম (৩০), ইকবাল হোসেন (২৪) ও ইমরান (১৩)।

Comments