বেতন নিয়ে মায়ের কাছে ফেরা হলো না সিকিউরিটি গার্ড সাগরের

সাগরের আত্মীয়-স্বজনের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকা। ছবি: স্টার

ঘড়ির কাঁটায় শুক্রবার রাত প্রায় ১০টা। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের ধানুয়াঘাটা পূর্বপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক হাসান আলির বাড়ির সামনে শত শত মানুষ। হঠাৎ একটি লাশবাহী গাড়ি আসতে দেখে কান্নার রোল পড়ে পুরো এলাকায়।

সেই গাড়িতে ছিল হাসান আলীর ছেলে সাগর হোসেনের (২০) মরদেহ। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারানো ৪৬ জনের একজন সে।

স্থানীয়রা জানান, হাসান আলী ও সাবিনা খাতুন দম্পতির তিন সন্তানের (দুই ভাই ও এক বোন) মধ্যে সাগর ছিল সবার বড়। অভাব-অনটনের সংসারে পড়ালেখায় বেশি দূর আগাতে পারেনি সে। এ বছর এইচএসসি পাশ করে সংসারের হাল ধরতে পাড়ি জমায় ঢাকায়।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গারদা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ক্লথিং ব্র্যান্ড ইপিলিয়ন শোরুমে কাজ শুরু করে সাগর। বৃহস্পতিবার রাতে ওই ভবনে কর্মরত অবস্থায় আগুনে আটকা পড়ে অন্যদের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করে সে।

নিহত সাগর হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

সাগরের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা-মা, স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। আত্মীয়-স্বজনের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকা।

সাগরের বাবা হাসান আলী সাংবাদিকদের বলেন, 'কৃষিকাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাতে হয়, ছেলেকে পড়ালেখা করানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অল্পবয়সে কর্মের সন্ধানে তাকে ঢাকায় যেতে বলি।'

'কিন্তু এভাবে তাকে লাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে কখনো ভাবিনি', বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
 
মা সাবিনা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, 'দুদিন আগে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। বেতন তুলে ১০ তারিখে বাড়ি আসবে বলেছিল।'

'বাড়িতে আসার আগেই আমার ছেলেটা পৃথিবী থেকে চলে গেল', বলতে বলতে তিনিও আর সংবরণ করতে পারেননি, হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।

সাগরের চাচা রেজাউল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাগরের মৃত্যুর খবর শোনার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। অসহায় হতদরিদ্র পরিবারটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই।'
 
'সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকার সাহায্য আর কোম্পানির পক্ষ থেকে গাড়ি ভাড়ার ১২ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে সাগরের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে', বলেন তিনি।

রেজাউল জানান, আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে সাগরকে দাফন করা হবে।

উপার্জনক্ষম সন্তান হারিয়ে দিশেহারা দরিদ্র পরিবারটির জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।
 
হাদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাগরের পরিবার খুবই দরিদ্র।'

পরিবারটিকে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Police struggle as key top posts lie vacant

Police are grappling with operational challenges as more than 400 key posts have remained vacant over the past 10 months, impairing the force’s ability to combat crime. 

7h ago