ভবনটি ছিল যেন বিস্ফোরণের অপেক্ষায় থাকা ‘বোমা’

ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে এবং ভবনে আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে। ছবি: স্টার

রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে গ্রিন কোজি কটেজ আগে থেকেই অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে ছিল।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সাত তলা ভবনটির মালিকদের দুটি সতর্কবার্তা দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভবনটিতে কোনো জরুরী বহির্গমন ছিল না, সাতটি রেস্তোরাঁ হওয়ার অনুমতিও ছিল না।

গতকাল শুক্রবার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবন পরিদর্শন শেষে একে 'অবহেলাজনিত ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা' বলে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এই ভবনগুলোর জন্য আটটি সরকারি সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন। প্রতিটি সংস্থার বিরুদ্ধে অবহেলার কারণে হত্যার অভিযোগ আনা উচিত।'

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের এই ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ১৩ জন। সাততলা ওই ভবনের সব কটি তলায়ই রেস্তোরাঁ ছিল। এসব রেস্তোরাঁয় রাখা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ভবনটি একটি ডেভেলপার ফার্ম নির্মাণ করেছিল। এটি ২০১৩ সালে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর নির্ধারিত শর্ত অমান্য করে ওই ভবনটি কমপক্ষে সাতটি রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছিল।

রাজউকের চিফ টাউন প্ল্যানার আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'ভবন মালিকরা ২০১১ সালে আবাসিক-কাম বাণিজ্যিক ভবনের অনুমতি নেন। ভবনটিতে অফিস চালানোর অনুমতি ছিল, রেস্টুরেন্ট নয়।'

বারবার সতর্কতার পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়ারহাউস ইন্সপেকটর অধীর চন্দ্র হাওলাদার ভবনের মালিকদের একজন সরদার মিজানুর রহমানকে চিঠি লিখে আগুনের ঝুঁকির বিবরণ দেন।

সরদার মিজানুর রহমান ভবনটির ষষ্ঠ এবং সপ্তম তলার মালিক এবং ছাঁদে থাকা অ্যামব্রোসিয়া রেস্তোরাঁ ও মিউজিক ক্যাফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এর দুই দিন পর, মিজানুর রহমানকে একটি নোটিশও পাঠান অধীর চন্দ্র। নোটিশে তাকে ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটিতে দুটি খোলা সিঁড়ি এবং যথাযথ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

মিজানুর ফায়ার সার্ভিসকে একটি চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে, তিনি অন্য মালিকদের সাথে কথা বলবেন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নেবেন।

কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। অধীর চন্দ্র হাওলাদার আরেকটি নোটিশ পাঠানোর করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তবে তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটল।

অধীর জানান, চিঠিগুলো মিজানুরকে পাঠানো হয়েছিল কারণ ভবনটিতে তার বড় মালিকানা রয়েছে।

মিজানুরকে পাঠানো প্রথম চিঠিতে ফায়ার অ্যালার্ম, পিলার হাইড্রেন্ট, স্মোক অ্যান্ড হিট ডিটেক্টর, ইমার্জেন্সি লাইট এবং সঠিক ভেন্টিলেশনের অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। অগ্নি দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই শ্বাসরোধে মারা গেছেন বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।

ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আমরা দোতলায় একটি রেস্তোরাঁয় ৩৩টি মরদেহ পেয়েছি। সেখানে কোনো জানালা ছিল না।'

মিজানুরের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, পরিদর্শনকালে দমকলকর্মীরা ১৬টি নির্বাপক যন্ত্র দেখেছেন, কিন্তু জেনারেটর কক্ষে একটিও নির্বাপক যন্ত্র ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফায়ার স্টপারও ছিল না এবং একমাত্র সিঁড়িটি ছিল মাত্র চার ফুট চওড়া।

অধীর বলেন, ভবনটির মালিকদের অগ্নি নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না বা এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস থেকে কোনো অনাপত্তি-সনদও তারা পায়নি।

অগ্নি নিরাপত্তা পরিকল্পনার অর্থ হলো কমপক্ষে ২০ শতাংশ কর্মীর ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রশিক্ষণ থাকা এবং প্রতি বছর দুটি ফায়ার ড্রিল অনুষ্ঠিত হওয়া।

দ্য ডেইলি স্টার এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। ভবনটির ম্যানেজারকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser likely to announce election date within 4-5 days: Mostafa Jamal

He made the remarks after a meeting between Prof Yunus and leaders of 12 political parties at the state guesthouse Jamuna

7m ago